বর্তমানে ইলেক্ট্রিক ডিভাইসগুলির মধ্যে যে সকল ডিভাইসগুলি আমাদের চার্জ দিয়ে চালাতে হয় সেগুলোর ব্যাটারির কার্যক্ষমতার জন্য আমাদের প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। আর এজন্যই আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় সম্পর্কে।
বিশেষ করে আমরা যারা মোবাইল ফোন চালায় তারা এই সমস্যায় হয়তো একটু বেশিই ভুগে থাকি। অনেকে হয়তো অনেক ভালো কনফিগারেশনের ফোন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু চার্জ কম থাকার কারণে সে ফোন ব্যবহার করে মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারেনা।
স্বাভাবিকভাবে আপনি যখন বাসায় থাকবেন তখন ফোনের ব্যাটারির কম কার্যক্ষমতা আপনার কাছে খুব বেশি প্যারা না নাও মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন বাইরে কোথাও ঘুরতে বা কাজে যাবেন তখন এই কম কার্যক্ষমতা খুব বেশি প্যারা মনে হবে।
ফোনের চার্জ তাড়াতাড়ি যায় কেন
ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে যে ফোনের চার্জ তাড়াতাড়ি যায় কেন। চলুন তাহলে ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাবার কিছু কারণ জেনে নেই। সেই সাথে এটাও জেনে নেই যে ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় কি।
ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার ক্ষেত্রে ডিসপ্লে ব্রাইটনেস
যে সকল কারণে ফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায় তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ফোনের উচ্চ ব্রাইটনেস। আপনার হয়তো বেশি আলোর প্রয়োজন পড়তে পারে বিশেষ করে যখন বাইরে যান। কিন্তু এটি ফোনের ব্যাটারির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
এক্ষেত্রে মোবাইলের ব্রাইটনেস অটো অ্যাডজাস্ট করে রাখতে পারেন, যাতে করে বাইরের আলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজে নিজেই কম বেশি হবে। এর ফলে আপনি যখন বাইরে বা বেশি আলোতে যাবেন তখন এটিতে সয়ক্রিয়ভাবে আলো বেড়ে যাবে। আবার যখন ঘরের মধ্যে থাকবেন বা কম আলোতে থাকবেন তখন একইভাবে এর আলো কমে যাবে।
আপনি বিভিন্ন অ্যাপস এর ক্ষেত্রে এর ব্যাকগ্রাউন্ড কালো করে দিতে পারেন। এতে করে অনেক ব্যাটারি সাশ্রয় হবে।
ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বলতে সাধারণত সেইসকল অ্যাপসকে বোঝায় যেগুলোতে আমরা সরাসরি কাজ করিনা বা ব্যবহার করিনা। কিন্তু আমাদের অগোচরে এটা চলমান থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ভিপিএন, অ্যান্টিভাইরাস, হেলথ এবং ক্যালেন্ডার অ্যাপস।
এই অ্যাপসগুলি সাধারণত আপনার সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই চলমান থাকে এতে ব্যাটারিও ব্যবহার হয়, ফলে চার্জও দ্রুত শেষ হয়। তাই ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় জানার জন্য এটা জানাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
তাই ফোনের চার্জ ধরে রাখার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলিও আমাদের রিমুভ করতে হবে।
ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার ক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম আউট সময়
আমরা অনেক সময় ফোনের স্ক্রিন টাইম বেশি দিয়ে রাখি। এতে করে ব্যাটারি অযথা ব্যবহার হতে থাকে। তাই আমরা স্ক্রিন টাইম আউট কমিয়ে আমাদের ফোনের চার্জ সেভিং করতে পারি।
ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার ক্ষেত্রে লোকেশন সার্ভিস
আমরা অনেকেই জেনে না জেনে ফোনের লোকেশন অন করে রাখি। এতে করে আমাদের অজান্তেই ফোনের চার্জ বেশি ব্যয় হয়ে যায়। ফোনের ব্যাটারি চার্জ ধরে রাখার জন্য লোকেশন সার্ভিস অফ করা একটি কার্যকর উপায়।
বিশেষ করে যে সকল অ্যাপের ক্ষেত্রে লোকেশন সবসময় প্রয়োজন হয়না, সেসকল অ্যাপের ক্ষেত্রে লোকেশন পারমিশন অফ করে রাখা উচিত। এভাবে আপনি আপনার ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি সার্ভিস বন্ধ করে ব্যাটারি সাশ্রয় করতে পারবেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ওয়াই-ফাইয়ের চেয়ে ডাটাতে বেশি পাওয়ার খরচ হয়। তাই যেখানে যতদূর সম্ভব আমাদের ওয়াইফাই ব্যবহার করা উচিত। তবে বাইরে গেলে তো কিছু করার থাকেনা আমাদের ডাটার উপরেই নির্ভর হতে হয়।
এক্ষেত্রে একটা কাজ করতে পারেন এতে ইন্টারনেট স্পিড ভালো পাবেন, একসাথে অনেকজন কানেক্টেড হতে পারবেন এবং ব্যাটারিও ভালো থাকবে। আর সেটা হলো পকেট রাউটার ব্যবহার করা। পকেট রাউটার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উল্লেখিত লিঙ্কে ক্লিক করলে জানতে পারবেন।
ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার ক্ষেত্রে নোটিফিকেশন সিস্টেম
আমরা অনেকেই আসলে না বুঝে অনেক নোটিফিকেশন অন করে রাখি। এরফলে দেখা যায় বিভিন্ন অ্যাপস থেকে লাগাতার ভাবে নোটিফিকেশন আসতে থাকে। অনেকে নোটিফিকেশনের সময় সাউন্ড অন করে রাখে ফলে প্রতিবার নোটিফিকেশনের সময় সাউন্ড হয় বা আলো জ্বলে উঠে। এতে করে একদিকে যেমন ব্যাটারি শেষ হচ্ছে অন্যদিকে এটা বিরক্তিরও কারণ হয়ে যায়। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত একান্ত জরুরী না থাকলে সকল ধরণের নোটিফিকেশন অফ রাখা।
কি-বোর্ড সাউন্ড অথবা ভাইব্রেশন
আমরা কেউ কেউ হয়তো আমাদের ফোনের কি-বোর্ড সাউন্ড বা ভাইব্রেশন অন করে রাখি। এতেও কিন্তু আমাদের ফোনের ব্যাটারির উপর একটা চাপ পরে থাকে। তাই আমাদের চার্জ সেভিং করতে এই কিবোর্ড সাউন্ড বা ভাইব্রেশন অফ রাখা উচিত।
মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়
আপনি আপনার ফোনের ব্যাটারির স্থায়ীত্ব ধরে রাখতে অনেক কিছুই করতে পারেন।
এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে। এতে করে অনেকদিন আমরা ব্যাটারি সার্ভিস পাবো। অনেকদিন পর্যন্ত ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকবে। চলুন তাহলে কিছু উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
চার্জের পরিমাণ
আমরা ফোন চার্জ দেবার সময় যে ভুল টা বেশি করি তা হলো চার্জ একদম শেষ হয়ে গেলে চার্জ দেওয়া শুরু করি। আবার চার্জও দেই একদম ১০০শতাংশ পর্যন্ত। এই অভ্যাসটা আসলে আমাদের ফোনের ব্যাটারির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
Textmagic এর একটি আর্টিকেল অনুযায়ী ব্যাটারি ২০শতাংশে নেমে এলেই চার্জিং এর জন্য প্লাগ ইন করা। এবং এটি সর্বোচ্চ ৮০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দেওয়া। আসলে ব্যাটারির জন্য অনেক বেশি চার্জ বা একদমই কম চার্জ কোনটিই কোনটিই ভালোনা। কেননা এই অবস্থায় ব্যাটারির লিথিয়াম-আয়ন যথাযথ কাজ করতে পারেনা।
তাছাড়া, চার্জ পূর্ণ হওয়ার পরও চার্জারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করাটা ফোনের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকারক ব্যাপার। তাই ফোন চার্জ দেবার পর লক্ষ রাখা উচিত এটি ৯০শতাংশের উপরে চলে যাচ্ছে কিনা।
সঠিক তাপমাত্রা
ফোনের ব্যাটারির স্থায়ীত্ব বাড়ানোর জন্য এটিকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখাটা জরুরী। এটি যদি অনেক বেশি তাপমাত্রায় থাকে তবে এর স্থায়ীত্ব কমে যায়। আপনার ফোনকে আপনার ঘরের মত তাপমাত্রায় রাখার চেষ্টা করুন। সেইসাথে চার্জ দেবার সময় একটি গরম হয়কিনা সেটাও খেয়াল করুন। বালিশের নিচে রেখে বা কাপড়ের নিচে রেখে চার্জ করা থেকে বিরত থাকুন।
শুধুমাত্র প্রয়োজনয়ী অ্যাপস ব্যবহার
অনেকের ফোনেই দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় অনেক অ্যাপস ইনস্টল করে রাখছে। এতে করে ফোনের ব্যাটারির উপর যেমন প্রভাব পরে তেমনিভাবে ফোনও স্লো হয়ে যায় একসময়।
তাই যে অ্যাপসগুলি আপনি ব্যবহার করেন না সেগুলি ডিলিট করে ফেলা উত্তম। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসগুলি যেন ব্যাকগ্রাউন্ডে না চলে সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।
এছাড়া এমন হয় যে, কোন একটি অ্যাপস আপনার প্রয়োজন হয় কিন্তু অনেকদিন দিন বা মাস পরে। তাই এসব অ্যাপস এর ক্ষেত্রে যখন লাগবে তখন ইনস্টল করে ব্যবহার করাই উত্তম।
এক কথায় আপনি যত দক্ষতার সাথে আপনার ফোন ব্যবহার করবেন আপনার ফোন বা ফোনের ব্যাটারি তত বেশি স্থায়ী হবে।
মোবাইল চার্জ দেওয়ার সঠিক নিয়ম
ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় হিসেবে মোবাইল চার্জ দেওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চলা জরুরী। আমরা অনেকেই মোবাইল চার্জ দেওয়ার সময় কিছু ভুল পদ্ধতি অবলম্বন করি এতে করে আমাদের মোবাইলের ব্যাটারির ক্ষতি হয়। চলুন তাহলে মোবাইল চার্জ দেওয়ার সঠিক নিয়ম দেখে নেওয়া যাক:
অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার
এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি আমরা প্রত্যেকেই আসলেই ভুল করি তা হলো যে কোনো চার্জার দিয়েই আমরা ফোন চার্জ করে থাকি। অর্থাৎ চার্জারের পোর্ট মিলে গেলেই আমরা চার্জে বসিয়ে দেই। কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও ঠিক নয়।
আমাদের সবসময় একটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তার ভিন্ন ফোনের জন্য আলাদা আলাদা ভোল্টেজের চার্জার তৈরি করে। আপনি যদি ভিন্ন চার্জার ব্যবহার করেন তবে আপনার ফোনের চার্জটি সন্তোষজনক নাও হতে পারে।
প্রথমবার চার্জ
আপনি যদি আপনার ফোনটি প্রথমবার চার্জ দিতে চান তাহলে এটি ১০০% পর্যন্ত চার্জ দিন।
সারারাত চার্জ করা থেকে বিরত থাকা
আগেই বলা হয়েছে ফোন সর্বদা ১০০% চার্জ করা থেকে বিরত থাকা উত্তম। আর এক্ষেত্রে যদি আপনি রাতে চার্জ দিয়ে ঘুমাতে যান তাহলে দেখা যায় ১০০% হবার পর প্লাগ ইন অবস্থায় থাকে। এটি ব্যাটারির জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হতে না দেওয়া
ব্যাটারি যদি কখনো অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় তবে এটি ব্যাটারিকে দূর্বল করে তোলে। তাই আমাদের উচিত এই বিষয়ে খেয়াল রাখা। বিশেষ করে কোন কাজ করলে ব্যটারি গরম হয় সেই কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
ব্যাটারি চার্জ করার জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ১৬ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সরাসরি সূর্যের আলোতে রেখে বা তাপের উৎসের কাছাকাছি রেখে চার্জ করা ঠিক নয়। এমনকি ফোনের কভার থাকা অবস্থায় চার্জ দিলে যদি ফোন গরম হয়ে যায় তাহলে কভার খুলে চার্জ করা উচিত।
আবার ফোন যদি এমন কোথাও রাখেন যেখানে খুব ঠান্ডা তাহলে সেখানে খুব ধীরে ধীরে চার্জ হবে। তাপমাত্র স্বাভাবিক হলে আপনার ব্যাটারি আগের মতোই চার্জ হবে।
চার্জিং অবস্থায় ফোন ব্যবহার না করা
এই ভুলটা আসলে আমরা অনেকেই করে থাকি তা হলো চার্জিং অবস্থায়ই আমরা ফোন ব্যবহার করি। এতে করে ব্যাটারি গরম হয়ে যেতে পারে ফলে ব্যাটারির স্থায়ীত্বও কমে যায়। চেষ্টা করা উচিত ফোন চার্জ করার সময় ফোনটিকে বিশ্রাম দেয়া।
জরুরী মূহুর্তে ব্যাটারি সাশ্রয়
আমাদের অনেক সময় জরুরী মূহুর্তে ব্যাটারি সাশ্রয়ের প্রয়োজন পরে। বিশেষ করে যখন বাইরে যাই বা বিভিন্ন কাজে থাকি। আপনারা হয়তো অনেকেই পাওয়ার সেভিং মুড সম্পর্কে জেনে থাকবেন। এই পাওয়ারের সেভিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্যাটারি সাশ্রয় করতে পারি।
পাওয়ার সেভিং অন করে আমরা আমাদের ব্যাটারির ক্ষমতা ৫০শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ফোন যদি স্বাভাবিকভাবে ১০ঘন্টা চলে, তাহলে পাওয়ার সেভিং মুড অন করে ১৫ঘন্টা পর্যন্ত চালাতে পারবেন।
পাওয়ার সেভিং মুড অন করার মাধ্যমে ডিভাইসের উপর যেমন চাপ কমে তেমনিভাবে ব্যাটারির আয়ু অনেকটা বেড়ে যায়।
পরিশেষে
বর্তমান এই ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে ফোন আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠছে। আর এই ফোনের প্রধান বিষয় হলো এর ব্যাটারি ব্যাকাপ। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই ফোনের ব্যাটারির যথারিতী যত্ন নেওয়া।
আশা করি ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় এই আর্টিকেল থেকে ব্যাটারি সম্পর্কিত অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।