ইন্টারনেট আসক্তি কি? এটা থেকে মুক্তির উপায়

দৈনন্দিন প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন কাজে ইন্টারনেট ব্যাবহার করছি। এটির সাথে যেন আমরা ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে গেছি। ইন্টানেটের মাধ্যমে আমরা যেমন অনেক সুবিধা ভোগ করছি, ঠিক তেমনিভাবে এর মাত্রারিক্ত ব্যবহার অনেক ক্ষতিও ডেকে আনে। আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো ইন্টারনেট আসক্তি কি? এর কুফল এবং মুক্তির উপায় সম্পর্কে।

 

ইন্টারনেট আসক্তি কি

ইন্টারনেট আসক্তি হলো প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার, যেখানে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে যেমন রিলেশনশিপ, কাজ অথবা স্বাস্থ্য।

 

বিভিন্ন কারণে একজন ব্যবহারকারী ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে যেতে পারে। যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার করা এবং এখানে থেকে বিভিন্ন শর্ট ভিডিও দেখা। ইউটিউব সহ যে কোনো মাধ্যম থেকে ভিডিও দেখা, গেম খেলা, অনলাইনে কেনাকাটা করা ইত্যাদি। 

 

দৈনিক জনকন্ঠের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী মানসিকভাবে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৬ শতাংশই ঘটে থাকে অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে। শিক্ষার্থীদের উপর একটি জরিপে দেখা যায় জরিপে অংশগ্রহনকারির ৭২.২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে তারা কোনো না কোনো সময় মানসিক সমস্যায় পড়েছে। এবং এই সমস্যার জন্য ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটকে দায়ী করেন। 

 

শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ আজ স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট এর উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। এর কারণও আমাদের অজানা নয়। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে আজ খেলার মাঠ দিতে পারছিনা, যেটা ঢাকা শহরে আরো প্রকট।

 

কিভাবে বুঝবো আমি ইন্টারনেটে আসক্ত কিনা

আমরা অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারে এতটা মশগুল হয়ে গেছি যে আমরা যে দিনে দিনে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছি সেটা বুঝতে পারিনা। কিভাবে বুঝবো আমি ইন্টারনেটে আসক্ত কিনা সে বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হলো: আপনিও মিলিয়ে নিতে পারেন।

 

  • ইন্টারনেটে কেমন সময় ব্যায় করা হয় তা লুকানোর চেষ্টা করা

  • মাঝে মাঝে এমন হয় যে ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে করতে খাবার এড়িয়ে যাওয়া হয়, এমনকি স্বাস্থ্যবিধিও অবহেলা করা হয়।

  • ফোন বা কম্পিউটার বেশি ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনে অজুহাত তৈরি করা হয়। 

  • অনলাইনে কম সময় কাটাতে চাইলে সেটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। 

  • সোস্যাল মিডিয়া ব্যাবহারের ফলে রাতের ঘুমের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। 

  • সোস্যাল মিডিয়া ব্যাবহারের ফলে পূর্বের সখের বিষয়গুলোর প্রতি অবহেলা চলে আসছে।

  • যদি কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করা হয় তখন বিরুক্তি বা উদ্বিগ্ন বোধ হয। 

  • ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে চাকুরী, পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজকে অবহেলো করা

 

এছাড়াও মানসিক এবং শারীরিকভবেও কিছু লক্ষন বা উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি ইন্টারনেটে আসক্ত কিনা।

 

সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্তির কারণ

বর্তমান সময়ে যে আমরা কতটা সোস্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর হয়ে পড়ছি সেটা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয়না। দেখা যায়, যে ব্যক্তি লিখতে পরতে জানেনা তারও একটি ফেসবুক আইডি আছে। সে শুধু ফেসবুক স্ক্রলিং করে বিভিন্ন ছবি দেখে বা ভিডিও দেখে। 

 

সোস্যাল মিডিয়ার পরিমিত ব্যবহার আমাদের সকলের জন্যই উপকারি হতে পারে। যাইহোক, যখন একজন ব্যক্তি সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন, তখন এই উপকারিটাই তার জন্য ক্ষতিকারক হয়ে যায়। 


মানুষের ইন্টারনেটে আসক্ত হওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে যে, সে ট্রমায় ভুগছে। নিজের এই অনুভূতিটা শেয়ার করার জন্য সোস্যাল মিডিয়াকে বেছে নিচ্ছে এবং নিজেকে আড়াল করে সেটা সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছে। এটি অনেক কিছু হতে পারে যেমন দুঃখ, একাকিত্ব, বেকারত্ব, রিলেশন থেকে ব্রেকআপ, সাইবার বুলিং এবং বাস্তব জীবনে দক্ষতার অভাব।

 

ইন্টারনেট আসক্তির কারণ

ইন্টারনেট আসক্তির কোনো একক কারণ নেই, বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যে ইন্টারনেট আসক্তি আসতে পারে। নিচে কিছু ইন্টারনেট আসক্তির কারণ উল্লেখ করা হলো:

 

মানসিক স্বাস্থ্য: মানুষের অন্তর্নিহিত মানসিক সাস্থ্যের অবস্থা, উদ্বেগ এবং বিষন্নতাসহ বিভিন্ন বিষয় থেকে নিজেকে হালকা রাখতে সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পরে। কিছু মানুষ আছে যারা সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করেনা, তাই তারা যোগাযোগের জন্য অনলাইনকেই বেছে নেয়। 

 

জেনেটিক্স: ইন্টারনেট আসক্ত জিনগত কারণেও আসতে পারে। বাবা মা দুজনেই বা কেউ একজন যদি ইন্টারনেটে আসক্ত থাকে তবে সেটা সন্তানের মাঝেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

 

পরিবেশগত কারণ: ইন্টারনেটে আসক্ত হওয়ার বড় একটি কারণ পরিবেশ। আমাদের সবাইকে পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, সেক্ষেত্রে চাইলেও এগুলো থেকে অনেক সময় মুক্তি পাওয়া যায়না। যেমন একজন ছাত্র চাচ্ছে যে সে আর ফেসবুক ম্যাসেন্জার ব্যাবহার করবেনা। কিন্তু দেখা যায় গ্রুপ স্টাডির বা বিভিন্ন পরীক্ষার কথা বার্তা জানার জন্য তাকে গ্রুপে জয়েন করতেই হচ্ছে। 

 

তথ্য আসক্ত: ব্যাপারটি কেমন শোনা গেলেও এটি বাস্তব যে কিছু মানুষের প্রচুর জ্ঞানের ক্ষুদা থাকে। যেহেতু ইন্টারনেট হলো একধরনের তথ্যভান্ডার তাই তথ্য সংগ্রহ করতে করতে একসময় আসক্ত হয়ে পড়ে।

 

ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি

ইন্টারনেট আসক্তির ফলে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, একাডেমিক, আর্থিক এবং পেশাগত জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মার্কিন গবেষণা মতে, ইন্টারনেট আসক্তি পুরো বিশ্বজুরে অ্যালার্মিং অবস্থায় রয়েছে। এই প্রভার কিশোর এবং তরুণ মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। 

 

অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেট আসক্তিকে মাদকের সাথেও তুলনা করা হয়। কেননা ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদেরকে আরো সন্তোষজনক করতে আরো ইন্টারনেট ব্যাবহারের ইচ্ছা জাগ্রত করে। অ্যালকোহলের তৃপ্ততা ভোগ করার জন্য যেমন একজন মদ্যপ ব্যক্তি আরও অ্যালকোহল গ্রহণ করে ইন্টারনেট ব্যবহারও অনূরূপ।

 

ইন্টারনেট আসক্ত ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রন করতে স্ট্রাগল করে। প্রায়ই তাদের আসক্তমূলক আচরণ প্রকাশ পেয়ে যায় যে কারণে পরবর্তীতে তারা এটার জন্য হতাশা অনুভব করে। আত্মসম্মান হারানো, একাকিত্ব, পারিবারিক কলহের কারণে তাদের আসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে নিজেকে তখন দূর্বল ভাবতে শুরু করে। 

 

ইন্টারনেট অত্যধিক ব্যবহারের ফলে বাস্তব জীবনের রিলেশনশিপেও সমস্যা দেখা দেয়। ইন্টারনেট আসক্ত ব্যক্তিরা একাকি নির্জনে বেশি সময় কাটায়। তারা জীবনে প্রকৃত মানুষের সাথে কম সময় কাটায়, যেটা সামাজিকভাবে খুবই দৃষ্টিকটু দেখা যায়।

নিচে ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো:

 

ইন্টারনেট আসক্তির সাইকোলোজিক্যাল প্রভাব

 

  • ডিপ্রেশন

  • অপরাধবোধ কাজ করা

  • দুশ্চিন্তা

  • অসততা

  • ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় তৃপ্তি অনুভব করা

  • কোনো কাজের শিডিউল মেইনটেইন করতে না পারা। 

  • একাকিত্ব

  • সময় নিয়ে কোনো সিরিয়াসনেস না থাকা

  • কাজকে অবহেলা করা

  • মুড সুইং

  • মনের মধ্যে একটা অজানা ভীতি কাজ করা

  • সবকিছুতেই একটা গড়িমসি ভাব

 

ইন্টারনেট আসক্তির ফিজিক্যাল প্রভাব

 

  • ঘাড় অথবা পিঠব্যাথা

  • মাথাব্যাথা

  • নিদ্রাহীনতা

  • অপুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া

  • চোখের সমস্যা

  • ওজন বৃদ্ধি বা কমে যাওয়া

 

ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

আমরা অনেকেই ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে পরতে পারি অথবা আমাদের সন্তান ছোট ভাই ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে পরতে পারে। প্রকৃতপক্ষে যারা নিজেরা চেষ্টা করে ইন্টারনেট আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারছেনা সেক্ষেত্রে আমরা এখন জেনে নেবার চেষ্টা করবো ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। 

 

ঔষধের মাধ্যমে: সব ইন্টারনেট আসক্ত ব্যক্তিদের জন্য ঔষধের প্রয়োজন নেই। যারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে যেমন ডিপ্রেশন বা উদ্বেগ, এবং এগুলো থেকেই তার মধ্যে ইন্টারনেট আসক্তি আসছে। শুধুমাত্র তাদেরই ঔষধ প্রয়োজন হতে পারে। তবে ঔষধের ব্যাপারে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করে নিতে হবে। 

 

এক্ষেত্রে ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের মত সমস্যগুলো মোকাবেলা করার জন্য Antianxiety এবং antidepressant ঔষধগুলো ব্যাবহার করা যেতে পারে। ইন্টারনেট আসক্তি দূর করার জন্য ঔষধ ভালো কাজ করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। 

 

কগনিটিভ বিহাভিয়ারাল থেরাপি: ইন্টারনেট আসক্তির একটি কমন চিকিৎসা হলো CBT বা কগনিটিভ বিহাভিয়ারাল থেরাপি। এটি সাধারণত একজন ইন্টারনেট আসক্ত ব্যক্তির নেতিবাচক চিন্তাধারার উপর ফোকাস করে এটি পরিবর্তনের চেষ্টা করে। 

 

একটি ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা যায় যারা মেডিসিন এবং কগনিটিভি বিহাভিয়ারাল থেরাপি গ্রহন করে তাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। এক্ষেত্রে রোগিরা আগ্রহের সহিত ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার মত যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে। 


সাপোর্ট গ্রুপ: আপনরা হয়তো স্বীকার করবেন যে কোনো একজনের খারাপ সময়ে অন্য একজনের সহযোগিতা তার সুস্থ্যতার জন্য অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য সাপোর্ট গ্রুপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার উপায়

আমাদের প্রত্যেকেরেই উচিত ইন্টারনেট ব্যবহারে নিজেকে সংযত রাখা। ইন্টারনেট ব্যবহারে অনেক সুফল রয়েছে এটা আমরা সবাই জানি। সেই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যেন এই সুফল আমাদের জন্য কখনও কুফল বয়ে না আনে। তাহলে চলুন আমরা ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার উপায় থাকার কয়েকটি ‍উপায় সম্পর্কে জেনে আসি।

 

স্বীকার করা

যে কোনো সমস্যা সমাধান করার করার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমস্যাটিকে স্বীকার করা। এবং সমস্যাটিকে সমাধান করতে হবে তা নিজ থেকে উপলদ্ধি করা। এটি আপনার উন্নতির প্রথম সাফল্য। 

 

আপনার একটি সমস্যা আছে এটি আপনি মৌখিভাবে স্বীকার করার মাধ্যমে আপনি নিজে সৎ হন এবং এটি পরবর্তীতে সমাধান করা সহজ হয়।

 

অনলাইনে আসার সাথে সাথে আমাদের ব্রেইন নিউরেট্রান্সমিটার কেমিক্যাল রিলিজ করে দেয় যেমনটা মাদক গ্রহন করলে সংগঠিত হয়ে থাকে। একসময় এটি ব্রেইন এর রিওয়ার্ড সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, যা আমাদের চিন্তার ধরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এরফলে আমাদের স্বীকার করা কঠিন হয়ে পড়ে যে আমরা কোনো সমস্যার মধ্যে আছি।

 

থেরাপি অনুসন্ধান

আপনি যদি অনুভব করে থাকেন যে আপনার মধ্যে একটি সমস্যা বিরাজমান আছে তবে আপনি কেন সেটা সমাধান করবেন না? আপনার এমন কাউকে খুঁজে বের করা দরকার যে আপনার সমস্যাগুলো শুনবে এবং সমাধান করতে পারবে। 

 

আপনি নির্ভরযোগ্য কাউকে খুঁজে বের করুন এবং যে বিষয়টা আপনার বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে তা তার সাথে শেয়ার করুন। প্রয়োজনে তার কাছে ওয়াদা করুন যে আমি আগামি একসপ্তাহ আমি এই সাইটে প্রবেশ করবো না।  অথবা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় ব্যায় করবোনা। এবং তাকে বলবেন নির্দিষ্ট সময় পর যেন আপনাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। 

 

যখন আপনার মনের মধ্যে এটা কাজ করবে যে কয়েকদিন পর সে আমাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবে, তখন আপনার জন্য সেই কাজ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে। এভাবে আপনি কিছুদিন পর পর সময় বাড়াতে পারেন।

 

অনলাইনে কাটানোর জন্য সময়কে নির্দিষ্ট করুন

চেষ্টা করুন অনলাইনে অতিবাহিত করার সময় ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে। একবারেই যদি অনলাইন থেকে বেরিয়ে আসতে চান সেটা হয়তো পারবেন না বা কঠিন হয়ে যাবে। আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করা কমিয়ে দেন তাহলে বেশ কয়েটা পরিবর্তন আপনি অনুভব করতে পারেন। যেমন:

  • খারাপ লাগা

  • ক্লান্তি

  • ঘুমের সমস্যা

  • বিরক্তি

 

কিছুদিন এই সমস্যাগুলি অনুভব হতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে এসব অনুভব হলেই যেন আবার ইন্টারনেটে না জড়ানো হয়। এটা কিছুদিন পর এমনিতেই কমে যেতে থাকবে।

 

স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করুন

আজকাল আমরা খুব বেশি ইন্টারনেট নির্ভরশীল হযে পরছি। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন কিশোর কিশোরিদের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর একটি প্রতিবেদন করে। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সি ৭৫৮ জন ছেলেমেয়েদের উপর একটি জরিপ চালানো হয়। সেখানে দেখা যায় ৭৯ শতাংশ ছেলেমেয়েই ডিভাইসের পিছনে গড়ে প্রতিদিন ৪ঘন্টা সময় ব্যায় করে।

 

আপনার যদি মনে হয় যে আপনি ফোনে আসক্ত এবং এটি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ফোন ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত। আপনি প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য একটি নিয়ম-নীতি তৈরি করে নিতে পারেন।

 

সামাজিকতা

মাঝেমধ্যে ইন্টারনেট থেকে বের হয়ে একটু বাহিরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। আপনার বন্ধুদের ইনভাইট করুন মজার কিছু অ্যাক্টিভিটি করুন অথবা বাইরে কোথাও ঘুরতে যান। ইন্টারনেটে সময় কাটানোর চেয়ে এখানে সময় বেশি কাটান, বিষয়টাকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সামাজিক উন্নয়নমূলক কোনো কাজে নিজেদের জড়াতে পারেন। এতে ভালোলাগাটা বেড়ে যাবে।

 

যোগাযোগের মাধ্যম পরিবর্তন করা

যে সকল বন্ধুর বাড়ি আপনার বাড়ির নিকটে তাদের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ না করে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। একইভাবে বলা যায় তাদের সাথে অনলাইনে কোনো গেম না খেলে ফিজিক্যালি বাইরে খেলার চেষ্টা করুন।

 

রুটিন অনুসরণ করুন

আমরা যখন সিরিয়াস হয়ে কোনো কিছু করতে চাই তখন রুটিন আমাদের অনেক হেল্প করে। একটি রুটিন আপনাকে আরো সুসংগঠিত হয়ে চলতে সাহায্য করবে। ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে সবচেয়ে বেশি দরকার টাইম ম্যানেজমেন্ট। আপনাকে একটি রুটিন তৈরি করতে হবে এবং সেখানে ইন্টারনেট চালানোর পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করার সময়ও রাখতে হবে। আপনি ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্যও একটি সময় নির্বাচন করবেন এবং সেটিও হবে রুটিনের অংশ হিসেবে।

 

প্রাইওরিটি সেট করুন

প্রাইওরিটি মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। অনেক সময় আপনার সামনে অনেকগুলো কাজ একসাথে চলে আসবে যেগুলোর সবগুলোই সম্পন্ন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রথমে যে কাজটি করতে চান সেটি আগে ফোকাস করুন। যেমন ধরুন আপনি একজন স্টুডেন্ট, সেক্ষেত্রে বাসায় এসে আপনার প্রথম কাজ হবে স্যারের দেওয়া হোমওয়ার্ক শেষ করা।

 

ডিভাইসগুলোকে নিষ্কিয় রাখুন

যদি ইন্টারনেট আসক্তি দিন দিন আপনার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায় তবে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেটা হলো কিছুদিনের জন্য ডিভাইসগুলোকে নিষ্কিয় বা নিজের থেকে দূরে রাখা। যেমন হতে পারে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা কোনো গেমিং কনসোল। 

 

আপনি চাইলে এটা কোনো বন্ধুর কাছে বা নিকট কারো কাছে এগুলো কিছুদিনের জন্য রেখে দিতে পারেন। 

 

সীমানা নির্ধারণ করুন

আমরা যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি তখন এটি সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি সময় আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে সময় নির্ধারণ করা ইন্টারনেট আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আপনাকে অনেকটা সাহায্য করতে পারবে। আপনি কোন সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন বা ইন্টারনেটে কি ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণ করে ফেলতে পারেন।

 

পরিশেষে

এইযে আমি আপনাদের ইন্টারনেট আসক্তির কুফলগুলো বর্ণনা করলাম তার মানে এই না যে আপনাকে ইন্টানেট চালানো বন্ধ করে দিতে হবে। কেননা ইন্টারনেটের যেমন কিছু কুফল রয়েছে তেমনি এর অনেক অনেক সুফল রয়েছে যা আমি লিখে শেষ করতে পারবোনা। 

 

তাই আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে কেননা ইন্টারনেট ব্যবহার না করলে বর্তমান যুগ থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবো। বর্তমান যুগের তাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে অবশ্যেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। তাই পরিশেষে বলবো যে ইন্টারনেট থেকে মুক্তি পেতে দরকার আমাদের সচেতনতা। এর জন্য  আমরা নিজেরা সচেতন থাকবো আমাদের প্রিয়জনকে ইন্টারনেটের ব্যাপারে সচেতন করবো।

আপনার এই ছিলো আজকের ইন্টারনেট আসক্তি কি এই সম্পর্কে কিছু কথাবার্তা আশা করি আপনারা ইন্টারনেট আসক্তি কি এই সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো আপনাকে সহোযোগিতা করার।

Leave a Comment