বর্তমানে আমরা অনেকেই ভার্চুয়াল শব্দটার সাথে পরিচিত। বিশেষ করে করোনাকালীন সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমরা বিভিন্নভাবে ভার্চুয়াল ব্যাপারটার সাথে সম্পর্কিত। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ভার্চুয়াল মিটিং কি এই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
ভার্চুয়াল মিটিং কি
ভার্চুয়াল মিটিং হলো এমন এক ধরনের মিটিং যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি ভিন্ন জায়গায় থেকে অনলাইনের মাধ্যমে মিটিং করে থাকে। এই মিটিং কয়েক ধরনের হয়ে থাকে যেমন অডিও মিটিং, ভিডিও মিটিং বা চ্যাটের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে।
ভার্চুয়াল মিটিং কি এই আর্টিকেলে আমরা এখন জানবো ভার্চুয়াল মিটিং সফটওয়্যারে কি কি বৈশিষ্ট থাকা দরকার।
একটি ভার্চুয়াল মিটিং সফটওয়ারের কি কি বৈশিষ্ট থাকা উচিত
একটি ভার্চুয়াল মিটিং করার জন্য আমাদের দরকার একটি প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু যেকোনো প্ল্যাটফর্মেই কি আমরা মিটিং করবো। মিটিংয়ের জন্য প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করতে আমাদের বেশ কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো।
স্ক্রিন শেয়ারিং
ভার্চুয়াল মিটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো স্ক্রিন শেয়ারিং সুবিধা থাকা। কেননা এটা বাস্তব মিটিং না যে প্রজেক্টরে প্রেজেন্টেশন দেখানো যাবে। তাই সবার দেখা এবং বোঝার সুবিদার্থে এখানে স্ক্রিন শেয়ারিং সুবিধা থাকা জরুরী।
সিকিউরিটি কন্ট্রোল
ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য সর্বপরি কন্ট্রোল একজন অ্যাডমিনের থাকা উচিৎ। কারণ বিভিন্ন সময় তার বিভিন্ন কিছু কন্ট্রোল করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন অনাকাঙ্খিত কেউ মিটিংয়ে জয়েন করতে চাইলে অনুমতি না দেওয়া।
কেউ হঠাৎ করে ভুলবশত আনমিউট করে ফেলতে পারে। এবং সে মিউট করতে নাও পারে এসব ক্ষেত্রে যেন অ্যাডমিন তাকে মিউট করতে পারে। এই ধরনের সুবিধা থাকা খুবই প্রয়োজনীয়।
ভার্চুয়াল মিটিং এর জন্য ক্যালেন্ডার ব্যবহার
ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় অনেক মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবো বলে কথা দিয়ে থাকি। কিন্তু হয়তো আমরা সেটা ভুলে যেতে পারি। আর এই ভুল যেন না হয় সেজন্য ক্যালেন্ডার বুক করে রাখলে, ক্যালেন্ডার আমাদের মনে করিয়ে দিবে যে আমার একটা মিটিং আছে এই সময়ে।
মেসেজিং টুলস
ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য মেসেজিং টুলসও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মিটিংয়ের সময় আমাদের নিজেদের মধ্যে চ্যাটিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে। বা কোনো লিঙ্ক শেয়ার বা কোনো মতামত প্রদানের জন্য মেসেজিং টুলস একটি গুরুত্বপূর্ণ টুলস।
ভার্চুয়াল মিটিং এ রেকডিং এর ব্যবস্থা
মিটিং রেকডিংও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পরবর্তীতে শোনার জন্য, মিটিং মিনিট লিখার জন্য, অথবা যে উপস্থিত হয়নি সেও যেন সম্পূর্ণ মিটিংয়ের আলোচনা বা সিদ্ধান্ত জানতে পারে এজন্য এটি রেকর্ড করা হয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল মিটিং এর সুবিধা
ভার্চুয়াল মিটিং কি এই সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন এর সুবিধাগুলি দেখে আসি।
খরচ সাশ্রয়: ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, ফলে সময় ও খরচ উভয়ই সাশ্রয় হয়। আগে একটা মিটিংয়ের জন্য যাওয়া আসা সেই সাথে মিটিং স্থান প্রস্তুত করার জন্য অনেক খরচ হয়ে যেত। কিন্তু এখন সেটা নিমিষেই অনলাইন মিটিং এর মাধ্যমে করা যাচ্ছে।
দূরত্ব অতিক্রম: ভৌগোলিক দূরত্ব আর কোনো বাধা নয়। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে থাকা ব্যক্তির সাথেও সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব।
সময়ের সুবিধা: ভার্চুয়াল মিটিং এর আরেকটি বড় সুবিধা হলো যে কোনো সময় এবং যে কোনো জায়গা থেকে করা যায়। এমনকি জরুরী সময়ে বাসায় বসেও ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা যায়।
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: ফিজিক্যালি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে অনেক সময় অপচয় হয়ে যায়। ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে এই সময়টা বাচাঁনো যায়। এই সময় কাজে লাগিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়।
সহযোগিতা বাড়ানো: ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব। এর মাধ্যমে টিমের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করতে পারে, ফলে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে।
- পরিবেশবান্ধব: ভার্চুয়াল মিটিং পরিবেশের জন্যও বেশি উপকারী। কারণ এতে ভ্রমণের কারণে কার্বন নিঃসরণ কম হয়
ভার্চুয়াল মিটিং এর অসুবিধা
প্রযুক্তিগত সমস্যা: আমার মতে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এর প্রযুক্তিগত সমস্যা। ইন্টারনেট সংযোগ, হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার সমস্যার কারণে মিটিংয়ে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বিশেষ করে যারা নতুন ব্যবহারকারী, বা অনলাইন সম্পর্কে ধারণা তেমন স্পষ্ট না তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগের অভাব: বর্তমানে এমন হয়ে গেছে যে বেশিরভাগ মিটিং ই ভার্চুয়ালী হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ এবং সামাজিক সম্পর্কের ঘাটতি দেখা যায়।
মনোযোগ ধরে রাখা: ভার্চূয়াল মিটিংয়ের আরেকটি সমস্যা হলো মনোযোগ ধরে রাখা। এই মিটিংগুলো করা হয় সাধারণত একা একা বসে কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে। তাই সবার সাথে বসে যেভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায় ভার্চুয়াল মিটিংয়ের ক্ষেত্রে সেভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়না।
বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝা কঠিন: যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। বেশিরভাগ ভার্চুয়াল মিটিং হয়ে থাকে সাধারণত অডিওতে। চাই এখানে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝার কোনো উপায় নাই। এছাড়া ভিডিও মিটিং করলেও শুধুমাত্র মুখ দেখা যায় এতেও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভালোভাবে বোঝা যায়না।
আশা করি ভার্চুয়াল মিটিংয়ের সুবিধা অসুবিধার মাধ্যমে ভার্চুয়াল মিটিং কি এই সম্পর্কে একটা ধারনা পেয়েছেন।
ভার্চুয়াল মিটিং সফল করার উপায়
মিটিংয়ের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করুন: আমাদের অবশ্যই একটি ভার্চুয়াল মিটিং আয়োজন করার আগে মিটিংয়ের উদ্দেশ্য বা এজেন্ডা ঠিক করতে হবে। এতে করে আলোচনা যেমন ফলপ্রসূ হবে এবং অন্যান্য অতিথিরাও মিটিং সম্পর্কে পূর্বে থেকে একটা আইডিয়া পাবে। এতে করে তার মতামত দিতে সুবিধা হবে।
সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন: ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য অবশ্যই একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ করতে হবে। মিটিংয়ের জন্য Zoom, Google meet, Skype এবং Microsoft Teams সহ আরো অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। একেকটা প্ল্যাটফর্মে একেক ধরনের সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। তাই আমাদের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ করা উচিত।
সময়সূচি বজায় রাখুন: ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য সময়সূচি বজায় রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমরা গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে পারি। তাহলে প্রত্যেকেই তার মিটিংয়ের সময় দেখতে পারবে এবং তার কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে।
সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন: ভার্চুয়াল মিটিংয়ের ক্ষেত্রে মিটিং শুরু করার পূর্বে আমাদের উচিত সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কারো কারো হয়তো বিভিন্ন কারণে অংশগ্রহন করতে সমস্যা হতে পারে। সেদিকে নজর দিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করে মিটিং শুরু করা উচিত।
- প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধানের জন্য প্রস্তুত থাকুন: ভার্চুয়াল মিটিং চলাকালিন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই সম্ভাব্য সমস্যা বিবেচনা করে সমাধানের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। প্রয়োজনে যেন একজন আইটি পারসনের সাথে যোগাযোগ করা যায় সেই ব্যাবস্থাও রাখা উচিত।
ভার্চুয়াল মিটিং এর জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ
কোন একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে যদি অংশগ্রহন করেন এবং সেখানে যদি আপনাকে কথা বলতে হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে পূর্বে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। নিচে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো:
এজেন্ডা পর্যালোচনা করা
একটি মিটিংয়ে অংশগ্রহন করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে মিটিংয়ের এজেন্ডা সম্পর্কে জানতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে। উক্ত মিটিংয়ে যদি আপনাকে কথা বলতে হয় তাহলে কি বলবেন আগে থেকে একটা ড্রাফট রেডি করে রাখা উচিত। এতে করে আপনি সাবলিল ভাবে কথা বলতে পারবেন।
অন্যদের জানানো
আপনি যদি বাড়িতে বা অফিসে থাকেন যেখানে আপনার আশেপাশে অনেক মানুষ থাকে, তাহলে মিটিংয়ে অংশগ্রহন করার পূর্বে তাদের জানান যে আপনি একটি মিটিংয়ে অংশগ্রহন করছেন। এতে করে তারা অতিরিক্ত শব্দ করা থেকে বিরত থাকবে। যারফলে আপনার কথা শুনতে অন্যকারো সমস্যা হবেনা।
ইন্টারনেট কানেকশন চেক করা
আপনি নিশ্চয় জানেন যে, ভার্চুয়াল মিটিংয়ের প্রধান শর্ত হলো ইন্টারনেট কানেকশন। তাই মিটিংয়ে অংশগ্রহন করার পূর্বে ইন্টারনেট কানেকশন চেক করে নিতে হবে।
ভার্চুয়াল মিটিং করার জন্য স্থান নির্বাচন
সফলভাবে একটি মিটিং সম্পন্ন করতে হলে আপনাকে সুন্দর একটি জায়গা বেছে নিতে হবে। যদি আপনাকে ভিডিও কলে আসতে হয় তাহলে ব্যাকগ্রাউন্ডে যেন আপত্তিকর কিছু বা মনোযোগ নষ্ট হয় এমন কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় সেটিংস পরীক্ষা করে নেওয়া
মিটিং শুরু করার পূর্বে প্রয়োজনীয় সেটিংসগুলি পরীক্ষা করে নিতে হবে। যেমন হেডফোনের মাইক্রোফনটা কাজ করছে কিনা, সাউন্ড শোনা যাচ্ছে কিনা, ভিডিওটা ঠিকমত কাজ করছে কিনা দেখে নিতে হবে।
পরিশেষে
ভার্চুয়াল মিটিং হল একটি শক্তিশালী যোগাযোগের মাধ্যম যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে করোনাকালীন পর থেকে এর ব্যাবহার ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।
যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে এর সুবিধাগুলি অস্বীকার করা যায় না। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল মিটিং আরো উন্নত হবে এবং আমাদের কাজের ধরনকে আরো সহজতর করে তুলবে।
আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মিটিং কি এই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।