ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো

আপনি কি ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য একটা ল্যাপটপ কিনতে চাচ্ছেন এবং ভাবছেন ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। বাজারে অনেক ধরনের ল্যাপটপ আছে কিন্তু সেখান থেকে সেরাটা বাছাই করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। 

 

ফ্রিল্যান্সিং পেশা দিন দিন বিস্তার লাভ করছে এবং অনেকেই এই পেশায় আগ্রহ প্রকাশ করছে। এই পেশায় WFH (Work from home) সুবিধা রয়েছে যার কারণে সবাই এটা পছন্দ করে। কিন্তু এই কাজের জন্যও আপনাকে মোটামুটি একটি প্রস্তুতি নিতে হবে। 

বাড়ি থেকে কাজ করা বেশিরভাগ লোকই একটি ভালো ইন্টারনেট সংযোগ এবং একটি ভালো কম্পিউটারের উপর নির্ভর করে। কেননা এর উপরই নির্ভর করে ডিজাইন সফ্টওয়্যারের পারফরমেন্স, ভিডিও কল এবং প্রজেক্টের সাথে জড়িত অন্যান্য কাজ। 

 

তাই আপনাকে ল্যাপটপ কিনতে হলে সবগুলো বিষয়ের উপরই নজর দিতে হবে।

 

কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত

ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ল্যাপটপের কিছু বিষয়ের উপর পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ল্যাপটপ নাকি ডেক্সটপ কোনটি নিবেন এবং কেন নিবেন সবকিছু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারবো ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো হবে।  সেরকম কিছু বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো:

 

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ল্যাপটপ সাইজ

ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ল্যাপটপের সাইজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু আপনি ডেক্সটপ কেনা বাদ দিয়ে ল্যাপটপ ক্রয় করছেন তাই এর সাইজের দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। একটি ছোট স্লিম ল্যাপটপ সহজে বহনযোগ্য, ভ্রমণ এবং চাকুরীর জন্যও আদর্শ।

 

ফ্রিল্যান্সিং কাজের পাশাপাশি যদি আপনাকে ঘন ঘন বাইরে ভ্রমণ করতে হয় তবে পাতলা, হালকা ওজনের ল্যাপটপগুলো পছন্দ করা উচিত। 

 

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ল্যাপটপ প্রসেসর

প্রসেসরের কোরগুলো নির্দেশ করে যে আপনার ল্যাপটপগুলো কেমন দ্রুত কাজ করবে এবং এটা কতটা মাল্টিটাস্কিং করতে পারবে। একটি ল্যাপটপের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ তে বিভিন্ন সংখ্যার কোর থাকে। যত বেশি কোর, ল্যাপটপ তত দ্রুত এবং আরো ভালো পারফরমেন্স এর সাথে কাজ করবে।

 

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ল্যাপটপ র‌্যাম

 

র‌্যানডম অ্যাক্সেস মেমোরি বা র‌্যাম ল্যাপটপের স্মুথ কাজ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাপটপগুলিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা সাউন্ড ডিজাইনের মতো জটিল কাজগুলো করতে র‌্যাম ব্যবহৃত হয়। র‌্যামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে ল্যাপটপটি স্লো কাজ করবে। তাই ল্যাপটপ কেনার আগে অবশ্যই পর্যাপ্ত গিগাবাইট আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। 

 

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ল্যাপটপ ডিসপ্লে

ল্যাপটপে যদি গ্রাফিক্স ডিজােইনের মত কিছু জটিল কাজ নাও করা হয় তারপরও পর্যাপ্ত ডিসপ্লে থাকা জরুরী। যারা সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফটোগ্রাফার, ভিজ্যুয়াল মিডিয়া বা ভিডিও এডিটিং নিয়ে কাজ করে তাদের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন গ্রাফিক্স কার্ডসহ ভালো মানের ডিসপ্লে প্রয়োজন হবে।

 

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ল্যাপটপ ব্যাটারি

আপনি সবসময় যদি বিদ্যুৎ এর কাছাকাছি না থাকেন তবে নির্ভরযোগ্য একটি ব্যাটারি আপনার জন্য অপরিহার্য। সাধারণত ল্যাপটপের স্পেসিফিকেশনেই এই তথ্যটি থাকে যে শুধুমাত্র ব্যাটারির উপর নির্ভর করেই এই ল্যাপটপটি কতক্ষণ সার্ভিস দিতে পারবে। তাই আপনার চাহিদা মেটাতে পারবে এমন একটি ল্যাপটপই আপনাকে নির্বাচন করতে হবে।

 

কানেকশন পোর্ট

ল্যাপটপে যদি সকল কানেকশন পোর্ট না থাকে এবং কানেকশনের জন্য কোনো কনভার্টারের উপর নির্ভর করতে হয় তাহলে ব্যাপারটা হবে আসলেও যন্ত্রনাদায়ক। তাই কিছু কমন পোর্টগুলো ল্যাপটপে বিদ্যমান আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন। পোর্টগুলোর মধ্যে হতে পারে HDMI port, card readers port, portable solid-state drive অথবা ethernet cable এর মত পোর্টগুলো। 


একটি ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে এবং এই বিষয়গুলোর উপর ভিত্তিতেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এছাড়া আপনি কম্পিউটার কেনার গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তারি জানতে ভিজিট করতে পারেন।

 

ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য কয়েকটি ল্যাপটপ

আমরা ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ল্যাপটপের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন এগুলোর উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো হবে, তা আলোচনা করবো। ল্যাপগুলোর দাম আমি উল্লেখ করিনি কারণ এর দাম যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে তাই আপনি বর্তমান দাম জানতে Star Tech অথবা Ryans Computer ওয়েবসাইট গুলোতে ভিজিট করতে পারেন। চাইলে নিকটস্থ দোকানেও গিয়ে জেনে আসতে পারেন।

 

Apple Mackbook Pro

কথা যখন আসছে ভালো ল্যাপটপ সে যে কাজেই হোক না কেন, সেখানে অ্যাপলের নাম আসবেনা তা তো হতে পারেনা।  একটি SD স্লট, HDMI পোর্ট, mic/headphone জ্যাক, ৩টি USB পোর্ট, একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং হাই ডেফিনেশন ডিসপ্লে নিয়ে তৈরি। Mackbook pro একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য ল্যাপটপ। 

 

এই শক্তিশালী ল্যাপটপটি বিস্তারিত ভাবে ভিডিও এডিটিং অথবা যে কোনো এডিটিং এর কাজ এবং মাল্টিটাস্কিংগুলো স্মুথলি করতে পারে। 

 

২০২৩ এর মডেলের ল্যাপটগুলো আরো অনেক বেশি শক্তিশালী, কিন্তু এদের দামও অনেক বেশি হবার কারণে অনেকের  সামর্থ্যের বাইরে চলে যায়। এক্ষেত্রে ২০২১ এর মডেলেরগুলো কেনা যেতে পারে এগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে হাতের নাগালে।

 

Apple Mackbook Air

Apple এর M2 প্রসেসর দ্বারা তৈরি সর্বশেষ ল্যাপটপ হলো MacBook Air, এটি বেশিরভাগ মানুষের জন্য সেরা ল্যাপটপ। এর ভিতরে থাকা M2 প্রসেসরটি  M1 Pro বা M1 Max এর মত এত ফাস্ট বা শক্তিশালী নয় তবে এটি এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। 

 

এই ল্যাপটপটির মধ্যে রয়েছে ৮জিবি মেমরি, ২৫৬ জিবি স্টোরেজ, ৮কোর এর সিপিইউ এবং ৮জিবি গ্রাফিক্স কার্ড। 

 

ব্যবহারকারীদের মতামত অনুযায় এটা অনেক ভারি ভারী ভারী কাজ করতে পারে কোনো রকম গরম বা স্লো হওয়া ছাড়াই। ল্যাপটপটি অনেক পাতলা এবং হালকা যা আপনাকে বহন করতে বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে।

 

HP Pavilion 15

HP Pavilion 15 হলো HP এর ফ্ল্যাগশিপ এন্ট্রি লেভেল ল্যাপটপ। কিন্তু এন্ট্রি লেভেল মানেই যে এটি নিয়ে আপনাকে ভুগতে হবে, সেই সুযোগ নেই। 

 

আপনি যদি চিন্তা করতে থাকেন যে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো হবে তাহলে আপনি এটি নির্ধিদায় নিয়ে নিতে পারেন। এই ল্যাপটপটি দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি সাধারণ ভিডিও এডিটিং এবং স্ট্রিমিংয়ের কাজগুলোর জন্য যথেষ্ট কার্যকরি। এতে ১ টেরাবাইট হার্ডড্রাইভ রয়েছে যা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস রাখার জন্য পারফেক্ট। 

 

এছাড়াও এতে ডেডিকেটেড হাই এন্ড গ্রাফিক্স কার্ড, ১৬জিবি পর্যন্ত র‌্যাম, ফুল সাইজ কিবোর্ড, দ্রুত চার্জি সিস্টেম, সারাদিনের ব্যাটারি লাইফ এবং ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি ডিসপ্লে রয়েছে। 

 

বাজেট অনুযায়ী এটা আপনার জন্য খুব ভালো চয়েস হতে পারে।

 

Samsung Galaxy Book S

এই ল্যাপটপটিকে আপনি বেশ কয়েকটি কারণে আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। ল্যাপটপটি দেখতে স্লিম এবং ওজনে হালকা যেটা আপনার ভ্রমণের সময় বাড়তি সুবিধা দিবে। এটি ২৩ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাটারি লাইফ যার কারণে এটা সবার কাছে পছন্দসই একটি ল্যাপটপ। 

 

Samsung Galaxy Book S ল্যাপটপটি অ্যালুমিনিয়াম চ্যাসিস দিয়ে তৈরির কারণে এর ওজন মাত্র ৯৬০গ্রাম। ল্যাপটপটি উচ্চমানের প্রসেসরের কারনে এখানে কোনো ফ্যান ব্যবহারের প্রয়োজন পরেনি। এটি চলার সময় কোনো সাউন্ড করেনা এমনকি আপনি কোলে নিয়ে চালালেও গরম অনুভব হবেনা। 

 

Acer Aspire 5

Acer Aspire 5 এ এমন কিছু রয়েছে যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং কাজের খুবই সহায়ক হবে। এটি বিভিন্ন কানেক্টর পোর্ট একটি ৮ঘন্টা ব্যাকাপ দেবার মত ব্যাটারি রয়েছে। ৪জিবি র‌্যাম দ্বারা ল্যাপটপটি বিল্ড করা হয়েছে চাইলে অতিরিক্ত স্লটে আরেকটি ব্যাম ব্যবহার করতে পারবেন। 

 

উইন্ডোজ ১১ চালানোর জন্য ল্যাপটপটি কনফিগার করা হয়েছে, একটি নিরাপদ অপরেটিং সিস্টেম যা শুধুমাত্র মাইক্রোসফ্ট স্টোরের অ্যাপ ব্যবহার করে। তবে এটা কারো কারো জন্য সমস্যার হতে পারে সেক্ষেত্রে এই বৈশিষ্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে রাখা যেতে পারে।

 

Dell Inspiron 15

Dell বর্তমানে পুরো বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি। এটি অনেক ক্রেতার প্রথম পছন্দ। আমি নিজেও একজন ডেল ব্যাবহারকারী। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলি তাহলে বলা যায় ডেল আপনাকে হতাশ করবেনা। 

 

উপরের ল্যাপটপগুলোর মধ্যে Dell Inspiron 15 হলো সবচেয়ে সাশ্রয়ী মুল্যের ল্যাপটপ। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে যদি বাজেট নিয়ে কোনো ইস্যু থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি Dell Inspiron 15 ল্যাপটপটি বিবেচনা করতে পারেন। এর বেশ কয়েকটি মডেল বাজারে অ্যাভেইলেবল রয়েছে আপনি আপনার বাজেট এবং চাহিদা অনুযায়ী আপনারটি বেছে নিতে পারেন। 

 

এই ছিলো ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো সেটা সম্পর্কে কিছু কথাবার্তা। আশা করছি আপনি এখান থেকে কিছুটা আইডিয়া পেয়েছেন, এবং বুঝতে পারছেন ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো হবে। 

 

যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার, আমরা আপনাকে সাহায্য করার সর্বাত্নক চেষ্টা করবো।

Leave a Comment