বর্তমান সময়ে আমরা সকলেই প্রায় অনলাইন এর উপর নির্ভরশীল। অনলাইনের অনেক অনেক সুবিধা আমরা ভোগ করে থাকি। এটি যেমন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে তেমনিভাবে এর মাধ্যমে একটি চক্র সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। তেমনই একটি সমস্যা হলো অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব। এর মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারীক জীবন, সামাজিক জীবন অনেক সময় দূর্বিষহ হয়ে পরে। এই আর্টিকেলে আমরা অনলাইন গুজব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব কি
অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব হলো এমন একটি বিষয় যা কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়াই ব্যক্তি বা কোন অঞ্চল বা দেশে ছড়িয়ে পরে। অথবা বলা যেতে পারে মিথ্যা বা বানোয়াট কোন তথ্য নির্দিষ্ট কোন লক্ষে একটি অঞ্চলে বা দেশে ছড়িয়ে দেয়া।
এটি সাধারণত সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই বেশি ছড়ানো হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছুটা সত্যি বাকিটা মিথ্যা বা পুরাটাই মিথ্যা হতে পারে। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পরে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো এটি একটি সমাজের জন্য মারাত্নক পরিণতি ডেকে আনে।
গুজবের প্রকারভেদ ও চিহ্নিতকরণ
অনলাইনে নানা ধরনের গুজবের তথ্য পাওয়া যায়। এগুলি সহজেই লোককে বিভ্রান্ত করতে পারে। এবার আমরা গুজবের প্রকারভেদ গুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
- অতি সংক্ষিপ্ত: এগুলি অসম্পূর্ণ এবং প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন তথ্য দেয়। এগুলি পাঠকদের ভ্রান্তিতে ফেলে।
- আংশিক সত্য: এই গুজবে কিছু সত্য তথ্য থাকলেও, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায় কোন ব্যক্তির সম্পূর্ণ বক্তব্য না দেখিয়ে আংশিক দেখানো হয়। সেখানে দেখা যায় বক্তা যেটা বোঝাতে চেয়েছে সেটা না দিয়ে ভুল তথ্য সবার সাথে শেয়ার করা হয়।
- পরিবর্তিত গুজব: এই গুজবে সত্য তথ্যকে অন্য আকারে দেখায়। এটা পাঠকদের ভুল বোঝায়।
- কৃত্রিমভাবে তৈরি তথ্য: এই গুজব সম্পূর্ণভাবে ভ্রান্তি বা ষড়যন্ত্র সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়।
গুজবের প্রভাব থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সচেতন থাকা প্রয়োজন। এটা আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইনের ভুল তথ্য বা গুজবের বিস্তার
সামাজিক মাধ্যম আমাদের জীবনে একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা আমাদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আমরা বিভিন্নভাবে সোস্যাল মিডিয়ার সুবিধা ভোগ করে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই প্ল্যাটফর্মগুলি থেকেই গুজব এবং ভুল তথ্য বেশি ছড়িয়ে থাকে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম থেকে লোকেরা খুব সহজেই গুজব ছড়াতে পারে।
অনলাইনে ভুল তথ্য রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি
অনলাইন গুজব বা ভুল তথ্য প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পরিবারের ভূমিকা অপরিহার্য। তাদের দায়িত্ব হল প্রজন্ম এবং সদস্যদের ক্ষমতায়ন করে ভুল তথ্য চিহ্নিত করতে এবং প্রতিরোধ করতে শিক্ষা দেওয়া।
অনলাইনে ভুল তথ্য রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি অনলাইনে ভুল তথ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রত্যেকটি শিক্ষা–প্রতিষ্ঠানেরই উচিত অনলাইন গুজব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।
তাছাড়া সরকারিভাবেই ডিজিটাল প্রযুক্তি বইতে অনলাইন গুজব সম্পর্কে একটি অধ্যায় রয়েছে সেখানে খুব সুন্দরভাবে ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই এখানে ক্লাস শিক্ষকের অনেক ভূমিকা রয়েছে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।
অনলাইনে ভুল তথ্য রোধে পরিবারের ভূমিকা
অনলাইনে ভুল তথ্য রোধে পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কোন তথ্যগুলি গুজব হতে পারে, কোনটি সত্য হতে পারে। এই সম্পর্কে পরিবার থেকেই শেখানো উচিত।
প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যরা একযোগে কাজ করলে, তারা অনলাইনে ভুল তথ্য বিস্তার রুখে দিতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলো সক্ষম হবে।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়সমূহ
অনলাইনের ভুল তথ্য থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটি তথ্য দেখার পর আমাদের প্রধান কাজ হলো তথ্য যাচাই করা, এটার উৎস কোথায় সেদিকে খেয়াল করা। এছাড়াও, ভিত্তিহীন এবং অসত্য তথ্য ছড়ানো থেকে নিজেদের এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরণের তথ্য অন্যদেরকেও প্রভাবিত করতে পারে, তাই সচেতনভাবে এগুলোকে প্রচার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব
অনলাইনে ভুল তথ্য থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটি তথ্য আমাদের সামনে এলে আমাদের উচিত এই তথ্যের উৎসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। যদি এর উৎস দেশের কোনো বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম তাহলে আমরা এটা বিশ্বাস করেই নিতে পারি।
কিন্তু উৎস যদি এমন হয় কেউ একজন নিজের সামাজিক মাধ্যম্যের আইডি থেকে শেয়ার করছে। সেটা আবার অন্য একজন শেয়ার করছে। কিন্তু কেউই তথ্যটির সূত্র কোথায় উল্লেখ করেনি, তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি এটা সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। তাই এই ধরনের তথ্য থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো এড়িয়ে চলা
গুজব ছড়ানো প্রতিরোধ করতে হলে, ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব প্রচার না করে, ভুল তথ্য থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা উচিত। এগুলো অন্যদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যে তথ্যটির সঠিক কোন উৎস নাই সেই তথ্য শেয়ার করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে আমাদের ভূমিকা
প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব প্রচার থেকে সমাজকে রক্ষা করতে দায়িত্বশীল নাগরিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সঠিক তথ্য প্রচার করে, অন্যদের সচেতন করা। সেইসাথে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে অবগত থাকে। এভাবেই পারি আমরা আমাদের সমাজ থেকে গুজব প্রতিরোধে অবদান রাখতে। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমরা কিছু কাজ মেনে চলতে পারি যেমন–
· বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা
· অন্যদেরকে গুজব সম্পর্কে সচেতন করা
· অনলাইনে সবাইকে সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে সচেতন করা
দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে, আমাদের এই প্রচেষ্টা দিয়ে আমরা আমাদের সমাজ বা দেশ থেকে এই ধরনের অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব দূর করতে পারি।
পরিশেষে
অনলাইনে ভুল তথ্য প্রতিরোধ এবং গুজব থেকে সুরক্ষা পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। বিশেষ করে এমন সময়ে আমাদের সামনে ঘটনা ঘটে যখন এতকিছু বিচার বিশ্লেষণ করার মানসিকতা থাকেনা।
যেমন একটা উদাহরণ দেই। ধরুন দেশে রাজনৈতিক ভাবে হরতাল বা অবরোধের মত আন্দোলন চলছে। এমন সময় কেউ একজন বললো অমুক জায়গায় অনেক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছে। মানুষও মারা গেছে।
আপনি অনেকটা মন খারাপ করে সোস্যাল মিডিয়ায় ঢুকলেন। ঢুকেই দেখলেন কেউ একজন একটা ভিডিও শেয়ার করছে যেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টা আপনাকে অনেক কষ্ট দিলো। আপনিও শেয়ার করলেন ভিডিওটা।
কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো আপনি যে ভিডিওটা দেখছেন এবং শেয়ার করছেন, ভিডিওটা মোটেও আজকের না। এটা অনেক আগের একটা ভিডিও যেটা কেউ একজন আজকের বলে ঘটনা বলে গুজব রটাচ্ছে। আপনিও এটার উৎস না খুজে শেয়ার করে দিয়েছেন।
এই সমস্যাগুলো আমাদের সমাজকে প্রভাবিত করে এবং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব প্রচার থেকে নিজেদের বিরত রাখা। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।