বর্তমানে আমরা অনেকেই ভার্চুয়াল মেমোরি শব্দটির সাথে পরিচিত। দোকানে ফোন কিনতে গেলেও অনেক দোকানদার বলে এই ফোনে র্যাম পাবেন ৪জিবি সাথে আরো দুই জিবি এক্সটেনডেড বা ভার্চুয়াল মেমোরি। এই ভার্চুয়াল শব্দটি শুনলে অনেকেই হয়তো বিভ্রান্ত হতে পারেন। মনে হতে পারে এটি কোনো ধরনের অস্বাভাবিক বা কাল্পনিক মেমোরি। কিন্তু আসলে ভার্চুয়াল মেমোরি হল কম্পিউটারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট যা ডিভাইসের পারফরম্যান্সকে অনেক উন্নত করে তোলে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ভার্চুয়াল মেমোরি কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
ভার্চুয়াল মেমোরি কি
ভার্চুয়াল মেমোরি হল এমন একটি মেমরি ম্যানেজমেন্ট কৌশল যার মাধ্যমে একটি কম্পিউটারে তার প্রকৃত মেমোরির চেয়ে বেশি মেমোরি ব্যবহার করা যায়। মেইন মেমোরি সীমিত থাকা সত্বেও ভার্চুয়াল মেমোরির মাধ্যমে অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে প্রয়োজনীয় মেমোরি সরবারাহ করে থাকে।
যেসব অ্যাপ্লিকেশনগুলি র্যাম কম থাকার কারণে চলতে সমস্যা হবার কথা সেসকল অ্যাপ্লিকেশনগুলি ভার্চুয়াল মেমোরির মাধ্যমে অনেক সহজেই চলতে পারে। আশা করা যায় আপনি ভার্চুয়াল মেমোরি কি এই সম্পর্কে জানতে পারছেন এবার আমরা ভার্চুয়াল মেমোরির প্রকারভেদ সম্পর্কে জানবো।
ভার্চুয়াল মেমোরি এর প্রকারভেদ
ভার্চুয়াল মেমোরি দুই প্রকার যথা- পেজিং এবং সেগমেনটেশন।
পেজিং ভার্চুয়াল মেমোরি
পেজিং পদ্ধতিতে র্যামকে 4k সাইজের ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। এই ব্লকগুলোকে পৃষ্ঠা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কম্পিউটিং প্রসেসগুলি তাদের মেমোরির চাহিদার উপর ভিত্তি করে পেজগুলিতে অ্যালোকেট হয়।
প্রতিটি প্রসেস 4k মেমোরি ব্যাবহার করে, তাই মেমোরির একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়। খুব কম ক্ষেত্রেই, কিছু অপারেশনে প্রচুর সংখ্যক পেজ ব্যবহার হয়।
সেগমেন্টেশন
আরেকপ্রকার ভার্চুয়াল মেমোরি হলো সেগমেন্টেশন। এই প্রক্রিয়ায় ফিক্সড সাইজ পেইজ প্রসেস করার পরিবর্তে, অপারেশনের ভিত্তিতে মেমোরি অ্যাসাইন করা হয়। এখানে যতটুকু মেমোরি দরকার ততটুকুই ব্যবহার করা হয় ফলে এখানে মেমোরি নষ্ট হয়না।
ভার্চুয়াল মেমোরি এর কাজ
এবার আমরা ভার্চুয়াল মেমোরির কাজ সম্পকে জানার চেষ্টা করবো। আজকাল এটি খুব সাধারণ হয়ে গেছে। একটি ভার্চুয়াল মেমোরি তৈরি করা হয় সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের সমন্বয়ে। এটি একটি প্রোগ্রাম দ্বারা ব্যবহৃত মেমোরি লোকেশনগুলোকে ম্যাপ করে, যাকে ভার্চুয়াল অ্যাড্রেসও বলা হয়। এটি অবস্থিত কম্পিউটারের ফিজিক্যাল অ্যাড্রেসে।
এই পদ্ধতিতে যখন প্রসেসরের কাছে কিছু কাজ প্রসেস করার জন্য রিকুয়েস্ট আসে, তখন এই কাজের জন্য মেইন মেমোরিতে লোড করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সবগুলো কাজের জন্য মেমোরিতে পর্যাপ্ত যায়গা পাওয়া যায়না।
এইক্ষেত্রে উক্ত কাজগুলো বন্ধ করার পরিবর্তে, অপারেটিং সিস্টেম উক্ত কাজ প্রসেস করার জন্য বিকল্প মেমোরির অনুসন্ধান করে। পরবর্তীতে সবচেয়ে কম ব্যবহৃত সেকেন্ডারি মেমোরি থেকে উক্ত কাজ প্রসেস করার জন্য মেমোরি বরাদ্ধ করে থাকে।
যেহেতু এই সমস্ত পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে, তাই বলা যায় একটি কম্পিউটারে সীমাহীন RAM রয়েছে।
ভার্চুয়াল মেমোরি কেন প্রয়োজন?
মেইন মেমোরির সীমাবদ্ধতা: প্রতিটি কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ র্যাম থাকে। যখন কোনো প্রোগ্রাম চালু করা হয়, তখন তার প্রয়োজনীয় ডেটা এবং নির্দেশাবলী র্যামে লোড করা হয়। কিন্তু যদি কোনো প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা র্যামে না আটকে থাকে, তাহলে কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক থেকে সেই ডেটা লোড করতে বাধ্য হয়। হার্ড ডিস্কের গতি র্যামের চেয়ে অনেক ধীর, ফলে কম্পিউটারের গতি মন্থন হয়ে পড়ে। ভার্চুয়াল মেমোরি এই সমস্যার সমাধান করে।
একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালানো: আধুনিক কম্পিউটারে সাধারণত একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালানো হয় যাকে বলা হয় মাল্টি টাস্কিং। প্রতিটি প্রোগ্রামের জন্য কিছু পরিমাণ মেমোরি প্রয়োজন হয়। যদি র্যাম সীমিত হয়, তাহলে একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। ভার্চুয়াল মেমোরি এই সমস্যার সমাধান করে।
প্রোগ্রামের জটিলতা সামলাতে: আধুনিক প্রোগ্রামগুলি খুবই জটিল এবং বড় আকারের হতে পারে। এই ধরনের প্রোগ্রামগুলির জন্য প্রচুর পরিমাণ মেমোরি প্রয়োজন হয়। ভার্চুয়াল মেমোরি এই প্রোগ্রামগুলিকে সহজে চালানোর অনুমতি দেয়।
ভার্চুয়াল মেমোরির সুবিধা এবং অসুবিধা
ভার্চুয়াল মেমোরির অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে, পাশাপাশি এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এখন আমরা এই সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানবো যাতে ভার্চুয়াল মেমোরি কি এই সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা যায়।
ভার্চুয়াল মেমোরির সুবিধা
বেশি মেমোরি ব্যবহার: ভার্চুয়াল মেমোরি কম্পিউটারকে তার প্রকৃত মেমোরি চেয়ে বেশি মেমোরি ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। এর ফলে আমাদের ডিভাইসগুলো অনেক দ্রুত কাজ করতে পারে।
একাধিক প্রোগ্রাম চালানো: ভার্চুয়াল মেমোরি একাধিক প্রোগ্রামকে একসাথে চালাতে সাহায্য করে। এরফলে আমরা মাল্টিটাস্কিং করতে পারি।
জটিল প্রোগ্রাম চালানো: ভার্চুয়াল মেমোরি জটিল এবং বড় আকারের প্রোগ্রামগুলিকে চালানো সহজ করে।
- কম খরচে ভালো পারফরমেন্স: আমরা সবাই জানি যে, মেইন মেমোরি কিছুটা ব্যয়বহুল। তাই ভার্চুয়াল মেমোরির মাধ্যমে যখন মেইন মেমোরির কাজ করা হয়, এতে করে কম খরচে ভালো পারফরমেন্স পাওয়া যায়।
ভার্চুয়াল মেমোরি এর অসুবিধা
গতি কমে যাওয়া: হার্ড ডিস্কের গতি র্যামের চেয়ে অনেক ধীর। ফলে, যখন কম্পিউটারকে হার্ড ডিস্ক থেকে ডেটা লোড করতে হয়, তখন কম্পিউটারের গতি কিছুটা ধীরগতির হয়ে পড়ে।
পেজিং: ভার্চুয়াল মেমোরি ব্যবহার করার সময়, অপারেটিং সিস্টেমকে ডেটা ফিজিক্যাল মেমরি এবং ভার্চুয়াল মেমোরির মধ্যে স্থানান্তর করতে হয়। এই প্রক্রিয়াকে পেজিং বলা হয়। পেজিং প্রচুর পরিমাণে প্রসেসর সময় নিয়ে থাকে ফলে কম্পিউটারের গতি কমে যায়।
পরিশেষে
ভার্চুয়াল মেমোরি হল কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট যা কম্পিউটারের পারফরম্যান্সকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, ভার্চুয়াল মেমোরি সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
যদিও ভার্চুয়াল মেমোরি কিছু সুবিধা প্রদান করে, তবে এটি কিছু অসুবিধাও সৃষ্টি করে। তাই ভার্চুয়াল মেমোরি ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে ভাবা উচিত।
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, ভার্চুয়াল মেমোরি কোনো সমাধান নয়। যদি আপনার কম্পিউটারের গতি স্লো মনে হয়, তাহলে ভার্চুয়াল মেমোরি বাড়ানোর আগে আপনার কম্পিউটারের অন্য সমস্যাগুলি সমাধান করার চেষ্টা করুন।
আশা করি এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি ভার্চুয়াল মেমোরি কি এই সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।