বর্তমানে আমরা যারা কম্পিউটার, মোবাইল বা ইন্টারনেট সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখি তারা নিশ্চয় ইমেইল সম্পর্কেও জেনে থাকবো। হয়তো সম্পূর্ণ না জানলেও এর নাম নিশ্চয় জেনে থাকবো। কেননা মোবাইলে ইন্টারনেট চালাতে গেলেও বিভিন্ন কাজে আমাদের ইন্টারনেট দরকার হবে। যেমন সোস্যাল মিডিয়া চালাতে, প্লে-স্টোর থেকে কোন অ্যাপ নামানোসহ বিভিন্ন কাজে আমাদের ইমেইল দরকার হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা ইমেইল কাকে বলে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ইমেইল কাকে বলে
ইমেইল হলো ইলেকট্রনিক মেইল এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ইমেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক ব্যবহারকারী থেকে অন্য এক বা একাধিক ব্যবহারকারীর কাছে বার্তা বিনিময়ের সিস্টেম।
ব্যক্তিগত, ব্যবসায়ীক বা চাকুরীর যোগাযোগের জন্য ইমেইল হলো দ্রুত, সস্তা এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি উপায়। ব্যবহারকারীর নিকট ইন্টারনেট থাকলেই সে যেকোনো জায়গা থেকেই ইমেইল পাঠাতে বা রিসিভ করতে পারে।
কেন আমরা ইমেইল ব্যবহার করি
প্রতিনিয়ত ইমেইল আমাদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমরা প্রায় প্রতিদিনই ইমেইল ব্যবহার করে থাকি। এর বড় একটি সুবিধা হলো রিয়েল টাইম তথ্য প্রেরণ বা রিসিভ করা যায়। অর্থ্যাৎ আপনি কাউকে মেইল পাঠালে সে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার মেইল রিসিভ করতে পারবে। ইমেইলের মাধ্যমে যেসব যোগাযোগ হয়ে থাকে তা সার্ভারে রেকর্ড হয়ে থাকে, ফলে যেকোন সময় যেকোনো প্রয়োজনে আপনি দেখতে পারবেন। প্রয়োজনে ব্যবহারও করতে পারবেন।
ইমেইলের মাধ্যমে শুধুমাত্র বার্তাই নয় বরং বিভিন্ন ফাইল, ছবি এবং ভিডিও পাঠানো যায়।
ইমেইলের প্রকারভেদ
এবার আমরা ইমেইলের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো যেন ইমেইল কাকে বলে এই সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা যায়।
Newsletters: Newsletters হলো একজন ব্যক্তি দ্বারা গ্রাহককে পাঠানো এক ধরনের ইমেইল। এই ধরনের মেইলে সাধারণত কোন বিজ্ঞাপন, পণ্যের প্রচারণা, কোম্পানি সম্পর্কিত আপডেট এবং মার্কেটিং কনটেন্ট থাকে। এটি হতে পারে কোম্পানির আসন্ন ইভেন্ট, সেমিনার অথবা ওয়েবিনার সম্পর্কিত তথ্য।
Onboarding Emails: এটি এমন একটি ইমেইল যেটা একজন ব্যবহারকারী কোন কিছু সাবস্ক্রাইব করার পরেই পেয়ে থাকেন। এই ইমেইলগুলি ক্রেতাদের কাছে পাঠানো হয় যেন তারা পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে। এখানে নতুন অর্গানাইজেশনের বিবরণও উল্লেখ করা থাকে।
Transactional: এই ধরনের ইমেইলে সাম্প্রতিক লেনদেনের চালান এবং লেনদেনের বিবরণ উল্লেখ করা থাকে। এটা বলা যায় যে, এইধরনের ইমেইলগুলি ক্রয়ের নিশ্চিতকরণ করে থাকে।
Plain-Text Emails: এই ধরনের ইমেইগুলিতে অন্যসব সাধারণত টেক্সট বার্তার মতই টেক্সট থাকে। এতে কোন প্রকার ছবি, ডকুমেন্টস, ভিডিও, গ্রাফিক্স বা কোন সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকেনা। অন্য সকল টেক্সট মেসেজ সার্ভিসের মত এখানেও ইমেইলের মাধ্যমে চ্যাটিং করা যায়।
ইমেইল এর কাজ কি
ইমেইল অ্যাড্রেস: প্রতিটি ইমেইলের জন্য একটি ইউনিক ইমেইল অ্যাড্রেস রয়েছে এবং এর মাধ্যমেই ইমেইলটি চিহিৃত হয়। এই অ্যাড্রেসের মাধ্যমে ইমেইল তার গন্তব্যে পৌঁছায়।
ইমেইল সার্ভার: ইমেইল সার্ভার হল একটি কম্পিউটার যার মাধ্যমে সকল ইমেইলগুলো সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রেরণ করা হয়।
SMTP: Simple Mail Transfer Protocol বা SMTP হল একটি প্রোটোকল যা ইমেইলগুলোকে একটি সার্ভার থেকে অন্য সার্ভারে পাঠাতে ব্যবহৃত হয়।
POP3 এবং IMAP: Post Office Protocol 3 (POP3) এবং Internet Message Access Protocol (IMAP) হল দুটি প্রোটোকল যা ইমেইল ক্লায়েন্টকে ইমেইল সার্ভার থেকে ইমেইল ডাউনলোড করতে সাহায্য করে।
ইমেইল এর সুবিধা অসুবিধা
ইমেইলের ব্যপক সুবিধা থাকার কারণে বিশ্বের সর্বোত্ত এটি ব্যবহার হচ্ছে। তবে এর বেশ কিছু সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধাও রয়েছে চলুন তাহলে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এতে করে ইমেইল কাকে বলে এই সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারবো।
ইমেইল এর সুবিধা
সহজ এবং দ্রুততা: ইমেইলের যতগুলি সুবিধা রয়েছে তারমধ্যে একটি বড় সুবিধা হলো এটি দ্রুত কাজ করে। অর্থাৎ আপনি কাউকে মেইল পাঠালে তাৎক্ষনিক সে মেইলটি পেয়ে যাবে।
একটি ইমেইল লিখাও অনেক সহজ চাইলে ১মিনিটের মধ্যেও কাউকে কোনো ইমেইল পাঠাতে পারি।
ব্যয় সাশ্রয়: ইমেইল পরিষেবাটি আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়ে যাবেন। ইন্টারনেট থাকলে আপনি যখন তখন যে কারও কাছে ইমেইল পাঠাতে এবং রিসিভ করতে পারবেন।
নিরাপত্তা: ইমেইল তথ্য প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য একটি পদ্ধতি। এর স্প্যাম বৈশিষ্টটি আরো সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এর মাধ্যমে মুহুর্তেই সম্ভাব্য ক্ষতিকারক মেইলগুলিকে মুছে ফেলতে পারে।
একসাথে একাধিক ব্যক্তিকে ইমেইল: এর আরেকটি বড় সুবিধা হলো একটি ইমেইল একসাথে অনেক প্রেরককে পাঠানো যায়। যেমন একটি ইমেইল পাঠানোর সময় টিমের সবাইকে বা অফিসের সবাইকে একসাথে পাঠানো যায়।
মাল্টিমিডিয়া ইমেইল: ইমেইলের আরেকটি সুবিধা হলো এর মাধ্যমে বিভিন্ন ফাইল, ডকুমেন্টস, ছবি, অডিও ফাইল এবং ভিডিও ফাইল পাঠানো যায়। এমনকি অনেকগুলি ফাইলকে একসাথে compressed করেও পাঠানো যায়।
ইমেইলের অসুবিধা
ক্ষতিকর ব্যবহার: যে কেউ আপনার ইমেইল জানলেই আপনাকে ইমেইল পাঠাতে পারবে। তাই যে কারো কাছ থেকে আপনার কাছে ইমেইল আসতে পারে বাস্তবে যাদেরকে আপনি চিনেন না। ইমেইল অসুবিধাগেুলির মধ্যে এটি একটি। সাইবার আক্রমণকারিরা ইমেইলের মাধ্যমে আপনার কাছে ভাইরাস পাঠাতে পারে।
স্পাম মেইল: ইমেইলের একটি বড় অসুবিধাই হলো এর স্পাম মেইল। তবে ইমেইল সার্ভিস সুবিধাটি এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি দেয়। তবে এরও একটি অসুবিধা হলো অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেইলও স্পাম হিসেবে মুছে যায়।
ইন্টারনেট প্রয়োজনীয়তা: ইমেইল পাঠানো বা রিসিভ করার জন্য অবশ্যই ইন্টারনেটের আওতায় থাকতে হয়। কিন্তু দেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পাওয়া কষ্টকর। এসব জায়গার জন্য ইমেইল সার্ভিস পাওয়াটাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইমেইল লেখার নিয়ম
ইমেইল কাকে বলে জানার পাশাপাশি আমাদের ইমেইল লেখার নিয়মও জানা উচিত। এতে করে ইমেইলের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনিভাবে প্রেরকের প্রতি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি আসবে।
বিষয়বস্তু স্পষ্ট করা: ইমেইল লিখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে ইমেইল লিখা। যতসম্ভব সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু দিয়ে ইমেইল লিখা যেন পাঠকের মনে ভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়।
প্রাপককে উদ্দেশ্য করে লিখা: ইমেইল পাঠানোর সময় প্রাপককে উদ্দেশ্য করে লিখা উচিত। ইমেইলের শুরুতে নাম অথবা সম্ভোদন করে শুরু করা উচিত।
সংক্ষিপ্ত ও সরল ভাষা ব্যবহার করা: বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই বড় বড় প্যারাগ্রারাফের ইমেইল পড়তে চায়না। তাই ইমেইল যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত করে প্রেরককে ইমেইলের উদ্দেশ্য বোঝানো উচিত। ইমেইলের ভাষা অবশ্যই সহজ সরল হওয়া উচিত। এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা বাক্য এড়িয়ে চলা উচিত।
এছাড়া ইমেইলের বডি যদি বড়ই হয়ে যায় তাহলে ছোট ছোট প্যারা বা পয়েন্ট আকারে লিখা উচিত। এতে করে প্রেরক পড়ার সময় ধৈর্যহারা হওয়ার সম্ভবনা কম থাকবে।
শিষ্টাচার বজায় রাখুন রাখা: ইমেইল লিখার সময় আমাদের শিষ্টাচার বজায় রেখে ইমেইল লিখা উচিত যেমন শুরুতে এবং শেষে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ জানানো ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করা: ইমেইল লিখার সময় কোন ঘটনার তারিখ, সময় এবং স্থানসহ প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করা উচিত। যদি কোন ফাইল সংযুক্ত করতে চান তবে ফাইলের নাম স্পষ্টভাবে দেওয়া উচিত।
পাঠানোর পূর্বে পরীক্ষা করা: সব লিখা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ইমেইল পাঠানোর পূর্বে তা পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া উচিত যেন কোন সমস্যা আছে কিনা। কেননা পাঠানোর পরে সমস্যা মনে হলে সেটা আর ঠিক করার সুযোগ থাকেনা।
ইমেইলের বিভিন্ন অংশ
To: To হলো প্রাপকের ঠিকানা বা ইমেইল অ্যাড্রেস। এখানে আপনি প্রধানত যাকে ইমেইল করবেন তার ইমেইল লিখতে হবে।
Cc: Cc হলো কার্বন কপি অর্থাৎ যাদেরকে ইমেইলের কপি পাঠানো হবে। ধরুন আপনি আপনার টিম থেকে অন্য টিমের কাউকে একটি ডকুমেন্ট পাঠানোর জন্য ইমেইল করবেন। সেক্ষেত্রে আপনি To যাকে পাঠাতে চান তার ইমেইল দিতে হবে।
CC তে আপনার সিনিয়র, বস, সুপারভাইজারকে রাখতে পারেন যাতে করে তারাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকবে।
Bcc: Bcc ব্লাইন্ড কার্বন কপি, যাদেরকে ইমেইলের কপি পাঠানো হবে কিন্তু অন্য প্রাপকরা তাদের নাম দেখতে পাবে না। আপনি যদি কাউকে ইমেইলের একটি কপি পাঠাতে চান কিন্তু চাচ্ছেন অন্য কেউ যেন উনার ব্যপারে না জানে তাহলে Bcc তে রাখতে পারেন।
Subject: এখানে ইমেইলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে লিখা হয়। যতটা সম্ভব ছোট করে পূর্ণ মেইল সম্পর্কে ধারণা দিতে সাবজেক্ট লিখা হয়।
Body: এই অংশ হলো ইমেইলের মূল বার্তা। এখানেই ইমেইল পাঠানোর উদ্দেশ্যটি বিস্তারিতভাবে লিখা হয়।
Attachment: এটা হলো ইমেইলের সাথে যুক্ত করা কোনো ফাইল, ছবি, অডিও বা ভিডিও।
ইমেইল নিরাপদ রাখার উপায়
ইমেইল যদি হ্যাক হয়ে যায় বা ডাটা চুরি হয়ে যায় তাহলে কতটা সমস্যায়ই না আমাদের পড়তে হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেদের ইমেইলগুলি নিরাপদ রাখা। চলুন তাহলে ইমেইল নিরাপদ রাখার কিছু উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা: ইমেইল নিরাপদ রাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হলো শক্তিশালি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। যদি একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকে তবে প্রত্যেক ইমেইল এর জন্যও আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।
পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন মিশিয়ে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উত্তম।
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করা: ইমেইলের ক্ষেত্রে আমাদের টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করা উচিত। এতে করে ইমেইলের নিরাপত্তা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। এমনকি কারো কাছে পাসওয়ার্ড থাকলেও সে অ্যাক্সেস করতে পারবেনা।
সাবধানে লিঙ্ক ও ফাইল ওপেন করা: অপরিচিত কারো কাছ থেকে যদি কোন মেইল আসে এবং সেখানে কোন লিঙ্ক থাকলে সেগুলো সাবধানে ওপেন করা উচিত। এমনকি কোন ফাইল থাকলেও ডাউনলোড করা উচিত না।
স্প্যাম ফিল্টার ব্যবহার করা: ইমেইল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ইমেইল সার্ভারের স্প্যাম ফিল্টার ব্যবহার করা। এবং অবাঞ্ছিত ইমেইল পাঠানো ব্যক্তিদের ব্লকলিস্টে যুক্ত করা উচিত।
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার এড়িয়ে চলা: যতটা সম্ভব পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
সফটওয়্যার আপডেট রাখুন: আপনার কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যারগুলি সবসময় আপডেট রাখুন।
পরিশেষে
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা দরকার। আর ইমেইলই হলো তারই একটি অংশ। অনেক কিছু নির্ভর করে আমাদের ইমেইল এর উপর তাই আমাদের প্রত্যেকেরই ইমেইলের ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরী।
আশা করি এই আর্টিকেল থেকে ইমেইল কাকে বলে এই সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বোাত্মক চেষ্টা করবো আপনাকে সহোযোগিতা করার।