ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায়: বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট সম্পর্কে জানেনা বা ইন্টারনেটের নাম শোনেনি এমন মানুষ হয়তো খুজেই পাওয়া যাবেনা। পড়াশোনা থেকে শুরু করে চাকুরী, ব্যাবসা বাণিজ্য সবকিছুই এখন ইন্টারনেট নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চলুন তাহলে ইন্টারনেট থেকে কিছু দেখে আসা যাক।
ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায়
ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপি এমন একটি নেটওয়ার্ক যেখানে বিশ্বের কোটি কোটি কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত থাকে। এই নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদানসহ আরো অনেক কাজ করে থাকে।
আপনি একটি কম্পিউটার বা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে এসব কাজ করতে পারবেন, যাকে বলা হয় অনলাইনে কাজ করা। যখন কেউ বলে আমি অনলাইনে আছি, তারমানে বোঝায় যে সে ইন্টারনেটে সংযুক্ত আছে।
এটি বিশ্বের কোটি কোটি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করতে স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারনেট প্রোটোকল স্যুট (TCP/IP) ব্যবহার করে। অপটিক্যাল ফাইবার এবং অন্যান্য ওয়্যারলেস এবং নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির মতো কেবল ব্যবহার করে সেটআপ করা হয়।
বর্তমানে, সারা বিশ্বে কম্পিউটারের একে অপরের সাথে ডাটা প্রেরণ বা বিনিময়ের দ্রুততম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হলো বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার যা বিশ্বের প্রায় সকল মানুষই ব্যবহার করছে।
ইন্টারনেট লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার, ওয়েবপেজ, ওয়েবসাইট এবং সার্ভারকে সংযুক্ত করে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা আমাদের প্রিয়জনকে ইমেইল, ইমেজ, অডিও এবং ভিডিও বার্তা পাঠাতে পারি।
আপনার ডিভাইসটি যদি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে তবেই আপনি সমস্ত অ্যাপ্লিকেশন যেমন ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়াসহ সকল ধরনের সার্ভিস পাবেন।
ইন্টারনেটের ইতিহাস
ইন্টারনেটের ইতিহাসের মাধ্যমে ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে একটা আইডিয়া পাওয়া যাবে। ইন্টারনেট সর্বপ্রথম ১৯৬০সালে ARPANET (Advanced Research Projects Agency) নামে প্রথম কার্যকরী মডেল তৈরির মাধ্যমে এসেছিলো। শুরুর দিকে একটি আমেরিকান ডিফেন্সে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হতো।
এটির মাধ্যমে তখন একক সময়ে একাধিক কম্পিউটারে কাজ করা যেত যা ছিলো সেই সময়ের সবচেয়ে বড় অর্জন। ARPANET একটি একক নেটওয়ার্কের অধীনে একাধিক কম্পিউটারকে কাজ করতে প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করতো। ১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসে ARPANET ব্যবহার করে সর্বপ্রথম বার্তা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ট্রান্সফার করা হয়।
ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে
ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায় এটি সম্পর্কে জানতে আমাদের জানতে হবে এটি কিভাবে কাজ করে। আপনি হয়তো কখনো ভেবেছেন যে ইন্টারনেট আসলে কিভাবে কাজ করে। এর সঠিক উত্তরটি বেশ জটিল এটি ব্যাখ্যা করতে একটু সময়ও লাগবে। তার পরিবর্তে চলুন এমন কিছু বিষয় জানি যার মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতে পারবো।
এই বিষয়টা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে ইন্টারনেট হলো ফিজিক্যাল তারের একটি বিশ্বব্যাপি নেটওয়ার্ক। যার মাধ্যমে টেলিফোন, টিভির ডিস ক্যাবল, ফাইবার অপটিক তার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এমনকি আমরা যে ওয়াইফাই ইন্টারনেট ব্যবহার করি এটাও সেই তারের উপরই নির্ভশীল।
আপনি যখন একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তখন আপনার কম্পিউটারটি তারের মাধ্যমে সার্ভারে একটি রিকুয়েষ্ট পাঠায়। একটি সার্ভার হলো যেখানে ওয়েবসাইটগুলি স্টোর করা হয় এবং এটি আপনার কম্পিউটারের হার্ড-ড্রাইভের মত কাজ করে। সার্ভারে রিকুয়েস্ট আসার পর সার্ভারটি ওয়েবসাইটটি পুনরুদ্ধার করে এবং সঠিক ডাটা কম্পিউটারটিতে ফেরত পাঠায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো যে, সব কিছু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে থাকে।
বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৩ সাল থেকে। তবে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে আন্তঃমহাদেশিয় ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন এর সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হয় ২০০৬ সালে। সি-মি-উই-৩ কে প্রতিস্থাপিত করে সি-মি-উই-৪ নামকরণ হয় যেখানে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত হয়।
সি-মি-উই-৪ (SEA-ME-WE-4) বলতে বোঝায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ ৪। এর মূলত চারটি মূল অংশে বিভিক্ত এবং এর ১৭টি ল্যান্ডিং পয়েন্ট রয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজার রয়েছে।
ইন্টারনেটের ব্যবহার
বর্তমানে ইন্টারনেট যে কতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা হয়তো বলে শেষ করা যাবেন। তারপরও আমরা ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায় এর এই পর্যায়ে আমরা ইন্টারনেটের কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
অনলাইন ব্যবসা বা ই-কমার্স
ব্যবসায়ীক জগতে অনলাইন ব্যবসা অনেক বড় জায়গা জুরে অবস্থান করছে। বিশেষ করে করোনার পর থেকে বাংলাদেশে আরো বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এসব অনলাইন ই-কমার্স সাইটগুলি আমাদের জীবন আরো সহজ করে তুলেছে। দারাজ, চালডালের মত সাইটগুলির মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই পছন্দের পণ্য হাতে পাবেন। তাই বলাই চলে ই-কমার্স ইন্টারনেটের একটি দূর্দান্ত ব্যবহার।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনলাইন ক্লাস থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট কোন টপিক বোঝার জন্য আমরা ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করে থাকি। যারা ফিজিক্যালি ক্লাস করতে অক্ষম বা ক্লাসের জায়গা থেকে দূরে থাকে তারা চাইলেই অনলাইনের মাধ্যমে কোর্সগুলি সম্পন্ন করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে ১০মিনিট স্কুল নামে ডিজিটাল এডুকেশনাল প্ল্যাটফর্মটিও ভালো আলোড়ন ফেলেছে।
সোস্যাল নেটওয়ার্ক
সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বা এই অ্যাপের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বের মানুষকে সংযুক্ত করা। আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করি মোটামুটি প্রত্যেকেই এই সোস্যাল মিডিয়ার সাথে কানেক্টেড বলা যায়। এর মাধ্যমে আমরা কথা বলতে পারি, আমাদের প্রিয়জনের সাথে ছবি শেয়ার করতে পারি, তাদের সাথে অডিও-ভিডিও কলে কথা বলতে পারি। এছাড়াও আমরা কয়েকজন মিলে একটি গ্রুপ খুলে তাদের গ্রুপ আড্ডা দিতে পারি।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনোদন
বর্তমানে ইন্টারনেট বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষই এখন বিনোদনের জন্য ইন্টারনেটের উপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। অনেক মানুষ শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যই ইন্টারনেট ব্যবহার করে বা তারা সেটাই জানে। ইন্টারনেটে অনেক বিনোদনের মাধ্যম রয়েয়ে যেমন সিনেমা দেখা, গেম খেলা, গান শোনা ইত্যাদি। এছাড়াও আপনি সহজেই ইন্টারনেট থেকে মুভি, গেম, গান বা ওয়েব সিরিজ ডাউনলোড করে দেখতে পাবেন।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাসায় বসে কাজ
আমরা দিন দিন নানাভাবে ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে আমাদরে দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করছি। যেমন এখন অনেকেই বাসায় বসেই অনলাইনের মাধ্যমে অফিসিয়াল কাজকর্ম করতে পারছে। এছাড়াও বর্তমানে অনেকে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে।
তথ্য খুজে পেতে
আমরা যে’কটি কারণে ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করি তার মধ্যে এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করি। আমরা গুগল বা ইউটিউবে গিয়ে আমাদের কাঙ্খিত তথ্য সম্পর্কে জানতে সেখানে সার্চ দেই।
যেমন আমরা যদি যেকোনো মোবাইলের দাম বা তথ্য জানতে চাইলে গুগল বা ইউটিউবের মাধ্যমে আমরা আমাদের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাও আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়তে পারি।
ইন্টারনেটের অপকারিতা
আপনার হয়তো মনে হতে পারে ইন্টারনেটের এত এত সুবিধার পর আবার অসুবিধা কি। এর যেমন সুবিধাও আছে তেমনিভাবে এর কিছু অসুবিধাও আছে। আমরা এখন এর কিছু অসুবিধা সম্পর্কে জানবো যেন ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায় এ সম্পর্কে আরো ক্লিয়ার ধারণা পেতে পারি। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক:
সময় অপচয়
ইন্টারনেট আমাদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা করে থাকে সেটি হলো আমাদের থেকে সময়টা কেড়ে নেয়। সময় আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ আর এই মূল্যবান সম্পদই আমরা ইন্টারনেটের কারণে হারিয়ে ফেলি।
বিশেষ করে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে আমরা অযথাই অনেক সময় ব্যয় করে ফেলি। অনেক সময় ভার্চুয়াল জগতে কাটানোর ফলে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি কমে যেতে পারে।
স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব
আপনি যদি অনলাইনে খুব বেশি সময় ব্যয় করেন তবে এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। বাইরের কিছু কার্যবলী আছে যেগুলি আপনার শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ যেমন ব্যায়াম, হাটা, খেলাধুলা ইত্যাদি। বেশিক্ষণ স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্ষতি হতে পারে। রাত জেগে ডিভাইস ব্যবহার আপনার অনিদ্রা সহ বেশ কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই আমাদের ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
সাইবার অপরাধ
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেমন মানুষ অনেক ধরনের সুবিধা ভোগ করছে, জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে, তেমনিভাবে একটি চক্র এটি ব্যবহার করে অপরাধও সংঘটিত করছে। বর্তমানে সাইবার বুলিং, স্প্যাম, ভাইরাস, হ্যাকিং এবং ডাটা চুরির মত অপরাধগুলি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাইবার অপরাধিরা দ্রুত আপনার অজান্তেই আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করে তার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিতে পারে।
শিশুদের উপর প্রভাব
শিশুদের উপর ইন্টারনেট মারাত্নক প্রভাব ফেলছে। এবং এটা সংগঠিত হয়ে থাকে অভিভাবকের অসতর্কতার ফলে। ছোট বাচ্চাদের ইন্টারনেটে ক্রমাগত ভিডিও দেখা, গেম খেলা তাদের সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য খারাপ।
পরিশেষে
আশা করি উপরের আর্টিকেল থেকে ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায় এই সম্পর্কে একটা ভালো আইডিয়া পেয়েছেন। যদি ইন্টারনেট সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করবো আপনাকে সহোযোগিতা করার।