বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির কারণে সফটওয়্যারের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সফটওয়্যার ব্যবহার করে আসছি। কম্পিউটারে যেমন আমরা বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করছি একইভাবে মোবাইল ফোনেও আমরা বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। এই আর্টিকেলে আমরা সফটওয়্যার কাকে বলে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক।
সফটওয়্যার কাকে বলে
সফটওয়্যার হলো কিছু প্রোগ্রামের সমষ্ঠি যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ সম্পন্ন করতে পারে। সফটওয়্যার নির্দেশ প্রদান যে কম্পিউটার বা কম্পিউটারের মত ডিভাইসগুলো কিভাবে কাজ করবে। সফটওয়্যারগুলো তৈরি হয় বাইনারি(শূন্য এবং এক) ভাষা দিয়ে, যা একজন প্রোগ্রামারে জন্য কঠিন হয়ে যায় ।
অতএব, সফটওয়্যার প্রোগ্রামাররা সফটওয়্যার প্রোগ্রামটি মানুষের বোধগম্য বিভিন্ন ভাষা দিয়ে লিখে থাকে যেমন জাভা, পাইথন, C# ইত্যাদি।
সফটওয়্যার কত প্রকার
আমাদের সফটওয়্যার কাকে বলে জানতে হলে এর প্রকারগুলোও জানা জরুরী। সফটওয়্যার প্রধানত দুই প্রকার যথা: সিস্টেম সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
সিস্টেম সফটওয়্যার কাকে বলে
সিস্টেম সফটওয়্যার হলো এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যেখানে একজন ব্যবহারকারী সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার চালাতে পারে এবং এটি সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের মধ্যে ইন্টার কানেকশন তৈরি করে।
এটি কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্রমাগত চলতে থাকে এরফলে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, ইউটিলিটি সফটওয়্যারসহ কম্পিউটারের মৌলিক কার্যকারিতা বজায় থাকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে সফটওয়্যারটি ব্যবহারকারি এবং হার্ডওয়্যারের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে।
সিস্টেম সফটওয়্যারটি শুধুমাত্র অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যেই সীমাব্ধ নেই। এর মধ্যে রয়েছে বেসিক I/O সিস্টেম পদ্ধতি, বুট প্রোগ্রাম, অ্যাসেম্বলার, কম্পিউটার ডিভাইস ড্রাইভার ইত্যাদি। এজন্য সিস্টেম সফটওয়্যারটি একটি কম্পিউটারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ।
যখন একটি কম্পিউটার চালু করা হয় তখন প্রথমেই সিস্টেম সফটওয়্যারগুলো মেমরিতে লোড হয়। সিস্টেম সফটওয়্যার লো-লেভেল সফটওয়্যার নামেও পরিচিত কারণ একজন এন্ড ইউজার বা কম্পিউটার ব্যবহারকারী এগুলো অপারেট করেনা। সিস্টেম সফটওয়্যারের আরো প্রকারভেদ রয়েছে চলুন আমরা জেনে নেই তাহলে সফটওয়্যার কাকে বলে এ সম্পর্কে আরো গভিরভাবে জানতে পারবো।
অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার কাকে বলে
অপারেটিং সিস্টেম হলো সিস্টেম সফটওয়্যারের সবচেয়ে বেসিক এবং কমন উদাহরণ। সিস্টেম সফটওয়্যারটি সাধারণত ব্যবহারকারী এবং হার্ডওয়্যারের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে।
এটি এমন একটি সফটওয়্যার বা সফটওয়্যার গ্রুপ যা একজন ব্যবহারকারির জন্য সাধারণ কাজগুলো করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সফটওয়্যার রয়েছে যেমন:
কম্পিউটারের জন্য
Microsoft Windows
Apple’s MacOS
CentOS
Linus
Ubuntu
Unix
মোবাইলের জন্য
Android
Apple’s iOS
BlackberryOS
Windows Mobile Operating System
ডিভাইস ড্রাইভার সফটওয়্যার কাকে বলে
ডিভাইস ড্রাইভার হলো এমন ধরনের সফটওয়্যার যা আপনার সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হার্ডওয়্যার ডিভাইসগুলোকে পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধরনের ডিভাইস ড্রাইভারের কিছু উদাহরণ হলো যা হার্ডওয়্যারগুলোকে (প্রিন্টার, সাউন্ড কার্ড, নেটওয়ার্ক কার্ড, হার্ড ডিস্ক, কি-বোর্ড, মাউস ইত্যাদি) সহজেই সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করে।
BIOS
USB
Motherboard Drivers
Display Drivers
Printer Drivers
Sound Card Driver
ROM
VGA
ফার্মওয়্যার সফটওয়্যার কাকে বলে
এই ধরনের সফটওয়্যারগুলো স্থায়ীভাবে সিস্টেমের ROM এ ইমবেডেড করা হয়ে থাকে যা লো-লেভেল হার্ডওয়্যার ডিভাইসগুলোকে কন্ট্রোল করে থাকে। এটি অনেকগুলো ইনস্ট্রাকশনের সেট যেগুলো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ডিভাইসে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
ফার্মওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহারকারী কিছু ডিভাইসের নাম উল্লেখ করা হলো:
Computer Peripherals
Consumer Appliances
Embedded System
UEFI ( United Extensible Firmware Interface)
BIOS
ইউটিলিটি সফটওয়্যার কাকে বলে
ইউটিলিটি সফটওয়্যারগুলো একটি কম্পিউটারকে কনফিগার, মেইনটেইন, অ্যানালাইজ এর মত কাজগুলোর সহায়তা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ইউটিলিটি প্রোগ্রামের কাজ হল সিস্টেমের অবকাঠামোতে সহায়তা করা।
এমন না যে ইউটিলিটি সফটওয়্যার না থাকরে আমাদের সিস্টেম কাজ করবেনা। বরং এটি এজন্য ব্যবহার করা হয় কারন এটি সফটওয়্যারের পারফরম্যান্স বাড়ায় এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
নিচে ইউটিলিটি সফটওয়্যারের উদাহরণ দেওয়া হলো:
Norton and McAfee Antivirus
WinRAR
Directory Opus
WinZip
Disk defragmenter
Razer Cortex
Windows File Explorer
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কাকে বলে
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হলো একজন এন্ড ইউজারের এমন একটি কম্পিউটর প্রোগ্রাম যা সাধারণত ব্যবহারকারীরির নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করা হয়। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলির মাধ্যমেই একজন ব্যবহারকারি তার সকল কাজগুলো করে থাকে।
এসব কাজের মধ্যে রয়েছে অনলাইন গবেষণা, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, মুভি দেখা, ডকুমেন্টস লিখা, গেমস খেলা এছাড়াও অনেক কিছু।
এসকল সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহারকারীর সম্ভাব্য চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কোম্পানিগুলো প্রতিবছর ডিজাইন বা আপডেট করে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার পাওয়া যায়। এছাড়া ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোও বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কাকে বলে।
ওয়ার্ড প্রসেসর সফটওয়্যার কাকে বলে
ওয়ার্ড প্রসেসর সফটওয়্যারগুলি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ডকুমেন্টেশন, নোট তৈরি এবং ডাটা টাইপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি একজন এন্ড ইউজারকে ডাটা সংরক্ষণ এবং ফরম্যাট করতেও সহায়তা করে। এটি ব্যবহার করে একজন ব্যবহারকারী তার ডকুমেন্ট প্রিন্টও করতে পারে।
ওয়ার্ড প্রসেসর সফটওয়্যারের কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক:
MS Word
iWork-Pages (Apple)
Corel WordPerfect
Google Docs
ডাটাবেজ সফটওয়্যার কাকে বলে
ডাটাবেজ সফটওয়্যারটি সাধারণত অনেক পরিমাণ ডাটা তৈরি করা, ম্যানেজ করা, মডিফাই করা, অর্গানাইজ করা বা পুনরুদ্ধার করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডাটাবেজ সফটওয়্যারটির আরেক নাম ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম(DBMS)। এই ধরনের সফটওয়্যারগুলি তাদের কোম্পানির ডাটা অর্গানাইজ করে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডাটাবেজ সফটওয়্যারের কিছু উদাহরণ
Oracle
MS Access
SQLite
Postfre SQL
Microsoft SQL Server
FileMaker
dBase
MariaDB
MySQL
Razor SQL
Informix
ওয়েব ব্রাউজার
ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে যেসকল সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় সেগুলোকেই সাধারণত ওয়েব ব্রাউজার বলে। ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেটের প্রায় সকল কাজ করতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা ডাটা আদান-প্রদানের কাজও করতে পারি।
কমন কিছু ওয়েব ব্রাউজারের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:
Google Chrome
Mozilla Firefox
Microsoft Internet Explorer
Opera
Microsoft Edge
UC Browser
Apple Safari
Brave
SeaMonkey
সফটওয়্যারের আরো এক প্রকার শ্রেণীবিভাগ রয়েছে এর প্রাপ্যতা নিয়ে। চলুন সেগুলোও দেখে আসি।
ফ্রিওয়্যার
ফ্রিওয়্যার সফটওয়্যার বলতে সাধারণত যেগুলো আমরা আনলিমিটেড সময়ের জন্য ফ্রি ব্যবহার করতে পারি সেগুলোকেই বোঝায়। যে কোনো ব্যবহারকারী যে কোনো সময় ইন্টারনেট থেকে সহজেই তার প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারে এবং কোনো প্রকার ফি ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার শুরু করতে পারে।
সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো সাধারত অনেক মানুষের নিকট পৌছানোর কৌশল হিসেবেই ফ্রি সফটওয়্যার ডিজাইন করে বাজারে ছাড়ে। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:
Adobe Reader
Zoom
Skype
ImgBurn
Audacity
Whatsapp
Messanger
Anydesk
শেয়ারওয়্যার
শেয়ারওয়্যার সফটওয়্যার বলতে বোঝায় এমন সকল সফটওয়্যারকে যেগুলো কিছুদিনের জন্য আমরা ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারি ট্রায়াল ভার্সনে। এরপর নির্দিষ্ট মেয়াদের পর চালাতে গেলে আমাদের টাকা দিয়ে চালাতে হয়। যদিও এমন সকল সফটওয়্যার আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ট্র্যাক কোড ব্যবহার করে মেয়াদ শেষেও ফ্রিতে চালাই।
আশা করি সফটওয়্যার কাকে বলে এই আর্টিকেলটি পরে আপনি এটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ব্লগটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সেই সাথে আপনার যে কোনো ধরনের মতামত বা পরামর্শর জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।