বর্তমান যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে । আর ইন্টারনেট সংযোগের একটি মূল উপাদান হচ্ছে মডেম । আজকের এই অর্টিকেলে আমরা জানতে পারবো মডেম কি এবং মডেম কোন ধরনের ডিভাইস সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু । চলুন তাহলে শুরু করা যাক:
মডেম কি?
মডেম সম্পর্কে জানতে হলে শুরুতেই জানতে হবে মডেম জিনিসটি আসলে কি। মডেম হলো একটি নেটওয়াকিং ডিভাইস যা নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ডিভাইসগুলিকে ইন্টোরনেটের সাথে সংযুক্ত করে। মডেম এর প্রধান কাজ হলো ডিজিটাল ডেটা কে এনালগ সিগনালে এবং এনালগ সিগনালকে ডিজিটাল ডেটায় রূপান্তরিত করা।
মডেম শব্দটি “মডুলেটর-ডিমডুলেটর” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। অর্থাৎ মডেম একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমোডুলেশন উভয় কাজই সম্পাদন করতে পারে। মডেম মূলত কম্পিউটারের সাথে ইন্টারনেটের সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ।
মডেম কোন ধরনের ডিভাইস
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে মডেম কোন ধরনের ডিভাইস। মডেম হলো একটি ইনপুট আউটপুট ডিভাইস। একটি ডিভাইস কিন্তু ইনপুট আউটপুট উভয়ক্ষেত্রেই কাজ করে। এর মাধ্যমে যেমন আমরা ইনপুট দেই আবার আউটপুট ও পেয়ে থাকি।
মডেম এর আবিষ্কার
সর্ব প্রথম মডেম তৈরি হয় ১৯৭৭ সালে । Dale Heatherington এবং Dennis Hayes নামের দুইজন ব্যক্তি মডেম আবিষ্কার করেন ।
মডেম এর প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে মডেম এর প্রয়োজনীয়ত আসলে অনেক। যারা শহর এলাকায় থাকে তারা হয়তো মডেমের প্রয়োজনীয়তা এতটা বুঝতে পারেনা। কিন্তু যারা গ্রাম এলাকায় থাকে এবং ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপ ব্যবহার করে মডেম তাদের জন্য অপরিহার্য। যদি তারা ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পেতে চায়।
কেননা গ্রাম পর্যায়ে এখনো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌছায়নি, তাই মডেম তাদের একমাত্র ভরসার জায়গা। শুরুর দিকে আমি যখন গ্রামে থেকেছি তখন আমি নিজেও মডেম ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু বর্তমানে শহর বা ঢাকা আসার পর আসলে মডেম এর প্রয়োজন হয়না। অর্থাৎ এখন হাতের নাগালের মধ্যেই ব্রডব্যন্ড ইন্টারনেট।
মডেম এর প্রকারভেদ
এবার আমরা মডেম এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানবো। মডেম মূলত দুই প্রকারের হতে পারে যেমন ডায়াল-আপ মডেম এবং ব্রডব্যান্ড মডেম। চলুন বিস্তারিত দেখে নেই।
ডায়াল-আপ মডেম
এই মডেম অ্যানালগ সংকেত এর মাধ্যমে ডাটা আদান-প্রদান করে থাকে। অ্যানালগ সংকেত ব্যবহার করে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার(ISP) এর সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এইক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ করতে টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে থাকে। এই মডেমটি তুলনামূলক ধীরগতির এর গতি প্রায় ৫৬কেবিপিএস যা বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত।
ব্রডব্যান্ড মডেম
ব্রডব্যান্ড মডেম তুলনামূলক উচ্চ গতির ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়ে থাকে । এগুলো আবার বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে । যেমন:-
DSL মডেম: এই মডেম টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে । DSL মডেম থেকে প্রায় ১০০এমবিপিএস পর্যন্ত ইন্টারনেট স্পিড পাওয়া যায়।
ক্যাবল মডেম: এই মডেমটি কো-অক্সিয়াল ক্যাবল বা টিভি লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে থাকে । এটি ডায়াল-আপ মডেমের চেয়ে দ্রুত । যেখানে ক্যাবল টেলিভিশনের লাইন পাওয়া যায় সেখানে ক্যাবল মডেম এর ভালো সার্ভিস পাওয়া যায়।
ফাইবার অপটিক মডেম: এই মডেমের ক্ষেত্রে ইন্টারটেন প্রোভাইড করতে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করে থাকে। এটি উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে থাকে। ফাইবার অপটিক ব্যবহার করে প্রায় ১০জিবিপিএস পর্যন্তু ইন্টারনেট স্পিড পাওয়া যায। এটি আলোর গতিতে ডেটা স্থানান্তর করে।
সেলুলার মডেম: এটি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট সরবরাহ করে এবং এটি ছোট ডিভাইসগুলোর জন্য উপযুক্ত। সেলুলার মডেমকে পকেট রাউটার বলা হয়।
- ডিজিটাল মডেম মডেম কোন ধরনের ডিভাইস: ডিজিটাল মডেম এমন এক ধরনের মডেম যা ডিজিটাল ডাটাকে ডিজিটাল সিগন্যালে রুপান্তর করতে ব্যববহৃত হয়। ডিজিটাল ডাটা ০ এবং ১ অর্থাৎ বাইনারি আকারে থাকে। আর এইজন্য মডুলেশন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে।
মডেম ডিভাইস এর কাজ কি?
এখন আমরা জানবো মডেম আসলে কি কাজ করে থাকে যার জন্য আমরা মডেম ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করি। মডেম এর কাজ সম্পর্কে জানলে মডেম কোন ধরনের ডিভাইস সে সম্পর্কেও আমরা জানতে পারবো।
ডিজিটাল সিগনালকে এনালগ সিগনালে রূপান্তর
শুরুতেই বলি কেন ডিজিটাল সিগনালকে এনালগ সিগনালে রূপান্তর করা হয়, মূলত যোগাযোগ মাধ্যমের প্রকৃতির কারনে সিগনালকে রূপান্তর করা হয় । বেশিরভাগ এনালগ যোগাযোগ মাধ্যম এবং টেলিফোন লাইন ডিজিটাল সিগনাল সরাসরি প্রক্রিয়া করতে পারে না।
এজন্য ডিজিটাল ডেটা কে এনালগ ডেটায় পরিণত করা হয় যাতে তা টেলিফোন লাইন এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে প্রেরণ করা যায়। এছাড়াও লম্বা দূরত্বে এনালগ সিগনাল প্রেরণ করা খুবই সহজ তাই ডিজিটাল সিগনালকে এনালগ সিগনালে রূপান্তর করার প্রয়োজন পরে।
আর এই সিগনাল রূপান্তর এর কাজটিই করে থাকে মডেম। ডিজিটাল সিগনালকে এনালগ সিগনালে রূপান্তর করার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মডুলেশন (Modulation)।
এনালগ সিগনালকে ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তর
ডিজিটাল সিগনাল সহজেই কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসে প্রদর্শন করা যায় এবং সংরক্ষণ করা যায়, যা এনালগ সিগনালের ক্ষেত্রে সম্ভব নয় । এছাড়াও ডিজিটাল সিগনাল বাইরের অযাচিত শব্দ এবং বিকৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয় না, কিন্তু এনালগ সিগনালগুলোতে শব্দ ও বিকৃতি যোগ হয় ।
ডিজিটাল সিগনালকে সহজেই প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশ্লেষণ করা যায় যা এনালগ সিগনালের ক্ষেত্রে খুবই কঠিন , তাই এনালগ সিগনালকে ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তর করার প্রয়োজন পরে। এনালগ সিগনালকে ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে ডিমডুলেশন ( Demodulation) বলা হয়।
মডেম কিভাবে সিগন্যাল রুপান্তর করে
এতক্ষণে আপনারা মডেম কি কি কাজ করে থাকে সেই বিষয়ে জানতে পেরেছেন, এখন আমরা জানবো মডেম এই সিগনাল রূপান্তর এর কাজগুলো কিভাবে করে ।
মডু্লেশন প্রক্রিয়ায় সাধারণত তিন ধরনের মডুলেশন হয়ে থাকে । যেমন:-
অ্যামপ্লিটিউড মডুলেশন (AM): এই মডুলেশন সিগনালের অ্যামপ্লিটিউড পরিবর্তনের মাধ্যমে হয়ে থাকে ।
ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন (FM): এই মডুলেশন সিগনালের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তনের মাধ্যমে হয়ে থাকে ।
ফেজ মডুলেশন (PM): এই মডুলেশন সিগনালের ফেজ পরিবর্তনের মাধ্যমে হয়ে থাকে ।
ডিমডুলেশন প্রক্রিয়ার প্রাপ্ত সিগনালকে মডুলেশন প্রক্রিয়ার বিপরীত প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ডেটায় রূপান্তর করা হয় ।
এখন আমরা জানবো মডেম এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো সম্পর্কে।
মডেম এর সুবিধা
মডেম এর অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে, এবার আমরা মডেম এর সুবিধা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
ইন্টারনেটের সাথে Local Area Network (LAN) কানেক্ট করার ক্ষেত্রে উপযোগী ।
খরচের উপর মডেম এর গতি নির্ভর করে ।
ডিজিটাল এবং এনালগ সিগনাল রূপান্তর করে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজকে সহজ করে দিয়েছে ।
মডেম এর ব্যবহার সারা বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে ।
দূরবর্তী স্থানে ইন্টারনেট প্রবেশ করতে সহায়তা করে ।
মডেম এর অসুবিধা
মডেম এর যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে তেমনিভাবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন:
প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে মডেম সংযোগ ঠিকমতো পাওয়া যায় না ।
মডেম LAN এবং ইন্টারনেটের মধ্যে ট্রাফিক ট্র্যাক করতে পারেনা।
কিছু কিছু মডেম এর সংযোগের স্থায়িত্ব কম থাকে তাই মাঝে মাঝে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে ।
ইন্টারনেট এর সাথে সংযুক্ত হওয়ায় এটি নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় যা থেকে হ্যাকিং ও ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পরিশেষে
আশা করি এতক্ষনে আপনারা মডেম কি এবং মডেম কোন ধরনের ডিভাইস এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন । মডেম আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অনেক সহজ করতে সহায়তা করেছে এবং করছে। মডেম এর সুবিধার তুলনায় অসুবিধা প্রায় নগণ্য । মডেম এর বিভিন্ন প্রকার ও সুবিধাগুলো বিবেচনা করে সঠিক মডেম নির্বাচন করা উচিত ।
আজকের আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই, আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাকে মডেম সম্পর্কে স্পষ্ট ধরনা দিতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।