ডাটা কমিউনিকেশন কি

ডাটা কমিউনিকেশন কি? এখানে মূলত দুটি শব্দ রয়েছে ডাটা এবং কমিউনিকেশন। ডাটা বলতে সাধারণত টেক্সট, ইমেজ, অডিও, ভিডিও এবং মাল্টিমিডিয়া ফাইলগুলিকে বোঝায়। কমিউনিকেশ বলতে বোঝায় কোন কিছু পাঠানো বা গ্রহণ করা। 

 

অর্থাৎ ডাটা কমিউনিকেশন হলো দুই বা ততোধিক নেটওয়ার্ক সংযুক্ত ডিভাইসের মধ্যে ডাটা আদানপ্রদান করা। প্রত্যেকটি ডিভাইসেরই কমিউনিকেশন মিডিয়ামে তথ্য আদান প্রদানের ক্ষমতা থাকতে হবে। যেমন কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি।

 

ডাটা কমিউনিকেশ এর উপাদানসমূহ

যখন আমরা নেটওয়ার্ক অন্তভূক্ত দুইটি ডিভাইসের কমিউনিকেশন নিয়ে কথা বলি, সেক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ৫টি বিষয় আমাদের মাথায় আসে। এগুলি হলো সেন্ডার, রিসিভার, কমিউনিকেশন মিডিয়াম, কমিউনিকেট করার মেসেজ এবং সেই সাথে কমিউনিকেশন করার জন্য কিছু নিয়মকানুন। 

 

সেন্ডার: সেন্ডার হলো একটি কম্পিউটার বা এমন একটি ডিভাইস যেটি একটি নেটওয়ার্কে ডাটা পাঠানোর ক্ষমতা রাখে। এটা হতে পারে একটি কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ওয়াকিটকি, ভিডিও রেকর্ডার ইত্যাদি। 

 

রিসিভার: রিসিভার হলো এমন একটি ডিভাইস যেটি একটি নেটওয়ার্ক থেকে ডাটা রিসিভ করার ক্ষমতা রাখে। যেমন কম্পিউটার, প্রিন্টার, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ইত্যাদি। 

 

মেসেজ: এটি একধরনের ডাটা বা তথ্য যা সেন্ডার এবং রিসিভারের মধ্যে আদানপ্রদান হয়। বিভিন্ন ধরনের মেসেজ হতে পারে যমন টেক্সট, নাম্বার, ইমেজ, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি। 

 

কমিউনিকেশন মিডিয়া: এটি আসলে ডাটা ট্রান্সফার হওয়ার একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে ডাটা সেন্ডার থেকে রিসিভারে গিয়ে পৌছায়। এটাকে মিডিয়াম বা সংযোগও বলা হয় যেটা wired বা wireless যেকোনটা হতে পারে। যেমন টেলিভিশনের ক্যাবল, টেলিফোনের ক্যাবল, ইন্টারনেট ক্যাবল, স্যাটেলাইট লিঙ্ক, মাইক্রোওয়েভস ইত্যাদি।

 

প্রোটোকল: একটি কমিউনিকেশন সফলভাবে সম্পন্ন হতে কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করে আর এসব নিয়মকানুন কেই প্রোটোকল বলে।

 

কমিউনিকেশন মিডিয়ার ক্যাপাসিটি পরিমাপ

ডাটা কমিউনিকেশনে ডাটা ট্রান্সমিশন মিডিয়ামকে চ্যানেলও বলা হয়ে থাকে। চ্যানেলের ক্যাপাসিটি বলতে বোঝায় চ্যানেলের সবোর্চ্চ সংখ্যক সিগন্যাল অথবা ট্রাফিক বহন করার ক্ষমতা। এটিকে ব্র্যান্ডউইথ এবং ডাটা ট্রান্সফার রেট দ্বারা পরিমাপ করা হয় নিচে বর্ণনা করা হলো। 

 

ব্র্যান্ডউইথ: একটি চ্যানেলের ব্র্যান্ডউইথ হলো ফ্রিকুয়েন্সি এর রেঞ্জ যেটা চ্যানেলে ডাটা ট্রান্সমিশনের জন্য অ্যাভেইলেবল থাকে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্র্যান্ডউথ মানে উচ্চ ডাটা ট্রান্সফার রেট। ব্র্যান্ডউইথ হার্জ দ্বারা পরিমাপ করা হয়। 

 

1 KHz = 1000 Hz

1 MHz = 1000 KHz = 1000000 Hz

 

 

ডাটা ট্রান্সফার রেট: ডাটা সাধারণত একটি চ্যানেলের মাধ্যমে সংকেত আকারে ভ্রমন করে। একটি সিগন্যাল চ্যানেলের মাধ্যমে এক বা একাধিক বিটকে ট্রান্সফার করে। উৎস থেকে গন্তব্যে এক সেকেন্ডে ডাটা ট্রান্সফার হওয়ার সংখ্যাকেই ডাটা ট্রান্সমিশন রেট বলে। এটিকে বিট রেটও বলা যায় সংক্ষেপে যা bps বা বিট পার সেকেন্ড।

 

ডাটা কমিউনিকেশনের ধরণ

ডাটা কমিউনিকেশন কি এর গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক হলো এর ধরণ বা ডাটা কমিউনিকেশন টাইপ। কমিউনিকেশন দুই বা ততোধিক ডিভাইস বা নোডের মধ্যে সংগঠিত হয়ে থাকে। ডাটা পয়েন্ট টু পয়েন্ট অথবা মাল্টিপয়েন্ট কমিউনিকেশন চ্যানেলের মাধ্যে ট্রান্সফার হয়ে থাকে। 

 

ডাটা কমিউনিকেশনকে মূলত ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথাসিমপ্লেক্স কমিউনিকেশ, হাফডুপ্লেক্স কমিউনিকেশন এবং ফুলডুপ্লেক্স কমিউনিকেশন।

 

সিমপ্লেক্স ডাটা কমিউনিকেশন

সিমপ্লেক্স কমিউনিকেশন হলো দুটি ডিভাইসের মধ্যে একমুখি কমিউনিকেশন যেখানে একটি ডিভাইস ডাটা প্রেরণ করে অন্যটি রিসিভ করে। এটিকে আমরা ওয়ান ওয়ে রোড বা একমুখি রাস্তার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যেখানে গাড়িগুলি শুধু একদিকেই চলাচল করে। 

 

আরেকটা সহজ উদাহরণ যদি দেই তাহলে বলা যায় টেলিভিশন। আমরা কিন্তু টেলিভিশন থেকে শুধু কথা এবং ছবিই দেখতে পারি। অর্থাৎ আমরা এখানে শুধু রিসিভই করছি। আমরা যদি কিছু বলি বা দেখাতে চাই সেটা কিন্তু টেলিভিশনের ভেতরের মানুষ দেখতেও পারবেনা বা শুনতেও পারবেনা।

 

হাফ-ডুপ্লেক্স ডাটা কমিউনিকেশন

এটি দুটি ডিভাইসের মধ্যে টু ওয়ে বা দুমুখো কমিউনিকেশন যেখানে দুটি ডিভাইসই ডাটা প্রেরণ বা রিসিভ করতে পারে। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার আছে, আর সেটা হলো একইসাথে পারেনা। অর্থাৎ যখন একটি ডিভাইস ডাটা প্রেরণ করবে তখন অন্য ডিভাইস প্রেরণ করতে পারবেনা সে শুধু রিসিভ করবে। 

 

উদাহরণস্বরূপ আমরা ওয়াকি টকির কথা বলতে পারি যেখানে একজন কথা বললে অপরজন বলতে পারেনা সে শুধু শুনতে পারে। এরপর অপরজন বলে এই পাশের লোকটি শুনে থাকে।

 

 

ফুল-ডুপ্লেক্স ডাটা কমিউনিকেশন

ফুলডুপ্লেক্স হলো দুমুখো একটি কমিউনিকেশন সিস্টেম। এখানে দুটি ডিভাইসই একইসাথে ডাটা প্রেরণ রিসিভ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আমাদের মোবাইলফোন। আমরা ফোনে কথা বলার সময় যে কেউ কথা বলতে পারি। 

 

এখানে এমন না যে অন্য একজন কথা বলার সময় আমাকে চুপ থাকতে হবে বা আমি কথা বলার সময় অন্যপাশের মানুষকে চুপ থাকতে হবে। আমরা যে কেউ যখন তখন কথা বলতে পারি।

 

একটি ট্রান্সমিশন মিডিয়ার মাধ্যমে ডাটা সোর্স থেকে ডেস্টিনেশনে গিয়ে পৌছায়। সহজভাবে বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দেখা যাক- আমরা বাসায় গিয়ে সুইচের মাধ্যমে ফ্যান, লাইট অন করি। এইযে সুইচ থেকে ফ্যান বা লাইটের যে সংযোগ এই সংযোগটাই করা হয় ট্রান্সমিশন মিডিয়া বা তারের মাধ্যমে।

Communication Media

ওয়্যারড ট্রান্সমিশন মিডিয়া

ডাটা ক্যারি করতে যদি কোন ফিজিক্যাল লিংক বা কোন ধরনের ক্যাবলের প্রয়োজন পরে তবে তাকেই ওয়্যারড ট্রান্সমিশন মিডিয়া বলে। 

ওয়্যারড ট্রান্সমিশন মিডিয়া সাধারণত তিন ধরনের টুইস্টেড পেয়ার, কোএক্সিয়াল ক্যাবল এবং ফাইবার অপটিক। টুইস্টেড পেয়ার এবং কোএক্সিয়াল ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল বহন করে সেখানে ফাইবার অপটিক লাইট সিগন্যাল বহন করে।

ওয়্যারলেস ট্রান্সমিশন মিডিয়া

ওয়্যারলেস ট্রান্সমিশন মিডিয়ায় ডাটা বা সংকেতগুলি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল আকারে বায়ুর মাধ্যমে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশনে গিয়ে পৌছায়।

ওয়্যারলেস টেকনোলজি দুটি ডিভাইসের মধ্যে কোন প্রকার ওয়্যারড ক্যাবল ছাড়াই কমিউনিকেশন ঘটায়। অনেক ধরনের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন রয়েছে যেমন- ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স ইত্যাদি।

 

মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি

এখন ডাটা কমিউনিকেশন কি এর এই পর্যায়ে মোবাইল টেলিকমিউনিকেশ নিয়ে আলোচনা করবো।  আপনি হয়তো জানেন যে বর্তমানে নেটওয়ার্ক বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যাবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। এটা এতো জনপ্রিয় হবার আসলে অনেক কারণ আছে। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দুনিয়াটা যেন হাতের মুঠোয় চলে আচ্ছে। 

মোবাইল ফোনের পূর্বে আমরা যখন টেলিফোন লাইনের সাথে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতাম তখন সেটা শুধুমাত্র সেই জায়গাতেই সম্ভপর ছিলো। অর্থাৎ যেখানে টেলিফোন লাইন সেখানে থেকেই কথা বলতে হবে। অন্য রুম বা বাইরে গিয়ে কথা বলার সুযোগ ছিলোনা। 

বর্তমানে এই মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই সমস্যা সম্পূর্ণরুপে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন আমরা ঘরে বাইরে যেকোনো জায়গা কথা বলতে পারি। এমনকি হাটতে হাটতে বা দৌড়াঁতে দৌড়াঁতেও নিরবিচ্ছিন্নভাবে কথা বলতে পারি। 

এছাড়াও মোবাইলফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যাবহার করা এটি একটি অন্যতম কারণে এই নেটওয়ার্ক পপুলার হবার জন্য। আমরা এখন যেকোনো জায়গায় যেকোন মোবাইলফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারি। 

মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক গত কয়েক দশক ধরেই বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় বিকশিত হওয়া এসব ল্যান্ডমার্কে জেনারেশন বলা হয় যেমন 1G, 2G, 3G, 4G এবং 5G চলুন এবার এগুলি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।

 

 

1G বা ১ম জেনারেশন

 

1G বা ১ম জেনারেশন মোবাইল নেটওয়ার্ক সর্বপ্রথম আসে ১৯৮২ সালের দিকে। এটি ছিলো শুধুমাত্র ভয়েস কলের জন্য। এই নেটওয়ার্কটি প্রেরকের সিগন্যাল বহন করার জন্য ব্যাবহৃত হত। 

 

2G বা ২য় জেনারেশন

2G বা ২য় জেনারেশনের মোবাইল নেটওয়ার্ক আসে ১৯৯১ সালের দিকে। এই জেনারেশনের ভয়েস কল উন্নতির সাথে তারা অ্যানালগ সিগন্যালের পরিবর্তে ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যাবহার করে। 

 

একইসাথে অনেক মানুষ যেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভাবে কথা বলতে পারে এবং এর নিরাপত্তা ব্যাবস্থাও অনেকটা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও এই জেনারেশনে এসএমএস এবং এমএমএস সার্ভিস সংযুক্ত করা হয়েছে।

 

 

3G বা ৩য় জেনারেশন

3G বা ৩য় জেনারেশনটি ৯০দশকের শেষের দিকে তৈরি হয়েছিলো কিন্তু এটা বাণিজ্যিকভাবে ২০০১ এর দিকে সার্ভিসটি উন্মুক্ত করা হয়। এই জেনারেশনে ডিজিটাল ভয়েস এবং ডাটা সার্ভিস অফার করা হয়। 

 

3G এর মাধ্যমে একই রেডিও টাওয়ার ব্যাবহার করে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করে যেটা পূর্বে 2G এর জন্য ব্যাবহৃত হতো।  এই নেটওয়ার্কে একইসাতে আরো কল করা সম্ভপর হয় এবং ডাটা ট্রান্সফার রেটও পূর্বের চেয়ে অনেকটা বৃদ্ধি পায়। 

 

এই নেটওয়ার্ক বর্তমানেও আমরা ব্যাবহার করে আসছি। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা ভিডিও কল, ফাইল শেয়ার, অনলাইন টিভি এবং অনলাইন গেমও খেলতে পারি।

 

 

4G বা ৪র্থ জেনারেশন

প্রতিনিয়ত ডাটা বা ইন্টারনেট দ্রুতগতির চাহিদা বাড়ছে তো বাড়ছেই। এরই ধারাবাহিকতাই তৈরি হয়েছে 4G নেটওয়ার্ক। 

 

4G নেটওয়ার্ক 3G নেটওয়ার্কের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতির। এটি 3G তুলনায় ৫গুন বেশি গতিসম্পন্ন। এটার গতি সবোর্চ্চ 100Mbps

 

 

5G বা ৫ম জেনারেশন

দক্ষিন কোরিয়া সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের মার্চ মাসে 5G অফার করে। পুরো মোবাইল ইন্ড্রাস্ট্রি এটাকে স্বাগত জানায়। এটি 4G তুলনায় অনেক উন্নত করা হয় এর ফ্রিকুয়েন্সি প্রায় 30 GHZ থেকে 300 GHz পর্যন্ত। 


এর ডাউনলোড স্পিড 4G এর তুলনায় ২০গুন বেশি। যদিও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত 5G সার্ভিস শুরু হয়নি। আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে আমরা এটি ব্যাবহার করতে পারবো। 

 

আশা করি উপরের এই আর্টিকেল থেকে ডাটা কমিউনিকেশন কি এই সম্পর্কে মোটামুটি ভালো একটি একটা ধারণা পেয়েছেন। 

এরপরও যদি কোন কিছু জানার থাকে তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করবো আপনাকে সাহায্য করার।

Leave a Comment