আমরা রশ্মির কথা তো সবাই শুনেছি, আমরা যে আলো দেখতে পাই সেটা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এগুলো আসলে কি? কিভাবে তৈরি হচ্ছে এগুলো? আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে রশ্মি কাকে বলে এবং এই সম্পর্কিত বিস্তারিত সবকিছুই জানতে পারবেন এই আর্টিকেল থেকে। 

 

আমরা রশ্মি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি তাই প্রথমেই জানতে হবে রশ্মি আসলে কি।তবে আমরা এখানে গণিত নিয়ে আলোচনা করছি না, অর্থাৎ জ্যামিতিতে যে রশ্মি রয়েছে সেটা নিয়ে বলছি না। আমাদের আলোচনার বিষয় হলো আলোকরশ্মি বা তড়িৎরশ্মি।

রশ্মি হচ্ছে এমন একটি শক্তি বা তরঙ্গ যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পরতে পারে। একইসাথে এটি পরিবেশের উপর ভালো অথবা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞান নির্ভর ক্ষেত্রগুলোতে রশ্মি অনেকাংশেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

রশ্মি অনেক ধরনেরই হতে পারে এবং এদের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহারও ভিন্ন ভিন্ন। 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ রশ্মি হলো:-

 

আলোক রশ্মি, তেজস্ক্রিয় রশ্মি, বিটা, আলফা ও গামা রশ্মি। এগুলো ছাড়াও আপতিত,প্রতিফলিত ও প্রতিসরিত রশ্মির অস্তিত্ব রয়েছে।

আলোক রশ্মি কাকে বলে?

সাধারনভাবে আমাদের চোখে দৃশ্যমান তরঙ্গই হচ্ছে আলোক রশ্মি। এই আলোক রশ্মির উৎস মূলত সূর্য। সূর্য থেকে আগত আলোক রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়। 

 

এছাড়াও আমরা যে বাতির আলো দেখি সেটিও আলোক রশ্মি। আলোক রশ্মি আমাদের আশেপাশের পরিবেশকে আলোকিত রাখে, আলোক রশ্মির কারণেই আমরা সবকিছু দেখতে পারি। 

 

আলোক রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪০০-৭০০ ন্যানোমিটার। এবং এটি প্রতি সেকেন্ডে ৩লক্ষ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারে।

তেজস্ক্রিয় রশ্মি কাকে বলে?

তেজস্ক্রিয় পদার্থ হতে নির্গত হওয়া রশ্মিগুলোকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলা হয়। এই রশ্মিগুলো খালি চোখে দেখা যায়না এবং এগুলো খুবই শক্তিশালী রশ্মি।

 

তেজস্ক্রিয় রশ্মির কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে,যেমন:

১)আলফা রশ্মি

২)বিটা রশ্মি

৩)গামা রশ্মি

আলফা রশ্মি কাকে বলে?

দ্বি-ধনাত্মক হিলিয়ামযুক্ত নিউক্লিয়াসকে আলফা রশ্মি বলে। তুলনামূলক ভারী তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্ষয়ের ফলে আলফা রশ্মির উৎপত্তি হয়। 

 

আলফা রশ্মি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং খুব বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারেনা ফলে খুব একটা ক্ষতিসাধন করতে পারে না। আলফা রশ্মি মানবদেহে প্রবেশ করলে খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।

আলফা রশ্মির ব্যবহারের কিছু ক্ষেত্র রয়েছে এবং এর কিছু বিপজ্জনক দিকও রয়েছে। যেমন:- পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন, রেডিওথেরাপিতে আলফা রশ্মি ব্যবহার করা হতে পারে, এছাড়াও পারমাণবিক বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণায় আলফা রশ্মির ব্যবহার হয়। 

আলফা রশ্মি মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে।

বিটা রশ্মি কাকে বলে?

সাধারণত অস্থিতিশীল পরমাণু থেকে নির্গত রশ্মিকে বিটা রশ্মি বলা হয়ে থাকে। কোনো অস্থিতিশীল পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে  একটি β⁻(বিটা মাইনাস) কনিকা অথবা β+(বিটা প্লাস) কনিকা নির্গত হলে তখন বিটা রশ্মির সৃষ্টি হয়।

 

আলফা রশ্মির থেকেও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এই বিটা রশ্মি। বিটা রশ্মির কিছু ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন:- এটি মানবদেহের কোষে প্রবেশ করলেও ডিএনএ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মানবদেহে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

 

মেডিকেল ইমেজিং এবং বিভিন্ন গবেষণায় বিটা রশ্মির ব্যবহার রয়েছে।

গামা রশ্মি কাকে বলে?

গামা রশ্মি হলো অতি শক্তিশালী একটি তেজস্ক্রিয় রশ্মি। এটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ হিসেবে বিকিরিত হয়। এই রশ্মির তরঙ্গেদৈর্ঘ খুবই কম তাই এটি অনেক শক্তিশালী আর মানুষের চোখে অদৃশ্য। 

 

গামা রশ্মি এতোটাই শক্তিশালী যে এটি অনেক কঠিন পদার্থকেও ভেদ করে চলে যেতে পারে। আলফা ও বিটা রশ্মির থেকেও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম এই গামা রশ্মি।

 

গামা রশ্মির কিছু ব্যবহার রয়েছে। যেমন:- গামা রশ্মি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম তাই রেডিওথেরাপিতে গামা রশ্মি ব্যবহার করা হয়। আবার বিভিন্ন শিল্পে এর ব্যবহার রয়েছে। 

 

গামা রশ্মি অনেক শক্তিশালী আর বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে তাই এটির সংস্পর্শে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ এর বিকিরণ মানুষের ত্বক, লিভার, কিডনির ক্ষতিসাধন করতে পারে।

আপতিত রশ্মি কাকে বলে?

কোনো প্রতিফলক পৃষ্ঠে প্রথমে অন্য কোথাও থেকে আগত যে রশ্মিটি পরে সেটিই হচ্ছে আপতিত রশ্মি। 

যেমন:

●সূর্যের আলো প্রথমে চাঁদের উপর পরে এটি আপতিত রশ্মি। 

●কোনো আলো প্রথমে আয়না/জলের উপর পড়লে সেটি আপতিত রশ্মি।

 

অর্থাৎ কোনো আলোক রশ্মি কোনো মাধ্যম/পৃষ্ঠের উপর পতিত হওয়াকেই আপতিত রশ্মি বলা হয়।

প্রতিফলিত রশ্মি কাকে বলে?

আপতিত রশ্মি যখন কোনো পৃষ্ঠ হতে পুনরায় তার আগের মাধ্যমে ফিরে আসে তখন তাকে প্রতিফলিত রশ্মি বলা হয়। 

যেমন:

আয়নায় কোনো আলো পতিত হওয়া এবং সেটির ফিরে আসা।

 

অর্থাৎ কোনো পৃষ্ঠে আলোক রশ্মি পতিত হয়ে সেটির ফিরে আসাটাই হচ্ছে প্রতিফলিত রশ্মি।

প্রতিসরিত রশ্মি কাকে বলে?

আলো এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাওয়ার সময় তার দিক কিছুটা পরিবর্তন করে। আলোর গতির এই দিক পরিবর্তন করাকে আলোর প্রতিসরণ বলা হয়, আর দিক পরিবর্তন করা সেই আলোক রশ্মিটিকেই বলা হয় প্রতিসরিত রশ্মি।

যেমন:

● অর্ধেক গ্লাস পানিতে একটি পেন্সিল রাখলে পানিতে নিমজ্জিত পেন্সিলের অংশটি বেঁকে গিয়েছে বলে মনে হয়।

 

অর্থাৎ যে রশ্মি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে গিয়ে দিক পরিবর্তন করে সেটাই প্রতিসরিত রশ্মি।

পরিশেষে

রশ্মি আমাদের পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, বর্তমানে এর ব্যবহারের নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। বিশেষকরে চিকিৎসা এবং শিল্পক্ষেত্রে রশ্মির দ্বারা মানবজাতির অনেক উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমাদের রশ্মি কাকে বলে এবং কোন কোন রশ্মি রয়েছে এই ব্যপারে জানা উচিত, এর সম্ভাবনাময় দিকগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


আশাকরি আজকের এই কন্টেন্ট থেকে রশ্মি কাকে বলে এবং রশ্মি সম্পর্কে প্রায় অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। আরও কিছু জানতে কমেন্ট করতে পারেন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

প্রধানত রশ্মি তিন ধরনের হতে পারে—

  1. আলোক রশ্মি
  2. তাপ রশ্মি
  3. তড়িৎচুম্বকীয় রশ্মি

আলোর সঞ্চালনের সরল পথকে আলোক রশ্মি বলা হয়। এটি কোনো মাধ্যমের মধ্যে সোজা পথে চলে এবং প্রতিবন্ধকের সংস্পর্শে প্রতিফলন বা প্রতিসরণ ঘটাতে পারে।

এটি এমন একধরনের শক্তি প্রবাহ যা কোনো মাধ্যম ছাড়াই শূন্যস্থানে চলতে পারে, যেমন রেডিও রশ্মি, গামা রশ্মি, এক্স-রে ইত্যাদি।

সূর্যের রশ্মিতে আলোক রশ্মি, তাপ রশ্মি এবং তড়িৎচুম্বকীয় রশ্মি অন্তর্ভুক্ত থাকে।