বেশিরভাগ কিশোর কিশোরীদের ইন্টারনেট ব্যাবহারের দিকগুলি গোপন থাকতে পারে, তবে তাদের অবশ্যই অনলাইন বিপদ থেকে প্রোটেক্ট করা দরকার।
আপনি হয়তো কোন তথ্যের জন্য, কারো সাথে যোগাযোগের জন্য বা বিনোদনের জন্য ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করা শুরু করেছিলেন। বিভিন্ন জরীপে দেখা যায় যে, যখন সোস্যাল মিডিয়া, অনলাইন গেমিং, অনলাইন মাল্পিপ্লেয়ার আবিষ্কার হতে থাকে তখন অনেক ব্যাবহারকারীই প্রাপ্তবয়স্ক ছিলো।
প্রকৃতপক্ষে আমি সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি। এজন্য অফলাইনে আমার বন্ধুদের একটা সার্কেল ছিলো আবার অনলাইনে নতুন বন্ধু খুজেঁ বের করারও উপায় ছিলো।
বর্তমান যুগটা আসলে এমন এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে যে, বাচ্চাদের জন্য অফলাইন বন্ধু এবং অনলাইন বন্ধু আলাদা করা সত্যিই অসম্ভব হয়ে গেছে। কেননা বর্তমান সময়ের স্কুলের বাচ্চারাই অনলাইনে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে।
বাচ্চারা অনলাইন দুনিয়ায় প্রবেশ করে সেখান থেকে বিনোদন গ্রহন করে, একে অপরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তাদের ব্যাক্তিগত পরিচয় তৈরি করা শুরু করে।
বিশ্বের বাচ্চাদের উপর McAfee এর একটি সমীক্ষা অনুসারে দেখা যায় যে, ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যেই তারা মোবাইল ডিভাইসে নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেটে থাকা সবকিছুর অ্যাক্সেসও সে পেয়ে যাচ্ছে।
নিরাপত্তা কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট শচীন পুরির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, তিনি বলেন বাচ্চারা সাইবার বুলিং, অনলাইন অ্যাকাউন্ট চুরি এবং ব্যক্তিগত ডেটার অননুমোদিত ব্যবহারের মতো সাধারণ অনলাইন বিপদগুলি এড়াতে চায়, কিন্তু কিভাবে নিরাপদ থাকা যায় তা তারা জানে না।
কিশোর-কিশোরীরা অনলাইনে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে চায় এতে করে পিতামাতার কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়, তাই নয় কি? অবশ্যই না। সমীক্ষায় দেখা যায় যে অর্ধেকেরও বেশি (৫৯শতাংশ) বলেছেন যে তারা তাদের ব্রাউজারের হিস্টোরি ক্লিন করে তাদের অ্যাক্টিভিটি হাইড করে রাখে।
চ্যাট মেসেজ এবং ভিডিওগুলি হাইড বা ডিলিট করে ফেলা, Incognito মোডে ব্রাউজ করা অথাব এমন একটি ডিভাইস ব্যবহার করা যা তাদের বাবা মা চেক করেন না। অথবা বাবা মায়ের সাথে কথাবার্তার সময় এই বিষয়টিকে গোপন রাখেন বা মিথ্যা বলেন।
সুতরাং এক্ষেত্রে বাবা মা তার সন্তানকে অনলাইন বিপদ থেকে সুরক্ষিত রাখতে কী করতে পারে?
উপরের প্রশ্নের পরিপেক্ষিতে যদি বলি তবে এর সর্বোত্তম উত্তর হবে প্রতিটি পরিবারে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা যেখানে বাচ্চারা অনলাইন কার্যকলাপ সম্পর্কে অভিভাবকদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দে আলোচনা করতে পারবে। যদিও সামাজিক পরিপেক্ষিতে এটি একটি কঠিন কাজ।
এটি এমন হতে পারে যে, মোবাইল ফোন ব্যাবহারে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া বা নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি সফ্টওয়্যার ইনস্টল করার ব্যাপারে সবার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা।
এরপরে পিতামাতার উচিত নিয়মিতভাবে অনলাইন সুরক্ষার ব্যাপারটি তদারকি করা। আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মাত্র ৫৬শতাংশ অভিভাবক বলেছেন যে তারা তাদের ফোনটিকে পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত রাখে। আবার তাদের সন্তানদের মালিকানাধীন স্মার্টফোনের জন্য এই সংখ্যাটি মাত্র ৪২শতাংশ।
যদি একটি আনলক করা ফোন যদি হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায় তবে এটা থেকে আপনার তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে বা আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলিও হ্যাক হয়ে যেতে পারে। পরিবারের সবার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলি ট্রাক রাখতে একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন।
একটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন যাতে বাচ্চারা আপনার বাড়ির ডিভাইসগুলি ব্রাউজ করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত না হয়। বিপদজ্জনক ওয়েবসাইট ব্যাবহার করা থেকে বাচ্চাদের বিরত রাখতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফ্টওয়্যার ব্যাবহার করুন।
পুরী আরো বলেছে যে, সাইবার বুলিং, হ্যাকিং এবং ফিশিং অ্যাটেম্পগুলির জন্য কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় তা সব বাচ্চাদের শেখানো গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে মেয়েদেরকে সাধারণত ছেলেদের তুলনায় অনলাইনে বেশি সুরক্ষিত রাখে বাবা মা, কিন্তু ছেলেরাই অনলাইনে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়।
প্রায় ২৩শতাংশ বাবা মা বলেছেন যে তারা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী তাদের মেয়ের পিসিতে ব্রাউজিং এবং ইমেইল হিস্টোরি পরীক্ষা করেন। যেটা ছেলেদের জন্য মাত্র ১৬শতাংশ। আবার দেখা যায় যেখানে মেয়েদের জন্য ২২শতাংশ বাবা মা নির্দিষ্ট সাইটের অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করে দেয় সেটা ছেলেদের জন্য মাত্র ১৬শতাংশ।
আমাদের প্রতেক্যের উচিত এই বিষয়গুলিতে আরো খেয়াল রাখা এবং আমাদের শিশুদের রক্ষা করা। পারিবারিক সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য পিতামাতার একটি পরিকল্পনা থাকে, আপনি সেটা অনুসরণ করতে পারেন।
অনলাইনে কিভাবে আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দিবেন
আপনার পারিবারিক পরিকল্পনা কেমন হবে? এখানে ৬টি তালিকা দেওয়া হয়েছে আপনি এটা অনুসরণ করতে পারেন:
নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন তা জানুন
অ্যান্টিভাইরাস হল অনলাইন সুরক্ষার একটি ভিত্তি, কিন্তু একটি সফ্টওয়্যার সিকিউরিটি স্যুট আপনার কম্পিউটার এবং মোবাইল ডিভাইস উভয়ের নিরাপত্তা প্রদান করে।
ফায়ারওয়াল প্রটেকশন, পাসওয়ার্ড ম্যানেজার, ফিশিং ডিটেকশন এবং ভিপিএন এই সবকিছু নিয়েই একটি সিকিউরিটি স্যুট তৈরি হয়।
অনলাইনে আপনার আইডেন্টিটি কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন তা জানুন
McAfee’s এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৫শতাংশ শিশু অ্যাকাউন্ট চুরির চেষ্টা করেছে। যেখানে ২৮শতাংশ অভিভাবক এটা রিপোর্ট করেছেন যে এটা তাদের সাথেই ঘটেছে।
একটি আইডেনটিটি প্রটেকশন সার্ভিস অননুমোদিত বা সন্দেহজনক অ্যাক্টিভিটি থেকে আপনার পরিবারের অ্যাকাউন্ট এবং ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখতে পারে।
আপনার ডিভাইস সুরক্ষা করার জন্য সময় নিন
আপনার পরিবারের মোবাইল ডিভাইসগুলিকে পিন, ফিঙ্গার প্রিন্ট বা অন্যান্য সুরক্ষা যেমন ফেসিয়াল রিকগনিশন পদ্ধতিগুলি থেকে যে কোনটি দিয়ে লক করুন বা উভয় পদ্ধতিই ব্যাবহার করুন।
যদি সম্ভব হয় তবে অ্যাপগুলির জন্য মাল্টি–ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করুন।
অ্যাকাউন্টগুলিতে শক্তিশালি পাসওয়ার্ড সেট করুন
প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করুন। এটি হ্যাকারদের একাধিক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার কাজকে কঠিন করে তোলে।
একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার জন্য নতুন এবং শক্তিশালি পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করার কাজকে সহজ করে তুলবে।
ডিভাইস এবং সফ্টওয়্যারকে আপডেটেড রাখুন
আপনার উচিত অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে সর্বদা আপডেটেড রাখা, এটি আপনাকে হ্যাকারদের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে থাকতে সহায়তা করবে।
অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপগুলি আপডেট করার কারণে এর মধ্যে অন্তনিহিতনিরাপত্তা ব্যাবস্থাটি আপনার ডিভাইসটিকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
আপনার পরিবারের সাথে কথা বলুন
আপনি যখন আপনার বাচ্চাদের সাথে কথা বলবেন তখন অনলাইনের প্রসঙ্গেও কথা তুলুন। তাদের জিজ্ঞেস করুন অনলাইনে কি ঘটছে এসব সম্পর্কে।