আপনি কি কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন বা ছুটির দিনে কোথাও ঘুরার পরিকল্পনা করছেন। যেটাই করেন না কেন আপনি বাড়ির বাহিরে গেলে নিশ্চয় ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পেতে চাইবেন। এক্ষেত্রে দুটি অপশন আপনার হাতে আছে: হয় আপনার ফোনের ডাটা ব্যবহার করা অথবা পকেট রাউটার ব্যবহার করা।
ফোনের ডাটা ব্যবহার করার ফলে আপনার ফোনের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে যেটা আপনি বাহিরে গেলে নিশ্চয় চাইবেন না। তাছাড়া ফোনের ইন্টারনেট স্পিডও আশানুরূপ পাওয়া যায়না। সেক্ষেত্রে পকেট রাউটারেরই হতে পারে আপনার একমাত্র ভরসার জায়গা। চলুন তাহলে আজকের এই আর্টিকেল আমরা পকেট রাউটার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
পকেট রাউটার কি
একটি পকেট রাউটার হলো বাসার একটি ওয়াইফাই রাউটারের মতো, তবে এটি অনেক ছোট ডিভাইস হওয়ায় পকেটে নিয়েও চলাফেরা করা যায়। এর সাথে কোনো প্রকার ক্যাবল যুক্ত থাকেনা বিধায় যেকোনো জায়গায় পকেটে করেই বহন করা যায়।
মোবাইলের সিম কার্ডের মাধ্যমে এই রাউটারে ইন্টারনেট সংযোগ করা হয় পরবর্তীতে অন্যান্য ডিভাইস যেমন মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপেও ইন্টারনেট শেয়ার দিতে পারবেন। ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে যেখানে আপনার প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা বিল দিতে হতো সেক্ষেত্রে এখানে আপনি যতটুকু ব্যবহার করবেন ততটুকুই টাকা খরচ হবে।
যারা সাধারণত খুব বেশি ঘোরাঘুরি করে তাদের জন্য এটা সেরা পছন্দ হতে পারে। এই পকেট রাউটারগুলির মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে VPN সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন। আপনার পকেট রাউটারের কনফিগারেশন এবং ডাটা প্ল্যানের উপর নির্ভর করে এটি আপনাকে 150Mbps থেকে এর বেশি স্পিডও পাওয়া যেতে পারে।
পকেট রাউটার এর সুবিধা
পকেট রাউটারের অনেক সুবিধা রয়েছে। চলুন এবার তাহলে পকেট রাউটারের কিছু সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
পকেট রাউটার মাসিক খরচ
পকেট রাউটারের একটি বড় সুবিধা হলো আপনি যে পরিমাণ খরচ করবেন সে অনুযায়ী ডাটা কিনতে পারবেন। অথাৎ আপনাকে মাসিকভাবে কোনো টাকা কাউকে দিতে হবেনা।
পকেট রাউটারগুলি pay-as-you-go ভাবে কাজ করে মানে যতটুকু ব্যবহার ততটুকু টাকা। অনেকে এমন আছেন যে একা একা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিতে গেলে হয়তো খরচ বেশি পরে যায়। তাদের জন্য এটা দূর্দান্ত হতে পারে এমনকি আপনি বাইরে গেলেও এটি পকেটে করে নিয়ে যেতে পারবেন।
পকেট রাউটার এর সংযোগ ক্ষমতা
পকেট রাউটারের আরেকটি সুবিধাজনক জায়গা হলো এটি ডিভাইস অনুযায়ী একসাথে প্রায় ৩০এর মত ডিভাইস একসাথে সংযোগ দিতে পারে। এমনকি এই সময়ে সিগন্যাল দূর্বলও হবেনা এবং গতিও কমবেনা। যেখানে হয়তো আপনি ফোনের ডাটা ব্যবহার করলে ইন্টারনেটের গতি কমে যেতো।
শক্তিশালি সিগন্যাল
পকেট রাউটারের ইন্টারনেট সিগন্যালের ক্ষমত সাধারণ মোবাইল ফোনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালি থাকে। এরফলে সাধারণ মোবাইলের ইন্টারনেটের চেয়ে এটির স্পিডও অনেক বেশি পাওয়া যায়।
ব্যাটারি সাশ্রয়
আপনার যারা মোবাইলের ডাটা ব্যবহার করেন বা হটস্পট শেয়ার করেন তারা নিশ্চয় জানেন যে মোবাইলে ডাটা ব্যবহার করলে আমাদের কি পরিমাণ ব্যাটারি পাওয়ারের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনি যদি একটি পকেট রাউটার ফুল চার্জ দিয়ে ব্যবহার করেন তাহলে ৮-১০ঘন্টা চালাতে পারবেন। অবশ্য এটি রাউটারের কোয়ালিটিভেদে ব্যাটারি ব্যাকাপের তারতম্য হবে। এছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে আপনার মোবাইলের ব্যাটারির উপর চাপ কম পড়বে।
মাল্টিটাস্কিং
আপনারা এটা জেনে থাকবেন যে আমরা যখন ফোনের ডাটা চালু করে ফোন কলের মাধ্যমে কথা বলি তখন আমাদের মোবাইলের ডাটা বন্ধ হয়ে যায়। এরফলে আপনি অনলাইনে কোনো কাজ করার সময় নিশ্চয় ফোনে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু আপনি যদি পকেট রাউটার ব্যবহার করেন তবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আপনি এই পকেট রাউটারটি যেকোনো জায়গায় নিতে পারবেন এমনকি আপনি যখন দেশের বাহিরেও ঘুরতে যাবেন তখনও সেই দেশের সিম ব্যবহার করে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পেতে পারেন।
ইউজার ফ্রেন্ডলি
এই পকেট রাউটারের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এটির ব্যবহার খুবই সহজ। এখানে জটিল কোনো হার্ডওয়্যার ইনস্টলেশনের প্রয়োজন হয়না। আপনি যখন ডাটা প্যাক কিনে এটি চালু করবেন তখন এটি আপনার নিকতম ওয়াইফাই সংযোগটি খুজে বের করবে।
শেয়ারযোগ্যতা
এটির আরেকটি সুবিধা হলো এর শেয়ারযোগ্যতা। আপনি একসাথে আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও এটা থেকে সংযোগ দিতে পারবেন। তারা একইসাথে ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, আইপ্যাডের সাথে সংযোগ করতে পারবে।
পকেট রাউটার এর ইন্টারনেট গতি
ইন্টারনেট গতি হলো পকেট রাউটারের বড় একটি সুবিধা। আপনি নরমাল একটি ফোন থেকে ইন্টারনেটের যে গতি পেয়ে থাকবেন তার থেকে পকেট রাউটারে অনেক বেশি গতি পাওয়া যাবে এটি প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।
বর্তমানে ইন্টারনেট হলো আমাদের নখদর্পণে। নির্ভরযোগ্যতা এবং গুরুত্বপূর্ণতা বিবেচনা করে বিশেষ করে আপনি যদি নিয়মিত ভ্রমণ করে থাকেন। যেখানেই ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক আছে সেখান থেকেই আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন পকেট রাউটার।
কোন কোন বিষয়গুলো দেখে পকেট রাউটার কেনা উচিত
আপনি যদি একটি পকেট রাউটার কেনার কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত। বিবেচনার জন্য কিছু বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো:
ওয়্যারলেস কভারেজ এরিয়া
যেকোনো রাউটারের জন্য ওয়্যারলেস কভারেজ এরিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পকেট রাউটার কেনার আগে আপনাকে বিবেচনা করতে হবে উক্ত রাউটারটি সর্বোচ্চ কত মিটার দূর থেকে অ্যাক্সেস করা যাবে। পকেট রাউটার মানে অবশ্য এটিও না যে সবসময় আপনি পকেটে নিয়ে বসে থাকবেন।
কেনার সময় চেষ্টা করবেন আপনার বাজেটের মধ্যে সর্বোচ্চ কভারেজ এরিয়া পাওয়া যাবে এমন একটি পকেট রাউটার কিনতে।
আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত, আপনি যখন ইন্টারনেট চালানোর জন্য ইন্টারনেট প্যাক কিনবেন তখন সেই প্যাক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে। কেননা কিছু প্যাক আছে নির্দিষ্ট মেয়াদের যেমন এক সপ্তাহ বা এক মাস। আবার কিছু প্যাক আছে বলে থাকে আনলিমিটেড। কিন্তু সমস্যা হলো তারা আনলিমিটেড বললেও নির্দিষ্ট সময় পর তারা ইন্টারনেট স্লো করে দেয়। তাই প্যাক কেনার আগে অবশ্যই এসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক প্রাপ্যতা
এখনো অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এখনো পৌছায়নি। তাই সবজায়গায় আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারিনা।
তবে মোটামুটি বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকাতেই মোবাইল অপারেটরগুলি ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
হয়তো স্থান ভেদে কোন সিমে ৩জি পাবেন বা কোনো সিমে ৪জি পাবেন। আপনি এলাকায় যে সিমের ইন্টারনেট স্পিড ভালো সেটাই ব্যবহার করতে পারবেন পকেট রাউটারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার এলাকায় যদি ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ২জি ছাড়া ৩জি বা ৪জি পাওয়া না যায় তবে আপনার জন্য এই রাউটার কোনো কাজে দিবেনা।
পকেট রাউটার এর ব্যাটারি লাইফ
নিঃসন্দেহে যেকোনো ডিভাইসের জন্য তার ব্যাটারি লাইফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর যেহেতু এটা কেনা হচ্ছে বাইরে যাবার জন্য তাই এটার জন্য এর ব্যাটারি লাইফ আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু পকেট রাউটার আপনি একবার চার্জ দিয়ে ১৩ঘন্টা পর্যন্ত একটানা চালাতে পারবেন।
ছোট পকেট রাউটারগুলির ব্যাটারি ক্ষমতা অনেক কম হতে পারে, এবং এটি যদি একাধিক ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে তাহলে আরো দ্রুত ব্যাটারি শেষ হতে পারে।
৩জি ৪জি বা ৫জি সার্ভিস
পকেট রাউটার কেনার সময় অবশ্যই এর ৩জি, ৪জি বা ৫জি সাপোর্ট করে কিনা তা জেনে নেওয়া উচিত। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫জি এর অনুমোদন পায়নি তবুও এটি সম্পর্কে জানা উচিত। কেননা আপনার এরিয়া যদি ৪জি সার্ভিসের আওতাভুক্ত থাকে আর আপনি যদি ৩জি সাপোর্টের রাউটার ক্রয় করেন তবে এটি আপনার জন্য ভালো হবেনা।
কতগুলি ডিভাইস সংযোগ করতে চান
আপনার পকেট রাউটারটিতে একই সময়ে কতগুলি ডিভাইস সংযুক্ত করতে চান সেটাও রাউটার কেনার সময় বিবেচনা করা উচিত। কেননা এমন যদি হয় আপনার পরিবারের সদস্য ৭জন সবাই মিলে রাউটার ব্যবহার করবেন বলে কিনলেন। কিন্তু বাসায় এসে দেখলেন এই রাউটারে একই সময়ে ৫জনের বেশি সংযোগ করা যায়না। তাহলে নিশ্চয় এটি আপনার জন্য বিরক্তিকর কারণ হয়ে যাবে।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাউটার পাবেন যেগুলোতে কোনটিতে ১০টি ডিভাইস সংযোগ করা যায় কোনটিতে আবার এরচেয়ে বেশিও সংযোগ করা যায়।
পরিশেষে
আপনি যদি নিয়মিত ভ্রমণ বা বাইরে কাজের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করা লাগে অথবা আপনার বাড়ি যদি গ্রাম অঞ্চলে হয়ে থাকে যেখানে এখনো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌছায়নি। পৌছালেও খরচ বেশি পরে যায় সেক্ষেত্রে পকেট রাউটার হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।
আপনি উপরোক্ত রাউটারটিও দেখতে পারবেন আশা করি হতাশ হবেন না। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।