ইনপুট ডিভাইস কাকে বলে? ১০টি ইনপুট ডিভাইসের নাম ও কাজ

বর্তমান সময়ে কম্পিউটার দেখেননি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা। খেয়াল করলে দেখা যায় বিশেষ করে ডেস্কটপের ক্ষেত্রে অনেক গুলো ছোট বড় ডিভাইস থাকে। এর কোনটির নাম ইনপুট ডিভাইস আবার কোনটির নাম আউটপুট ডিভাইস। আজকের আর্টিকেলে আমরা ইনপুট ডিভাইস কাকে বলে এই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

ইনপুট ডিভাইস কাকে বলে

ইনপুট ডিভাইস হলো এমন এক ধরনের হার্ডওয়্যার ডিভাইস যার মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেমে ডাটা ইনপুট এবং নির্দেশনা পাঠানো যায়। সহজ ভাষায়, যে ডিভাইসগুলি ব্যবহার করে কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া হয় তাকেই ইনপুট ডিভাইস বলে। 

এসব ইনপুট ডিভাইসগুলি কম্পিউটারের সাথে বাইরের মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরির ইন্টারফেস হিসেবে কাজ করে।

ইনপুট ডিভাইস এর কাজ কি

ইনপুট ডিভাইসের প্রধান কাজ হলো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ইনফরমেশন বা নির্দেশনা সংগ্রহ করে সেটিকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করা এবং সেটি কম্পিউটারে প্রসেস করার জন্য পাঠানো। এটি মূলত ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। 

আশা করি ইনপুট ডিভাইস কাকে বলে এ সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা পেয়েছেন। এখন আমরা ইনপুট ডিভাইসের কাজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। 

নিচে ইনপুট ডিভাইসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তুলে ধরা হলো:

তথ্য সংগ্রহ: ইনপুট ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবহারকারী বিভিন্ন ধরনের তথ্য বা ডেটা কম্পিউটারে প্রবেশ করাতে পারেন। যেমন, কী-বোর্ড দিয়ে লেখা প্রবেশ করানো বা মাউস দিয়ে নেভিগেশন করা।

কমান্ড পাঠানো: কম্পিউটারকে বিভিন্ন কাজ করানোর জন্য কমান্ড দিতে হয়। মাউস ক্লিক, কী-বোর্ড শটকাট ইত্যাদি মাধ্যমে নির্দেশনা পাঠানো যায়।

ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রস্তুত করা: ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে পাঠানো তথ্য সরাসরি প্রসেস করা যায় না। এগুলোকে কম্পিউটারের উপযোগী ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তরিত করা হয়।

 

ইন্টারফেস সুবিধা প্রদান: ইনপুট ডিভাইস ব্যবহারকারীকে কম্পিউটার সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার উভয়ের সাথেই ইন্টারঅ্যাকশন করতে পারে।

১০টি ইনপুট ডিভাইস এর নাম

ইনপুট ডিভাইসের অনেক ধরন রয়েছে, এবং প্রতিটি ডিভাইস আলাদা আলাদা কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে কয়েকটি সাধারণ ইনপুট ডিভাইসের ধরন দেওয়া হলো:

1. কী-বোর্ড (Keyboard)

কিবোর্ড ইনপুট ডিভাইস

এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং মৌলিক ইনপুট ডিভাইস। যার কী প্রেস করে কম্পিউটার ডিভাইসে ডাটা প্রবেশ করানো হয়। এতে অক্ষর, সংখ্যা এবং বিভিন্ন ফাংশনের বিভিন্ন কী সেট রয়েছে। ওয়্যারলেস কি-বোর্ডও বর্তমানে পাওয়া যায়। 

 

বিভিন্ন ধরনের কি-বোর্ড রয়েছে যেমন Qwerty keyboard, Azerty keyboard, এবং Dvorak keyboard ইত্যাদি। কী-বোর্ড ভেদে এর কী গুলোও কমবেশি হয় যেমন কোনটাতে 84 কী বা 101/102 কী আবার কোনগুলোতে 108 টি কী সহ কী-বোর্ড পাওয়া যায়।

2. মাউস (Mouse)

মাউস ইনপুট ডিভাইস

মাউস হলো একটি জনপ্রিয় ইনপুট ডিভাইস যা ব্যবহারকারীকে কম্পিউটারের গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের (GUI) সাথে কাজ করতে সহায়তা করে। এটি ব্যবহারকারীর হাতের নড়াচড়াকে কার্সরের গতিতে রূপান্তর করে, ফলে স্ক্রিনে বিভিন্ন আইকন, মেনু, এবং প্রোগ্রাম নির্বাচন করা যায়। 

সাধারণত মাউসের দুটি প্রধান বোতাম এবং একটি স্ক্রল হুইল থাকে, যা ক্লিক, ডাবল ক্লিক এবং স্ক্রল করার কাজ করে।

মাউসের মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজেই ফাইল ওপেন, মেনু নির্বাচন, ড্র্যাগ-ড্রপ ইত্যাদি কাজ করতে পারে। এছাড়া গ্রাফিক্স ডিজাইন ও গেমিংয়ের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে অনেক মাউস তারহীন (wireless) প্রযুক্তিতে চলে, যা ব্যবহারকারীর জন্য আরও সুবিধাজনক।

3. স্ক্যানার ইনপুট ডিভাইস

স্ক্যানার ইনপুট ডিভাইস

স্ক্যানার হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যা প্রিন্টেড ডকুমেন্ট, ছবি, বা অন্যান্য হার্ড কপি উপাদানকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করে কম্পিউটারে ইনপুট করে। স্ক্যানারের মাধ্যমে কাগজে থাকা তথ্য বা ছবি কম্পিউটারে পাঠিয়ে সেগুলো সংরক্ষণ করা, এডিট করা বা শেয়ার করা যায়। 

সাধারণত স্ক্যানার ইমেজকে পিক্সেলে রূপান্তরিত করে, যা কম্পিউটারে সহজে প্রসেস করা যায়।

 

স্ক্যানারের মূল কাজ হলো হার্ড কপিকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করা। এটি ব্যবহার করে কাগজের ছবি বা লেখাকে স্ক্যান করে JPEG, PNG বা PDF ফরম্যাটে সংরক্ষণ করা হয়। স্ক্যানার সাধারণত অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সংরক্ষণ ও শেয়ার করার কাজে ব্যবহার হয়। বিভিন্ন ধরনের স্ক্যানার রয়েছে, যেমন ফ্ল্যাটবেড স্ক্যানার, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ইত্যাদি।

4. মাইক্রোফোন ইনপুট ডিভাইস

মাইক্রোফন ইনপুট ডিভাইস

মাইক্রোফোন হলো এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যা শব্দ তরঙ্গকে ইলেকট্রনিক সিগনালে রূপান্তর করে এবং তা কম্পিউটারে ইনপুট করে। এটি সাধারণত ভয়েস রেকর্ডিং, অডিও চ্যাট, ভিডিও কনফারেন্সিং, এবং বিভিন্ন অডিও-ভিত্তিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। 

এছাড়া গেমিং, পডকাস্টিং, এবং ভিডিও নির্মাণের ক্ষেত্রেও মাইক্রোফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

5. ওয়েবক্যাম ইনপুট ডিভাইস

ওয়েবক্যাম ইনপুট ডিভাইস

ওয়েবক্যাম হলো এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যা ছবি বা ভিডিও ক্যাপচার করে এবং তা কম্পিউটারে প্রেরণ করে। এটি সাধারণত ভিডিও কল, লাইভ স্ট্রিমিং, এবং ভিডিও কনফারেন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা রিয়েল-টাইম ভিডিও চ্যাট করতে পারেন, যা অনলাইন ক্লাস, ভার্চুয়াল মিটিং, বা সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। ওয়েবক্যাম কম্পিউটারে বিল্ট-ইন থাকতে পারে অথবা আলাদা ডিভাইস হিসেবে সংযুক্ত করা যায়।

 

উচ্চমানের ওয়েবক্যামগুলি ভিডিও রেজুলেশন এবং ফ্রেম রেট উন্নত করে, ফলে ভিডিও চিত্র স্পষ্ট এবং মসৃণ হয়।

6. জয়স্টিক ইনপুট ডিভাইস

জয়স্টিক ইনপুট ডিভাইস

জয়স্টিক হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যা মূলত ভিডিও গেম খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি হাতল-যুক্ত ডিভাইস, যা বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং অ্যাকশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। 

কম্পিউটার বা গেম কনসোলে জয়স্টিকের মাধ্যমে বিভিন্ন গেমের চরিত্র বা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি সাধারণত ফ্লাইট সিমুলেটর এবং গেমিংয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, যেখানে সুনির্দিষ্ট এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

 

এটি বিভিন্ন দিক নির্দেশনা (যেমন: সামনে, পেছনে, ডানে, বামে) এবং বিভিন্ন বোতামের মাধ্যমে অ্যাকশন সম্পাদন করতে সক্ষম। 

7. টাচস্ক্রিন ইনপুট ডিভাইস

টাচ স্ক্রিন ইনপুট ডিভাইস

টাচস্ক্রিন হলো এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যা স্ক্রিন স্পর্শের মাধ্যমে কমান্ড গ্রহণ করে। এটি ব্যবহারকারী স্ক্রিনে সরাসরি আঙুল বা স্টাইলাস দিয়ে নির্দেশনা প্রদান করতে পারে, যার ফলে কোনো কী-বোর্ড বা মাউসের প্রয়োজন হয় না। 

 

টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি বর্তমানে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

8. গ্রাফিক্স ট্যাবলেট

গ্রাফিক্স ট্যাবলেট ইনপুট ডিভাইস

গ্রাফিক্স ট্যাবলেট হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যার মাধ্যমে আঁকাআঁকি, ডিজাইন এবং ইলাস্ট্রেশন করা যায়। এটি সাধারণত একটি সমতল প্যাড এবং একটি স্টাইলাস (ডিজিটাল পেন) নিয়ে গঠিত। 

 

ব্যবহারকারীরা স্টাইলাস দিয়ে ট্যাবলেটের ওপর আঁকা বা লেখার কাজ করতে পারেন, যা সরাসরি কম্পিউটারের স্ক্রিনে প্রতিফলিত হয়। ডিজাইনার, আর্টিস্ট, এবং ইলাস্ট্রেটরদের জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ডিভাইস।

9. বায়োমেট্রিক স্ক্যানার

বায়োমেট্রিক ইনপুট ডিভাইস

বায়োমেট্রিক স্ক্যানার হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যা ব্যক্তির শারীরিক বৈশিষ্ট্য, যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট, আইরিস, মুখমণ্ডল, বা কণ্ঠস্বর শনাক্ত করে তথ্য সংগ্রহ করে। 

এটি ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাই করতে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমরা মোবাইল ফোনের সিম ক্রয় করতে গেলে দেখি যে একটা মেশিনের মাধ্যমে আমাদের ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট নিচ্ছে। এই মেশিনটার নামই প্রকৃতপক্ষে বায়োমেট্রিক স্ক্যানার। 

 

এছাড়াও বায়োমেট্রিক স্ক্যানার বর্তমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ব্যাংকিং, এবং ব্যক্তিগত ডিভাইসের নিরাপত্তার জন্য বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।

10. গেম কন্ট্রোলার ইনপুট ডিভাইস

গেম কন্ট্রোলার ইনপুট ডিভাইস

গেম কন্ট্রোলার হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যা ভিডিও গেম খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন বোতাম, জয়স্টিক, এবং ট্রিগার নিয়ে গঠিত, যা ব্যবহারকারীকে গেমের মধ্যে চরিত্র বা অ্যাকশন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। 

 

এটি ব্যবহারকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত রেসপন্স করতে সক্ষম, যা গেম খেলার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে। গেম কন্ট্রোলারের মূল কাজ হলো গেমের বিভিন্ন কার্যকলাপ, যেমন চলাফেরা, গুলি করা, বা গেমের মধ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কমান্ড ইনপুট করা। 

পরিশেষে

ইনপুট ডিভাইস হলো কম্পিউটার সিস্টেমের এমন হার্ডওয়্যার উপাদান যা ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং কম্পিউটারে পাঠায়।ইনপুট ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার কম্পিউটার সিস্টেমের কার্যকারিতা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে। এটি কম্পিউটারের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন ও কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

 

আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি ইনপুট ডিভাইস কাকে বলে এই সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

Leave a Comment