প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বই রিভিউ। কেন কিনবেন বইটি?

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইটি বাংলাদেশি লেখক আরিফ আজাদের রচিত ইসলাম বিষয়ক ছোটগল্পের সংকলন গ্রন্থ। বইটির প্রধান চরিত্র সাজিদ তার যুক্তি, তথ্য, দর্শন এবং বিজ্ঞান দিয়ে নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের যুক্তিগুলোকে দূর্বল প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।

 

লেখক পরিচিতি

যারা টুকটাক বই পড়ে বা বইমেলা সম্পর্কে ধারণা রাখে আমার মনে হয় তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে আরিফ আজাদকে চিনেনা। কেননা আরিফ আজাদের বই মানেই যে বইমেলার বেস্ট সেলার বই। আরিফ আজাদ সম্পর্কে ডঃ শামসুল আরেফিন বলেন, লেখন আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা। 

 

গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচূর্ণ করেন। তিনি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় লেখক। আরিফ আজাদ হলেন সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা একজন লেখক। 

 

চট্রগ্রামে জন্ম নেয়া এই লেখক মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করেন চট্রগ্রাম জিলা স্কুলে। এরপর একটি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকেই উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন। লেখালেখির ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে শুরুর দিকেই বইগুলোই পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। 

 

তার প্রথম বই প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২০১৭ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায়। ২০১৯ সালে তার প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ প্রকাশিত হয়, এবং দুইটা বই ই বেস্ট সেলারে পরিণত হয়। 

 

তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে-

  • বেলা ফুরাবার আগে

  • জীবন যেখানে যেমন

  • মা, মা, মা এবং বাবা

  • প্রত্যাবর্তন

  • আরজ আলী সমীপে

  • হায়াতের দিন ফুরোলে

  • মা হওয়ার দিনগুলোতে

  • এবার ভিন্ন কিছু হোক

  • জবাব

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইয়ের কাহিনী সংক্ষেপ

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইটির লেখক আরিফ আজাদ বইটিতে নিজেকে পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে রেখেছেন, আর প্রধান চরিত্রে রেখেছেন সাজিদকে। যিনি তার ক্লাসমেট, ভালো বন্ধু এবং রুমমেট। সাজিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রো বায়োলজিতে পড়ে। সে প্রথম জীবনে ধার্মিক থাকলেও একটা সময় এসে এগনোষ্টিক হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে স্রষ্টার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে সম্পূর্ণ নাস্তিক হয়ে গেছিলো। একদিন লেখক আরিফ আজাদের সাথে সৃষ্টিকর্তা নিয়ে বিভিন্ন কথা হয়, লেখক সাজিদকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে সৃষ্টিকর্তা বলে আদতে কেউ একজন আছে। 

 

পরবর্তীতে সে আবার ইসলামে ফিরে আসে, আর এই ফিরে আসা কোনো স্বাভাবিক ফিরে আসা ছিলোনা। কেননা একজন সাধারণ মুসলিম আর নাস্তিক থেকে মুসলিম হওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সে সব জেনে বুঝে অন্তর থেকে সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারছে। আর একারণেই সে সবার থেকে আলাদা। সবার থেকে তার জ্ঞান, যুক্তি ছিলো উঁচু পর্যায়ের। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই সে ইসলাম সম্পর্কে সন্ধিহান সকল ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। লেখক এখানে তার এসব উত্তরগুলি নিয়েই এই বইটি তৈরি করেছেন।

 

সাজিদের সাথে মফিজুর রহমান স্যারের কথোপকথন

আমরা অনেকেই হয়তো আমাদের ভাগ্য নিয়ে সন্ধিহান থাকি। আল্লাহ তো সবকিছু আগেই থেকেই লিখে রাখছে তারমানে যা হওয়ার তাই হবে। ভাগ্যে থাকলে জান্নাত পাবো না থাকলে নাই। এই পসঙ্গ নিয়েই কথা বলেছিলো সাজিদের মাইক্রোবায়োলজির শিক্ষক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন-

 

সষ্ট্রা অনেক আগে থেকেই আমাদের তাকদির লিখে তা আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এখন আমরা সেটাই করি, যা স্রষ্টা সেখানে লিখে রেখেছেন। আবার, দিনশেষে, এই কাজের জন্য কেউ জান্নাতে যাচ্ছে, কেউ জাহান্নামে। কিন্তু কেন? এখানে মানুষের তো কোনো হাত নেই। ম্যনুয়ালটা স্রষ্টার তৈরি। আমরা তো জাস্ট একজন পারফর্মার। স্ক্রিপ্ট রাইটার তো স্রষ্টা। স্রষ্টা এরজন্য আমাদের কাউকে জান্নাত, কাউকে জাহান্নাম দিতে পারেন না। তাই তো হওয়ার কথা তাইনা?

 

অন্য একটি জায়গায় মফিজুর রহমান স্যার একদিন সাজিদকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বাবা আইনষ্টাইন, তুমি কি বিশ্বাস করো আকাশ বলে কিছু আছে?

সাজিদ বললো, জ্বি স্যার, বিশ্বাস করি। তখন স্যার বললেন, আদতে আকাশ বলে কিছুই নেই। আমরা যেটাকে আকাশ বলি, সেটা হচ্ছে আমাদের দৃষ্টির প্রান্তসীমা। মাথার উপরে নীল রঙা যে জিনিসটা দেখতে পাও, সেটাকে মূলত বায়ুমন্ডলের কারণেই নীল দেখায়। চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই বলে চাঁদ থেকে আকাশকে কালো দেখায়। 

 

স্যার আবার বললেন, তাহলে বুঝলে তো আকাশ বলে যে কিছুই নেই। স্যার এবার তার আসল পয়েন্টে এসে বললো, কোরানের কিছু বাণী উদ্ধৃত করে বললো কতো উদ্ভোদ এইসব জিনিস(নাওজুবিল্লাহ)। কোরানে বলা আছে,

 

আর আমরা আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ। অথচ, তারা আমাদের নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। সূরা আল-আম্বিয়া-৩২

 

উক্ত আয়াতের পরিপেক্ষিতে তিনি বললেন, তোমাদের আল্লাহ বলেছে, আকাশ নাকি সুরক্ষিত ছাদ। 

 

এরকম প্রত্যেকটি প্রশ্নের যথাযথ জবাব সাজিদ দিয়েছে কোরান এবং বিজ্ঞানের আলোকে। তাদেরকে এক পর্যায়ে বোঝাতে সক্ষম হয় যে তারা কোরানের বিরুদ্ধে যে সব যুক্তি দাঁড় করায় তা নিতান্তয় দূর্বল।

 

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইয়ের কিছু তথ্য

বইয়ের নামঃ প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ

লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ

প্রকাশকঃ গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

প্রকাশ কালঃ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

প্রচ্ছদঃ কাজী যুবায়ের মাহমুদ

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৭২

মূল্যঃ ৩০০ টাকা

ISBN: 9789849295907

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪.৬/৫

 

প্রাপ্তিস্থান: প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ


প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২

 

পরিশেষে আমি শুধুমাত্র এতটুকুই বলতে চাই যে আপনি মুসলিম হোন বা না হোন প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইটি আপনার একবার পড়া উচিত। বর্তমানে কিছু বিজ্ঞানমনস্ক নামধারী ব্যক্তি বিজ্ঞান দ্বারা ধর্ম বা কোরানকে প্রশ্নের সম্মুখিন করতে চায়। তারা সেই বিজ্ঞান দিয়ে কোরানের ভুল ধরতে চায় যে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। 


বিজ্ঞানের ব্যাপারে একটা কথা না বললেই নয়, পৃথিবী আর সূর্য নিয়ে প্রথম ধারনা দিয়েছিলেন গ্রিক জ্যোতির বিজ্ঞানি টলেমি। কিন্তু টলেমি বলেছিলো সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে। কিন্তু আসলেও কি তাই, আমরা এখন ছোট বড় সবাই জানি যে সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীই আসলে ঘুরছে। 


কিন্তু একটা বিষয় কি জানেন তার এই ভুল থিওরি কিন্তু টিকে ছিলো ২৫০ বছর। অর্থাৎ ঐ ২৫০ বছরে যারা মৃত্যবরণ করছে তারা সবাই এটা জেনে মারা গেছে যে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘুরছে। 


বিজ্ঞানের ব্যাপারটা এমন যে তোমাকে ঠিক ততক্ষণ বিশ্বাস করবো, যতক্ষণ না তোমার চেয়ে অথেনটিক কিছু সামনে না আসে। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

Leave a Comment