অপারেটিং সিস্টেম কি? অপারেটিং সিস্টেম এর প্রকারভেদ

বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেটের মত সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি অপারেটিং সিস্টেমের উপর নির্ভর করে। ব্রেইন যেমন আমাদের সকল কাজকর্ম, চলাফেরা নিয়ন্ত্রন করে ডিভাইসগুলির ক্ষেত্রে অপারেটিং সিস্টেমও একই কাজ করে থাকে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি অপারেটিং সিস্টেম কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত আইডিয়া পাবেন।

 

অপারেটিং সিস্টেম কি

সাধারণত অপারেটিং সিস্টেম হলো ব্যবহারকারী এবং হার্ডওয়্যারের মধ্যে সম্পর্ক তৈরিকারী একটি সফ্টওয়্যার। এইযে আমরা কম্পিউটার ওপেন হবার পর কম্পিউটারকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকি, অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমেই কম্পিউটার সে সকল নির্দেশনা পালন করে। যেমন কম্পিউটার ওপেন হওয়ার পর আমরা কোনো ব্রাউজার ওপেন করি এটি কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যেই ওপেন হয়। 

 

মূলত একটি অপারেটিং সিস্টেম হলো একটি সফ্টওয়্যার যা ফাইল ম্যানেজমেন্ট, মেমরি ম্যানেজমেন্ট, প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইসের সকল প্রকার কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। অর্থাৎ এটি কম্পিউটারের সকল রিসোর্স ম্যানেজ করে থাকে। 

 

অপারেটিং সিস্টেম হলো একটি কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সফ্টওয়্যার। অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া পুরো ডিভাইসই অচল হয়ে পরে।

 

 

অপারেটিং সিস্টেম কেন ব্যবহার করা হয়

এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে অপারেটিং সিস্টেম কি। এবার চলুন দেখে নেই কেন আমরা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করি।

  1. সহজে ব্যবহারযোগ্য: অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান সুবিধা হলো এর মাধ্যমে আমরা কম্পিউটার বা বিভিন্ন ডিভাইস সহজেই ব্যবহার করতে পারি। আমরা কম্পিউটারকে সহজেই কোনো কাজের জন্য নির্দেশনা দিতে পারি। 

  2. ইউজার ফ্রেন্ডলি : অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহার আরো ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়েছে। উইন্ডোজের মত অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা মাউস দিয়ে ক্লিক করেই সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারি

  3. রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট: অপারেটিং সিস্টেম সকল রিসোর্স সুষ্ঠভাবে ম্যানেজমেন্ট করে থাকে। এতে করে একটি ডিভাইস সুন্দরভাবে তার কাজ করতে পারে।

  4. কন্ট্রোল এবং মনিটরিং অপারেটিং সিস্টেম ডিভাইসের যাবতীয় কার্যক্রম কন্ট্রোল এবং মনিটরিং করে থাকে। যেমন কোন রিসোর্স ব্যবহার হচ্ছে, রিসোর্স এর জন্য রিকুয়েষ্ট অনুমোদন দেওয়া সহ নানা ধরনের কাজ করে থাকে।

 

অপারেটিং সিস্টেমের আর্কিটেকচার

অপারেটিং সিস্টেম কি এ সম্পর্কে বোঝার জন্য নিচে অপারেটিং সিস্টেমের ছবি দেওয়া হলো:

অপারেটিং সিস্টেমের আর্কিটেকচার


অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ কি

অপারেটিং সিস্টেম মূলত ব্যবহারকারীকে অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে সাহায্য করে থাকে। এবার আমরা জানার চেষ্টা করবো অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ কি তাহলে অপারেটিং সিস্টেম কি এই সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে।

মেমরি ম্যানেজমেন্ট

অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের মেইন মেমরি ম্যানেজ করে থাকে। এটি বিভিন্ন কাজের জন্য মেমরি লোকেট এবং ডিলোকেট করে থাকে। অপারেটিং সিস্টেম এটি নিশ্চিত করে যে একটি কাজ অন্য একটি কাজের সাথে না মিশে আলাদাভাবে কাজ সম্পাদন করবে।

 

প্রসেস ম্যানেজমেন্ট এবং সিডিউলিং

প্রসেস ম্যানেজমেন্ট এবং সিডিউলিং হলো অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের কোন কাজ কখন প্রসেস হবে বা কতটুকু সময় পর প্রসেস হবে সেগুলি ম্যানেজ করে। এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার প্রসেসরের কার্যক্ষমতা এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। 

 

ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট

অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমেই আমরা ইনপুট আউটপুট ডিভাইস সংযোগ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এটি বিভিন্ন সময় ডিভাইসগুলিকে প্রয়োজন অনুসারে লোকেট বা ডিলোকেট করে এবং পুরো সিস্টেমের উপর নজর রাখে।

 

ফাইল ম্যানেজমেন্ট

অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের যাবতীয় ফাইল ম্যানেজ করে থাকে যেমন, ফাইল তৈরি করা, ডিলেট করা, ট্রান্সফার করা সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের যাবতীয় ফাইলের নিরপত্তা বজায় রাখে।

 

স্টোরেজ ম্যানেজমেন্ট

অপারেটিং সিস্টেমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো স্টোরেজ ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ কোন ডাটা কোথায় রয়েছে ডাটার অখন্ডতা রক্ষা করা, ডাটার ডিরেক্টরি সংরক্ষণ করা এবং পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা।

 

সিকিউরিটি

আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমগুলি ফায়ারওয়্যালের মাধ্যমে অননুমোদিত অ্যাক্সেসগুলিকে বন্ধ করে দিয়ে কম্পিউটারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন কিছু সফ্টওয়্যার ইন্সলেশন করার সময় আমাদের অপারেটিং সিস্টেমের ফায়ারওয়্যাল বন্ধ করে রাখতে হয়। কেননা সিস্টেম সেটিকে ঝুকি ভেবে ব্লক করে দেয়। 

 

পারফরম্যান্স নিয়ন্ত্রণ

অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের সকল কার্যক্রম যেমন মেমরি, রিসোর্স ব্যবহার এবং বিভিন্ন ধরনের ক্রটিগুলোর ট্রাক রাখে। এগুলো পরবর্তীতে কম্পিউটারের আরো পারফরম্যান্স বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

 

ইরর সনাক্তকরণ

অপারেটিং সিস্টেম সার্বক্ষণিক কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের ইরর বা থ্রেট পরীক্ষা করে থাকে। এতে করে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করে এবং ব্যবহারকারীদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সতর্ক করে।

 

সফ্টওয়্যারের সাথে ব্যবহারকারীদের সম্পর্ক স্থাপন

অপারেটিং সিস্টেমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সফ্টওয়্যারের সাথে ব্যবহারকারীদের সম্পর্ক স্থাপন করে দেওয়া। এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের স্মুথ কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করে। 

 

অপারেটিং সিস্টেম এর প্রকারভেদ

একটি অপারেটিং সিস্টেম ডিভাইসের প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপি অসংখ্য অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে, যা বিশ্বের মানুষের চাহিদা পূরণ করে আসছে।

 

জেনারেল অপারেটিং সিস্টেম

ল্যাপটপ এবং ডেক্সটপ কম্পিউটারে জেনারেল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি আসলে কম্পিউটারের সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। কিছু সাধারণ ডেক্সটপ অপারেটিং সিস্টেমের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:

 

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম হলো মাইক্রোসফটের একটি ফ্ল্যাগশিপ অপারেটিং সিস্টেম। এটি বাসায় বা ব্যাবসায়িক কাজের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড মানের অপারেটিং সিস্টেম। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম GUI (গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস) ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম তৈরি হয় পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন ভার্সন আসে। 

উইন্ডোজ ৯৫ অনেকটা ইউজার ফ্রেন্ডলি ছিলো এবং এটি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলছিলো। পরবর্তীতে উইন্ডোজ এক্সপি, উইন্ডোজ ৭ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ ১১ অনেকটা জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে।

 

ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম

ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম হলো অ্যাপলের একটি অপারেটিং সিস্টেম। ম্যাক এ অনেক নান্দনিক এবং সহজ ইন্টারফেস রয়েছে। ম্যাক অনেক অ্যাডভান্স প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। সিকিউরিটির দিক দিয়ে ম্যাক সর্বদাই সেরা।

 

ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম

ইউনিক্স একটি মাল্টি ইউজার অপারেটিং সিস্টেম, যার অনেক ফ্লেক্সিবিলিটি রয়েছে। এটি মূলত ১৯৭০ সালের দিকে তৈরি হয়, এবং এটি সি প্রোগ্রামিং দ্বারা তৈরি করা হয়।

 

লিন্যাক্স অপারেটিং সিস্টেম

মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম মূলত মোবাইল এবং ট্যাবের চাহিদা মিটানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম মূলত কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় কম রিসোর্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

 

মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে মূলত দক্ষ কর্মক্ষমতা, ব্যবহারকারীর রেসপনসিভনেস এবং মিডিয়া স্ট্রিমিং বিষয়গুলোর উপরে জোর দেওয়া হয়ে থাকে। মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ হলো অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস।

 


এমবেডেড অপারেটিং সিস্টেম

বিশ্বের সমস্ত কম্পিউটারই কিন্তু সাধারণ কাজের জন্য তৈরি হয়না। কিছু কম্পিউটারের বিশেষ কিছু কার্যক্রম রয়েছে। যেমন অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএম বা এয়ারপ্লেন সিস্টেম ইত্যাদি। অর্থাৎ বলা যায় এটি বড় ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এমবেডেড অপারেটিং সিস্টেমের একটি উদাহরণ হলো এমবেডেড লিন্যাক্স।

 

নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম

একটি নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম হলো আরেকটি বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজ ১০, এবং উইন্ডোজ সার্ভার ২০১৯ অপারেটিং সিস্টেমগুলি সাধারণত ব্যাপক নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা অন্তভুক্ত করে। এই অপারেটিং সিস্টেম সাধারণত নেটওয়ার্ক রিসোর্স নিয়ে কাজ করে থাকে।

 

টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম

টাইম শেয়ারিং হলো এমন এক ধরনের অপারেটিং সিস্টেম যার মাধ্যমে একটি কম্পিউটারের রিসোর্স অনেক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

 

রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম

এই অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে রিয়েল টাইমে কোন ইভেন্ট থেকে ডাটা বা রেসপন্স পাওয়া যায়। যেসব প্রযুক্তিতে রিয়েল টাইম রেসপন্স এর প্রয়োজন হয় সেখানেই মূলত রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। যেমন ইমবেডেড সিস্টেম, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কন্ট্রোল সিস্টেম বা রোবোটিক্স।

 

মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম

একটি একক কম্পিউটারে একাধিক সিপিইউ এর কর্মক্ষমতা বাড়াতে মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি কম্পিউটারে একাধিক সিপিইউ থাকার ফলে কোন কাজকে ভাগ করে আরও দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা যায়।

 

সিঙ্গেল ইউজার অপারেটিং সিস্টেম

এই অপারেটিং সিস্টেম একজন ব্যবহারকারীকে এককভাবে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যেমন ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, অ্যাপলের ম্যাক ইত্যাদি।

 

মাল্টি ইউজার অপারেটিং সিস্টেম

যখন একাধিক ব্যবহারকারী একটি ডিভাইস ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে মাল্টি ইউজার অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে একটি কম্পিউটার একাধিক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারবে। যেমন লিনাক্স, ইউনিক্স।

 

পরিশেষে

আশা করি উপরের আর্টিকেল থেকে অপারেটিং সিস্টেম কি এই সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছেন। যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

Leave a Comment