বিগ ডাটা কি? বিগ ডাটা এর গুরুত্ব

বর্তমানে আমরা তথ্য প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং ডাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। কোনো কিছু ক্রয় করতে গেলে আমরা যেমন আগে ইন্টারনেটে সার্চ করে পণ্যটির বিস্তারিত জেনে নেই তেমনিভাবে কোনো কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যও আমরা ইন্টারনেটকে ব্যবহার করি। এভাবে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হচ্ছে। এই আর্টিকেলে আমরা জানার চেষ্টা করবো বিগ ডাটা কি এবং এর আদ্যপ্রান্ত।

 

বিগ ডাটা কি

সামাজিকভাবে যদি বিগ ডাটার সংজ্ঞা দেওয়া যায় তাহলে বলা যায়, বিগ ডাটা হলো সেই সকল ডাটা যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার পোস্ট, স্বাস্থ্য, ফিটনেস, চ্যাটিং, অনলাইন কেনাকাটা থেকে উৎপন্ন বিপুল পরিমাণ তথ্য। 

 

অন্যভাবে বলা যায় যে, বিগ ডাটা হলো ডাটার একটি সংগ্রহ যা আয়তনে বিশাল, এবং এটি সময়ের সাথে সাথে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি ডাটার এত বৃহদাকার অবস্থা যা কেউ ই এটা ম্যানেজমেন্ট, সংরক্ষণ এবং প্রসেস করতে পারেনা। 

 

ইন্টারনেটের এর সহজলভ্যতা এর সংযোগ, গতিশীলতা এবং বিভিন্ন IoT ডিভাইসের ব্যবহার, সেই সাথে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মত প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ডাটা দ্রুত হারে বাড়ছে। যেহেতু ডাটাসমূহ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই এই ডাটাসমূহ প্রসেস করে কাজে লাগিয়ে অধীক মুনাফা লাভ অর্জন করতে। 

 

বিগ ডাটা সাধারণত সম্ভাব্যতা, মেশিন লার্নি, এবং অন্যান্য অ্যাডভান্স অ্যানালিটিকস সমস্যা সমাধানের জন্য এবং ইনফরমেটিভ সিন্ধান্ত নিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

 

আজ এখানে বিগ ডাটা কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

 

বিগ ডাটা এর উদাহরণ

বিগ ডাটা অগণিত উৎস থেকে আসতে পারে যেমন এর কিছু উদাহরণ হলো ট্রান্সজেকশন সিস্টেম, কাস্টমার ডাটাবেজ, ডকুমেন্টস, ইমেইল, মেডিক্যাল রেকর্ডস, মোবাইল অ্যাপস এবং সোস্যাল নেটওয়ার্কস। এখানে বিভিন্ন ধরনের ডাটা সংযুক্ত থাকে যেমন মেশিন জেনারেটেড এর নেটওয়ার্ক, সার্ভার লগ ফাইল এবং ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিন। IoT ডিভাইসের সেন্সস থেকে প্রাপ্ত ডাটাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

 

অভ্যন্তরীণ সিস্টেম ছাড়া অনেক বড় বড় সেক্টর যেমন শেয়ার বাজার, আবহাওয়া অধিদপ্তর, ভৌগলিক পরিস্থিতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে বৃহদাকার ডাটা জমা হয় প্রতিনিয়ত। ইমেজ, ভিডিও, অডিও ফাইলসমূহ ক্রমাগত প্রসেস হয় এবং স্টোর হয়। 

 

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টেরাবাইট নতুন ডাটা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ডাটাবেজে স্টোর হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের ডাটা হতে পারে যেমন, ইমেজ, ভিডিও, অডিও, মেসেজ আদান-প্রদান, কমেন্টস ইত্যাদি। 

 

একটি সিঙ্গেল Jet Engine মাত্র ৩০মিনিট ফ্লাইট সময়ের মধ্যে প্রায় ১০ টেরাবাইট এর অধিক ডাটা তৈরি করতে পারে। এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার ফ্লাইটের মাধ্যমে, অনেক পেটাবাইট পর্যন্ত ডাটা তৈরি হয়।

 

বিগ ডাটা এর প্রকারভেদ

বিগ ডাটা মূলত তিন প্রকার, আমরা এবার এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। তাহলে বিগ ডাটা কি এ সম্পর্কে আমাদের আরো পরিষ্কার ধারণা হবে। 

 

বিগ ডাটার ধরণ নিম্নরূপ:

 

  • Structured

  • Unstructured

  • Semi-structured

 

Structured ডাটা

ফিক্সড ফরম্যাটে সংরক্ষিত, অ্যাক্সেস এবং প্রসেস করা যে কোনো ডাটাকেই মূলত ‍structured ডাটা বলে। সময়ের সাথে সাথে কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রতিভা বিকাশের ফলে বর্তমানে এসব ডাটা থেকে আরো বেশি সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। 

 

যাইহোক, আজকাল আমাদের ডাটার পরিমাণ এত পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে যেটা হিসাব করতে জেটাবাইটের প্রয়োজন হচ্ছে। আপনি কি জানেন জেটাবাইট কি? এক জেটাবাইট = এক বিলিয়ন টেরাবাইট  

 

এই দিকে লক্ষ দিলেই বোঝা যায় যে কেন এটির নাম বিগ ডাটা দেওয়া হয়েছে। এই এত পরিমান ডাটা স্টোরেজ এবং প্রসেস করার চ্যালেঞ্জগুলোও নিশ্চয় কল্পনা করতে পারছেন। 

 

একটি রিলেশনাল ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সংরক্ষিত ডাটা হলো structured ডাটার সর্বকৃষ্ট উদাহরণ।

 

Unstructured ডাটা

অজানা কোনো ফর্মে সংগঠিত ডাটাসমূহকেই ‍unstructure ডাটা বলে। এর আকার বিশাল হওয়া ছাড়াও এই unstructured ডাটা থেকে বেনিফিট পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রসেস করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। Unstructured ডাটার উদাহরণ হলো বিভিন্ন উৎস থেকে আসা ডাটা যেমন সাধারণ টেক্সট ফাইল, ইমেজ, ভিডিও এর সংমিশ্রণ। 

 

বর্তমানে এমন অনেক অর্গানাইজেশন রয়েছে যাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে ডাটা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তারা জানেনা কিভাবে এই ডাটা থেকে বেনিফিট পাওয়া যায়। কারণ হয়তো তাদের কাছে ডাটাগুলো raw ফর্মে, বা unstructured অবস্থায় রয়েছে।

 

Semi-structured ডাটা

Semi-structured ডাটাতে ডাটার উভয় ফর্মেই থাকতে পারে। আমরা semi-structured ডাটাকে structured এর মত দেখতে পাই কিন্তু এটি প্রকৃত ‍structured ডাটা নয়। কেননা ‍structured ডাটাকে যেমন সংজ্ঞায়িত করা হয় RDBMS এ তেমনিভাবে থাকেনা।

 

Semi-structured ডাটার একটি উদাহরণ হলো একটি XML ফাইলের উপস্থাপিত ডাটা।

 

বিগ ডাটা এর বৈশিষ্ট

চলুন বিগ ডাটার বৈশিষ্ট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নিচে এর বৈশিষ্টসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

 

  • Volume

  • Velocity

  • Variety

 

বিগ ডাটা এর Volume

বিগ ডাটার সবচেয়ে সাধারণ বৈশিষ্ট হলো এর volume। আমরা ডাটাকে বিভিন্নভাবে পরিমাপ করতে পারি যেমন গিগাবাইট, টেরাবাইট, জেটাবাইট বা ওট্টাবাইট। বর্তমানে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল লেভেলে ডাটার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে ৪০ জেটাবাইট ডাটা তৈরি হয়েছিলো যা ২০০৫ সাল থেকে প্রায় ৩০০গুন। 

 

পূর্বে এই বিপুল পরিমাণ ডাটা সংরক্ষণ এবং প্রসেস করার সমস্যা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সমস্য উৎস থেকে আসা ডাটাগুলি Hadoop এর মত ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম ব্যবহার করে সুসংগঠিত থাকে। ডাটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য এর volume সম্পর্কেও বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, একটি ডাটা বিগ ডাটা কিনা তা বোঝার জন্য volume ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

বিগ ডাটা এর Velocity

Velocity বলতে কত দ্রুত ডাটা প্রসেস হয় সেটাকে বোঝায়। ডাটার সম্প্রসারণ এবং এর তাৎপর্য আমাদের ডাটা সম্পর্কে চিন্তা করার ধরন বদলে দিয়েছে। আমরা আসলে ব্যবসায়ীক কাজে ডাটাকে অবমূল্যায়ন করতাম। কিন্তু বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ডাটা ব্যবহার করেই তার ব্যবসায় সাফল্য বয়ে আনছে।

 

Velocity কেবলমাত্র কত দ্রুত ডাটা সিস্টেমে প্রবেশ করছে তা পরিমাপ করে। বর্তমানে ডাটা প্রায়শই রিয়েল টাইম বা এর কাছাকাছিভাবে উৎপাদিত হয়। এজন্য এটা সরাসরি কোন অর্থবহ প্রভাব রাখতে পারেনা। তাই এটি থেকে বেনিফিট পেতে অবশ্যই এটি প্রসেস, অ্যাক্সেস এবং অ্যানালাইজ করা গুরুত্বপূর্ণ। 

 

বিগ ডাটা এর Variety

ডাটা ভিন্নধর্মী, এটি বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে এবং এটি ‍structure, unstructured এবং semi-structured হতে পারে। আরো কিছু structure ডাটা যেমন স্প্রেডশিট বা রিলেশনাল ডাটাবেজ এখন unstructured ইমেজ, অডিও, ভিডিও ফাইল বা সেন্সর ডাটার মত semi-structured ডাটাগুলিকে একটি নির্দিষ্ট ডাটা স্কিমাতে সংগঠিত করা যায়না। 

 

পূর্বে বিভিন্ন ডাটা এক্সেল ফাইল, সিএসভি ফাইল বা এরূপ ফাইলের মাধ্যমে শেয়ার করা হত কিন্তু বর্তমানে ভিডিও, পিডিএফ, গ্রাফিক্সসহ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার মত প্রযুক্তির মাধ্যমে দেয়া শেয়ার করা হচ্ছে। যদিও এটি আমাদের জন্য সহায়ক কিন্তু এটি ম্যানেজ করা বা প্রসেস করার জন্য আমাদের আরো শ্রম বা অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি প্রয়োজন।

 

বিগ ডাটার গুরুত্ব

ডিজিটাল বাংলাদেশে দিন দিন বিগ ডাটার গুরুত্ব বাড়ছে। যত দিন যাবে বিগ ডাটার গুরুত্ব তত বাড়তে থাকবে। চলুন তাহলে বিগ ডাটার গুরুত্ব বা এর বেনিফিট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, তাহলে বিগ ডাটা কি এ সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে।

 

বিগ ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ কমানো

যখন একটি কোম্পানিকে প্রচুর ডাটা স্টোর করতে হয় তখন Apache Hadoop, Spark এর মত বড় ডাটা প্ল্যাটফর্মগুলি খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবসাগুলিকে অপারেশন পরিচালনার জন্য আরও দক্ষ পদ্ধতি খুঁজে পেতে সাহায্য করে। 

 

এটি একটি ব্যাবসার বটম লাইনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। একটি ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্য রিটার্নের সম্ভবনা অনুমান করে রিটার্ন খরচ কমানোর জন্য বড় ডাটা অ্যানালাইসিস করতে পারে। তারপর তারা পণ্য রিটার্ন ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। 

 

বিগ ডাটা ব্যবহার করে মার্কেট অ্যানালাইসিস

বিগ ডাটা মার্কেট অ্যানালাইসিস করার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি বাজারের বর্তমান অবস্থা বুঝতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের ক্রয়ের ধরণগুলি নিয়ে স্ট্যাডি করে ব্যবসাকে সর্বাধিক লাভজনক করতে সক্ষম করে।

 

এই মার্কেট অ্যানালাইসিস করে এজন ব্যবসায়ীক তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাড়িয়ে যেতে পারে। বর্তমানে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ব্যবসাকে আরো বিস্তার করতে বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস করে সেই অনুযায়ী কাজ করে থাকে।

 

বিগ ডাটা ব্যবহার করে উন্নত সিদ্ধান্ত গ্রহণ

একটি ডাটা ড্রাভেন প্রতিষ্ঠানের জন্য বিগ ডাটা হলো মূল উপাদান। আপনি যখন বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস করতে পারবেন তখন এখান থেকে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কার্যকরী এবং সময় উপযোগি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

 

বিগ ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা

বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস করার জন্য আধুনিক টুলসগুলি ব্যবহার করে ডাটা সাইন্টিক এবং ডাটা বিশ্লেষকরা বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে অ্যানালাইসিস করতে পারছে। এর ফলে তারা সেখান থেকে দ্রুত আউটপুট বের করতে পারে। এতে করে ক্রেতার চাহিদা সম্পর্কে একধরনের ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট তৈরি করে ব্যবসার সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভপর হয়।

 

বিগ ডাটা উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখে

বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস করে বাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। কেননা ক্রেতারা আপনার পণ্য এবং সার্ভিস সম্পর্কে কি ভাবেন তা সম্পর্কে আপনি আইডিয়া পাবেন। আমাদের ব্যবসাকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই বর্তমান বাজার এবং ক্রেতার চাহিদার দিকে নজর দিতে হবে। 

 

বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস করার পরে আপনার পণ্যের আপডেটের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবেন। এরফলে বাজারে আপনার পণ্যের চাহিদা বাড়বে। একইভাবে বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস আপনাকে নতুন পণ্য তৈরিতেও উদ্বুদ্ধ করবে।

 

বিগ ডাটা ব্যবহার করে জালিয়াতি সনাক্ত করা

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এর সুবিধা যেমন আমরা ভোগ করছি, ঠিক তেমনিভাবে কিছু অসাধু ব্যক্তি এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন জালিয়াতি করে যাচ্ছে। আর এই বিগ ডাটা এই সকল জালিয়াতি সনাক্ত করতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

 

এটি প্রাথমিকভাবে আর্থিক এবং পাবলিক সেক্টরের জালিয়াতি সনাক্তে ব্যবহৃত হয়। ডাটা বিশ্লেষকরা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে থাকে। 

 

কিছু লেনদেনের ধরন ও অনিয়ম আমাদের সম্ভাব্য জালিয়াতির বিষয়ে ইঙ্গিত দেয় যার মাধ্যমে আমরা পূর্বে থেকে সতর্ক হতে পারি।

 

বিগ ডাটা কিভাবে কাজ করে

আমাদের বিগ ডাটা কি এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বুঝতে হলে এর কাজ সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। বিগ ডাটার একটি কেন্দ্রিয় কনসেপ্ট হলো কোনো কিছুতে যত বেশি আপনার কাছে দৃশ্যমান থাকবে তত বেশি আপনি কার্যকরভাবে আরো ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এছাড়া সেটি আরো উন্নত করতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন। ফলে আপনার ব্যবসায়িক মডেল উন্নত হয়ে ব্যবসায় দ্রুত লাভবান হতে পারবেন। 

 

বিগ ডাটা নিয়ে কাজ করার জন্য তিনটি প্রধান অ্যাকশন প্রয়োজন:

 

Integration: বিগ ডাটা টেরাবাইট আকারে বা কখনো কখনো পেটাবাইটেও সংগ্রহ করা হয়। অনেকগুলি উৎস থেকে র’ডাটা সংগ্রহ হয়ে থাকে যেগুলো অবশ্যই রিসিভ, প্রসেস এবং অন্য ফরম্যাটে ট্রান্সফার করার প্রয়োজন হবে। পরবর্তীতে এই ডাটাগুলি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে অ্যানালাইজ করতে হবে। 

 

Management: বিগ ডাটার জন্য বড় স্টোরেজ প্রয়োজন সেটা অন-প্রিমিসেস বা ক্লাউড যেটাই হোক না কেন অথবা দুটোই হতে পারে। যে কোনো ফর্মে ডাটা সংরক্ষণ করতে হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলি স্কেলাবিলিটির সুবিধা নিতে ক্লাউড কম্পিউটিং এর দিকে ঝুঁকছে। 

 

Analysis: বিগ ডাটার চূড়ান্ত ধাপ হলো এটি অ্যানালাইসিস করা। অ্যানালাইসিস ছাড়া এই ডাটার কোনো মূল্য নেই। ডাটা অ্যানালাইসিস করে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায় যেমন চার্ট, গ্রাফ এবং ড্যাসবোর্ডের মত ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরিতেও আজকাল অনেক ভালো ভালো টুলস পাওয়া যায়।

 

বিগ ডাটা কিভাবে স্টোর এবং প্রসেস হয়

বিগ ডাটা কি এ সম্পর্কে বুঝতে গেলে এর স্টোরেজ ব্যবস্থা এবং প্রসেসিং সিস্টেমটাও জানা জরুরী। বিগ ডাটা প্রায়ই ডাটা লেক এ সংরক্ষণ করা হয়। যদিও ডাটা এর ওয়ারহাউসগুলি সাধারণত রিলেশনাল ডাটাবেজের উপর নির্মিত হয় এবং শুধুমাত্র স্ট্র্যাকচার্ড ডাটা ধারণ করে। ডাটা লেকগুলি Hadoop ক্লাস্টার, ক্লাউড অবজেক্ট স্টোরেজ সার্ভিস, NoSQL ডাটাবেজ বা অন্যান্য বড় প্ল্যাটফর্ম এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ডাটা টাইপস কে সাপোর্ট করতে পারে। 

 

অনেক বিগ ডাটার পরিবেশ একটি ডিস্ট্রিবিউটেড আর্কিটেকচারে একাধিক সিস্টেমকে একত্র করে। যেমন একটি কেন্দ্রিয় ডাটা লেক অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সাথে একত্রিত হতে পারে। এর সাথে রিলেশনাল ডাটাবেস বা ওয়্যারহাউসও সংযুক্ত থাকতে পারে। 

 

 বিগ ডাটা সিস্টেমে ডাটাকে র’ডাটা হিসেবে রেখে দেওয়া যেতে পারে। পরবর্তীতে ব্যবহারের উপর নির্ভর করে প্রয়োজন অনুসারে ফিল্টার করে অর্গানাইজ করা যেতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ডাটা মাইনিং টুলস এবং ডাটা প্রস্তুতকরণ টুলস ব্যবহার করে ডাটা প্রি-প্রসেস করা হয় তাই এটি নিয়মিত রান করার জন্য প্রস্তুত থাকে। 

 

বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস করার জন্য দরকার পরে খুব শক্তিসম্পন্ন কম্পিউটিং সিস্টেম। আর সাশ্রয়ী উপারে এই ধরনের কাজ করা খুবই চ্যালেঞ্জ। তাই ক্লাউড বড় স্টোরেজের জন্য একটি জনপ্রিয় লোকেশন। প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের নিজস্ব ক্লাউড বেজড সিস্টেম স্থাপন করতে পারে বা ক্লাউড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিগ ডাটার সার্ভিস অফারগুলি ব্যবহার করতে পারে।

 

বিগ ডাটা ইমপ্লিমেন্ট এর চ্যালেঞ্জসমূহ

যদিও আমরা এতক্ষনে বুঝতে পেরেছি যে বিগ ডাটার অনেক সুবিধা রয়েছে তবে এটি ব্যবহারে বেশ কিছু সমস্যারও সম্মুখিন হতে হয়। তাই প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। 

 

নিচে কিছু কম চ্যালেঞ্জসমূহ উল্লেখ করা হলো:

 

Lack of data talent and skills: এত বিপুল পরিমাণ ডাটা ম্যানেজ করে এটা থেকে পারফেক্ট আউটপুট বের করার জন্য তেমন দক্ষ ডাটা সায়েন্টিস্ট, ডাটা অ্যানালাইসিস্ট বা ডাটা ইন্জিনিয়ারও প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের মত দেশে এরকম দক্ষ কর্মী পাওয়া খুবই দুষ্কর। বর্তমানে যারা আইটি সেক্টরে মোটামুটি বড় বাজেটের স্যালারি প্রত্যাশা করে তাদের মধ্যে এই সেক্টরটি রয়েছে। 

 

বিগ ডাটা ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর অভাবে অনেক সময়ই আমরা কাঙ্খিত ফলাফল পাইনা। 

 

Speed of data growth: বিগ ডাটা সময়ের সাথে সাথে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি প্রক্রিয়াকরণ স্টোরেজ, নেটওয়ার্ক এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আছে এমন একটি শক্ত ইনফ্র্যাক্ট্রাকচার ছাড়া ডাটা ম্যানেজ করা খুবই কঠিন হয়ে যেতে পারে। 

 

Problem with data quality: ডাটার কোয়ালিটি সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহন, ডাটা অ্যানালাইসিস এবং প্ল্যানিং স্ট্র্যাটিজি এর উপর প্রভাব ফেলে। র’ডাটা অগোছালো এবং কিউরেট করা কঠিন হতে পারে। ডাটা যদি সঠিকভাবে প্রাসঙ্গিক, এবং অ্যানালাইজ এর জন্য সঠিকভাবে সংগঠিত না থাকে তবে সেখান থেকে কাঙ্খিত ফলাফলও পাওয়া যায়না। 

 

Compliance violations: বিগ ডাটাতে প্রচুর পরিমাণে সেনসিটিভ ডাটা এবং তথ্য থাকে। তাই একটিকে ক্রমাগত প্রসেসিং, গোপনীয়তার সাথে স্টোরেজ, ডাটা রেসিডেন্সি আইনগুলি পূরণ করা কঠিন হয়ে পরে। 

 

Integration complexity: বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলি বিভিন্ন সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে সাইল করা ডাটা নিয়ে কাজ করে। অসমান ডাটাসমূহকে একীভূত করা এবং ব্যবহারকারীদের জন্য ডাটাসেটটি অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলা কঠিন, তবে এটি থেকে যদি আপনি কোনো বেনিফিট পেতে চান তবে এটা আপনার জন্য জরুরী। 

 

Security concerns: বিগ ডাটাতে সাধারণত গ্রাহকের তথ্য এবং ব্যবসার মূল্যবান তথ্য থাকে যা পরবর্তীতে হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে। তাই অবশ্যই ডাটাসমূহের ক্ষেত্রে সাইবার সিকিউরিটির দিকে নজর দিতে হবে। তবে যেহেতু এই ডাটাসেটসমূহ বৈচিত্রময়, কমপ্লেক্স, তাই এদের সিকিউরিটি ব্যবস্থাও বাস্তাবায়ন করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।

 

পরিশেষে

সময়ের সাথে সাথে ডাটা প্রতিনিয়ত ব্যপকহারে বাড়ছে। আর এই বিপুল পরিমাণ ডাটা ব্যবহার করে আমরা বিভিন্নভাবে উপকার পেতে পারি। আমরা আমাদের ব্যবসাকে আরো বৃদ্ধি করতে পারি। তাই এজন্য দরকার দক্ষ কর্মী। 


আশা করি এই আর্টিকেল থেকে বিগ ডাটা কি এই সম্পর্কে একটি আইডিয়া পেয়েছেন। আপনার কোনো মতামত থাকলে যোগাযোগ করতে পারে।

Leave a Comment