রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এর সুবিধা অসুবিধাসমূহ

বাংলাদেশে তৈরি হওয়া বড় বড় কিছু প্রজেক্ট গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার পুরো নাম “মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট”। আমাদের আজকের এই কন্টেন্ট থেকে আমরা জানবো রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান, ক্ষমতা, সুবিধা-অসুবিধা এবং এটি তৈরির ইতিহাস সহ বিস্তারিত কিছু তথ্য।

 

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় অবস্থিত। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পশুর নদীর তীরে অবস্থিত।

 

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কারা তৈরি করেন?

২০১০ সালের জানুয়ারিতে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে ভারত এবং বাংলাদেশ। প্রকল্পটি বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি কতৃক পরিচালিত। 

 

এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন এর যৌথ মালিকানাধীন। ২০১৩ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ,সড়ক নির্মাণ এবং পুরো প্রকল্পটি নির্মানকার্য শুরু করে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি।

 

কখন চালু হয়

এই কেন্দ্রটি দুটি ইউনিটে বিভক্ত। প্রথম ইউনিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০২২ সালে। কয়লা সংকটের কারণে চালু হওয়ার ২৭দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় এই ইউনিটটি

 

তবে কিছুদিন পর কয়লা সংকট কেটে গেলে আবারও বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে এটি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে।

 

কে উদ্ধোধন করেন

২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এই কেন্দ্রের ইউনিট-১ উদ্ধোধন করেন।

 

কেন্দ্রটি কত মেগাওয়াট?

এই প্রকল্পের দুটি ইউনিটই ৬৬০ মেগাওয়াটের। দুই ইউনিট মিলিয়ে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট। বর্তমানে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে  প্রায় ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়।

 

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যয় কত?

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যয় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।

 

কেন্দ্রটি সুবিধা এবং অসুবিধা

এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যেমন আমাদের বিদ্যুৎ এর চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করছে ঠিক তেমনই এটি পরিবেশের এবং মানুষের কিছু ক্ষতি সাধন করছে। চলুন জেনে নিই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে আমরা কি কি সুবিধা পাচ্ছি এবং কি কি অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবিধা

 

  • এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যা আমাদের দেশের বিদ্যুৎ এর চাহিদা মেটাতে সহায়তা সহায়ক। 

  • এই বিদ্যুৎ তৈরি হওয়ায় অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এছাড়াও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

  • এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে, যা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

 

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অসুবিধা

  • এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তাই এর দ্বারা বাতাস এবং পানি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

  • এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা  থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার এই অবস্থিত তাই এটি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র এবং বাস্তুতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

  • কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ায় এটি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় যা জলবায়ু পরিবর্তনে সহায়ক।

 

আশা করি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে কিছু ধারনা পেয়েছেন নিশ্চয়ই। চলুন এখন জেনে নিই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অর্থনীতি, সমাজ এবং পরিবেশে কি কি প্রভাব ফেলছে।

 

অর্থনৈতিক প্রভাব

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রাখছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য লোকবল দরকার, এতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। 

 

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসা, অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও  এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আশেপাশে রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। রামপালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি হওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত হয়েছে।

 

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামাজিক প্রভাব

বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা উৎপাদন এর থেকে বেশি, তাই অনেক এলাকাতেই প্রচন্ড বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। রামপালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষ আগের থেকে বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছে। 

 

এই প্রকল্পটির মাধ্যমে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্পটির এলাকায় মানুষের জীবন মানে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রামপালে স্থাপনের শুরু থেকেই সেখানকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নের কাজ চলছে। 

 

কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (সিডি) এর আওতায় জনগণকে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থেকে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে।  এছাড়াও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

 

পরিবেশগত প্রভাব

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবন এর কাছাকাছি হওয়ায় এটি সুন্দরবনের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গত হয় যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

 

এছাড়াও কয়লা পোড়ানোর কারণে উৎপন্ন ছাই এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ মাটি ও পানিতে মিশে উদ্ভিদ, জলজ প্রাণীর ক্ষতি সাধন করতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে তরান্বিত করবে‌। 

 

বর্জ্য পদার্থ মাটিতে মিশে মাটির গুনগত মান হ্রাস করবে। পরিবেশের কথা ভাবতে গেলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিবেশের জন্য কিছুটা বিপদ ডেকে এনেছে এটি বলাই যায়।

 

পরিশেষে

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতিক চাহিদা আর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবাধ বিদ্যুতের ব্যবহারের বিকল্প নেই। এই বিদ্যু কেন্দ্রটি বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। 


আশা করি এই আর্টিকেল থেকে রামপাল বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিতে পারেন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন যেকোনো প্রয়োজনে।

Leave a Comment