সাইবার সিকিউরিটি কি

বর্তমানে আমরা তথ্য প্রযুক্তি যুগে বসবাস করছি। তথ্য প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটের সাথে যেন আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছি। এজন্য সাইবার সিকিউরিটি কি এ সম্পর্কেও আমাদের ভালো ধারণা রাখতে হবে। যেন অনলাইনে কেউ আমাদের কোনো ক্ষতিগ্রস্থ করতে না পারে। 


দেখা যা যে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন কৃষকও সারাদিন কাজ সেরে এসে রাত্রিবেলা একটু ফেসবুক বা ইউটিউবে ঢুকে বিভিন্ন ভিডিও দেখে। অথবা কেউ কেউ পড়াশোনা তেমন না জানলেও অনলাইনের বিভিন্ন গেম খেলায় আসক্ত হয়ে গেছে। এইযে এতো এতো ইন্টারনেটের ব্যাবহার এর যেমন সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে।


তাই, এর অসুবিধা বা ক্ষতিকর বিষয়গুলিকে কিভাবে মোকাবেলা করতে পারি তার উপর ভিত্তি করেই লিখা আমার এই সাইবার সিকিউরিটি কি এই ব্লগটি। আশা করি আপনারা ইন্টারনেট জগত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছুটা ধারণা পাবে।

সাইবার সিকিউরিটি কি

সাইবার সিকিউরিটি হলো কম্পিউটার, সার্ভার, মোবাইল, ইলেকট্রনিক সিস্টেম, নেটওয়ার্ক এবং ডাটাকে ক্ষতিকারক আক্রমণ থেকে রক্ষা করার একটি টেকনিক। আমরা সাইবার সিকিউরিটি কে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি, এর একটি হলো সাইবার আরেকটি হলো সিকিউরিটি। 

সাইবার বলতে সেই টেকনোলোজিকেই বোঝায় যেখানে সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, প্রোগ্রাম এবং ডাটা অন্তর্ভক্ত থাকে। এবং সিকিউরিটির ব্যাপারটি সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটির সাথে সম্পর্কিত। কিছু ক্ষেত্রে একে ইলেকট্রনিক ইনফরমেশন সিকিউরিটিও বলা হয়।

সাইবার সিকিউরিটি কি গুরুত্বপূর্ণ

আমরা সবাই জানি যে বর্তমানে আমরা কতটা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। জিমেইল, ফেসবুক, ম্যাসেন্জার, হোয়াটস আপ সহ কত কত ইন্টারনেট সাইটে আমাদের ডাটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। 

এসব ডাটা যদি কোন দুষ্ট লোকের হাতে পড়ে যায় তবে চাইলে আমাদের কোন ক্ষতিও তারা করে দিতে পারে। 

তাই আজকের ডিজিটাল বিশ্বে, কেউ সাইবার নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করতে পারেনা। একজনের একটু নিরাত্তার ঘাটতির কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। এরফলে কোম্পানিগুলি বিশাল অঙ্কের যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয় সেই সাথে গ্রাহকদের বিশ্বাসও হারায়।

তাই আমাদের ব্যাবসা বা ব্যাক্তিগত তথ্য রক্ষার্থে সাইবার সিকিউরিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 সাইবার সিকিউরিটির ধরণ

 

আমরা জানি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ হলো সেই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সিস্টেমের সংমিশ্রণ। এসব সিস্টেমে দূর্বল সিকিউরিটি সিস্টেম থাকতে পারে যার জন্য অবশ্যই সিস্টেমটিকে সিকিউরিটির দিক দিয়ে আরো উন্নত করা প্রয়োজন। নিচে সাইবার সিকিউরিটির কিছু ধরণ উল্লেখ করা হলো:

 

নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি

এটি একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে আনঅথোরাইজড অ্যাক্সেস, অনুপ্রবেশকারী, আক্রমণ, ব্যাঘাট এবং অপব্যবহার থেকে হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যারকে সুরক্ষিত রাখার সাথে জড়িত। 

এই সিকিউরিটি একটি অর্গানাইজেশনকে তার সম্পদকে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ হুমকির বিরুদ্ধে রক্ষা করে।

 

অ্যাপ্লিকেশন সিকিউরিটি

এটি ডিভাইসের অ্যাপ্লিকেশন বা সফ্টওয়্যারকে অবাঞ্চিত থ্রেড থেকে রক্ষা করে। আক্রমণ থেকে অ্যাপগুলি নিরাপদ রাখতে ক্রমাগত আপডেট করা যেতে পারে। 

 

একটি প্রোগ্রাম বা ডিভাইস পুরোপুরি পাবলিক করার পূর্বে এর ডিজাইন স্টেজ, সোর্স কোড, ভ্যালিডেশন বা থ্রেড মডেলিং থেকেই এর সিকিউরিটি শুরু হয়।

 

ইনফরমেশন বা ডাটা সিকিউরিটি

এটি ইনফরমেশন বা ডাটা সিকিউরিটির জন্য স্টোরেজ এবং ট্রানজিট উভয় ক্ষেত্রেই ডাটার ইন্ট্রিগ্রিটি এবং গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য একটি শক্তিশালী ডাটা স্টোরেজ মেকানিজম বাস্তবায়ন করে।

 

 

আইডেটিটি ম্যানেজমেন্ট

এটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন ব্যাক্তির ডাটা অ্যাক্সেসের স্তর নির্ধারণের কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একজন সাধারণ অফিসারের যে পারমিশন থাকে ডাটা অ্যাক্সেস করার জন্য তার চেয়ে অনেক বেশি থাকে তার ম্যানেজারের জন্য। 

কেননা ম্যানেজার তার নিজের ডাটাও দেখে আবার তার অধিনস্থ যেসব অফিসাররা আছে তাদের ডাটাও দেখে।

 

 

অপারেশনাল সিকিউরিটি

 

এটি সাধারণত ডাটা সম্পদটি সুরক্ষার জন্য পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ করে। 

মোবাইল সিকিউরিটি

বর্তমানে মানুষ সবচেয়ে বেশি যে ডিভাইসটি ব্যবহার করে তা হলো স্মার্টফোন। এক গবেষণায় দেখা যায়, একজন মানুষ প্রতিদিন প্রায় ৩ঘন্টা ১৫মিনিট সময় মোবাইলের পিছনে ব্যায় করে। 

তাই প্রতিদিন মোবাইল ফোনেই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সব ডাটাগুলি স্টোর হয়ে থাকে। তাই মোবাইল সিকিউরিটি আমাদের জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

মোবাইল সিকিউরিটি হলো বিভিন্ন ধরণের ম্যালিসিওস থ্রেড থেকে মোবাইল ডিভাইস, কম্পিউটার, ট্যাবলেটসহ অন্যান্য অনুরূপ ডিভাইসগুলিকে সংরক্ষিত করা। 

এই থ্রেডগুলি হলো আনঅথোরাইজড অ্যাক্সেস, ডিভাইস হারানো বা চুরি এবং ম্যালওয়্যার ইত্যাদি।

 

 ক্লাউড সিকিউরিটি

এটি একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল পরিবেশ বা ক্লাউড আর্কিটেকচারে সংরক্ষিত ইনফরমেশন সুরক্ষার কাজ করে।

এটি বিভিন্ন ধরনের থ্রেডের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ক্লাউড সার্ভিস যেমন AWS, Azure এবং Google এর মত সার্ভিসগুলি ব্যাবহার করে।

ডাটা রিকোভারি এবং ব্যাবসার ধারাবাহিকতার পরিকল্পনা

এটি প্রসেস, মনিটরিং, সতর্কতা এবং কোন ম্যালিসিওস সংগঠিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে।

 

সাইবার সিকিউরিটির লক্ষ

সাইবার সিকিউরিটির মূললক্ষ হলো ডাটার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সিকিউরিটি সম্প্রদায় সাইবার আক্রমণ থেকে ডাটা রক্ষা করার জন্য তিনটি ত্রিভুজ নীতি প্রদান করে। এই নীতিকে CIA ট্রায়াড বলা হয়। 

CIA মডেলটি একটি প্রতিষ্ঠানের ইনফরমেশন সিকিউরিটি নীতি নির্দেশ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যখন কোন সিকিউরিটির ক্রুটি পাওয়া যায়, তখন দেখা যায় এর একাধিক সিকিউরিটি লঙ্ঘ করা হয়েছে। 

CIA মডেলটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় যথাকনফিডেনশিয়ালিটি, ইনটিগ্রিটি এবং অ্যাভেইলেবিলিটি। চলুন এগুলি সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানা যাক।

কনফিডেনশিয়ালিটি

কনফিডেনশিয়ালিটি হলো প্রাইভেসি এর সমতুল্য যা তথ্যের অননুমোদিত অ্যাক্সেস এড়াতে সাহায্য করে। এটি এটা নিশ্চিত করে যে ডাটা তারাই অ্যাক্সেস করতে পারবে যাদের অ্যাক্সেস করার অনুমতি রয়েছে, এছাড়া অন্যদের ব্লক করে রাখবে। 

এটি কোন প্রয়োজনিয় তথ্য ভুল মানুষের হাতে পৌছাতে বাধা দেয়। ডাটার গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য এনক্রিপশন একটি চমৎকার উদাহরণ।

ইন্ট্রিগ্রিটি

 

ইন্ট্রিগ্রিটি এটা নিশ্চিত করে যে ডাটা অথেনটিক, অ্যাকুরেট থাকবে অননুমোদিত ব্যাক্তির মোডিফিকেশন থেকে। ডাটার কোন প্রকার পরিবর্তন ঘটলে বা ক্ষতি থেকে সংবেদনশীল ইনফরমেশনকে রক্ষা করার জন্য কিছু ব্যাবস্থা গ্রহণ করা উচিত। 

অ্যাভেইলেবিলিটি

এই নীতিটি ইনফরমেশনকে সর্বদা তার অনুমোদিত ব্যক্তিদের জন্য অ্যাভেইলেবল এবং ব্যাবহার উপযোগি করে তুলে।

সাইবার সিকিউরিটি থ্রেডের প্রকারভেদ

সাইবার সিকিউরিটির জন্য থ্রেড হলো কোন ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা ডাটা নষ্ট বা চুরি করা, নেটওয়ার্কের অ্যাক্সেস নিয়ে নেওয়া বা সাধারণ কাজকর্মকে ব্যাহত করার জন্য একটি ম্যালিসিওস বা দূষিত কার্যকলাপ। 

 

 

চলুন তাহলে সাইবার সিকিউরিটি কি এর এই পর্যায়ে এটি সম্পর্কে একটু বোঝার চেষ্টা করি।

 

Types of Cyber Threats

ম্যালওয়্যার

ম্যালওয়্যার হলো একধরণের দূষিত সফ্টওয়্যার, যা সবচেয়ে কমন সাইবার আক্রমণকারী টুল। এটি হ্যাকাররা সাধারণ ব্যাবহারকারীদের কাজ ব্যাহত করার জন্য বা হ্যাক করার জন্য ব্যাবহার করে থাকে। 

 

হ্যাকার দ্বারা তৈরি বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যালওয়্যার নিচে উল্লেখ করা হলো:

 

 

ভাইরাসের নাম নিশ্চয় আমরা সবাই শুনেছি বা এটি সম্পর্কে অনেকটাই আইডিয়া আছে। এটি একটি দূষিত কোড যা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ছড়িয়ে পড়ে। 

 

সাইবার সিকিউরিটি কি এটি সম্পর্কে জানার জন্য ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। এটি আপনার ডিভাইসে ঢুকে আপনার ফাইলগুলিকে ক্লিন করে দিতে পারে এবং আপনার পুরো সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

 

এমনকি এটি আপনার ডিভাইসের তথ্য চুরি বা ক্ষতিও করতে পারে।

 

স্পাইওয়্যার

এটি এমন একটি সফ্টওয়্যার যেটি গোপনে কোন ইউজারের সিস্টেমে প্রবেশ করে সকল ধরনের কার্যকলাপের তথ্য রেকর্ড করে। উদাহরণস্বরূপ, স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডের গোপন তথ্য ক্যাপচার করে অননুমোদিত শপিং এবং টাকা withdraw করে নেওয়া সম্ভব। 

 

সাইবার সিকিউরিটি এর জন্য এটি খুবই মারাত্মক সফ্টওয়্যার কেননা এটা আমাদের অজান্তে আমাদের ক্ষতি করে।

 

 

টরজান

এটি এমন একটি ম্যালওয়্যার কোড বা সফ্টওয়্যার যা আমরা অরিজিনাল সফ্টওয়্যার মনে করে ইনস্টল করি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আসলে আমাদের উপকারী কোন সফ্টওয়্যার নয়। 

এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো আমাদের ডিভাইসে প্রবেশ করে ডাটা ফাইল চুরি বা নষ্ট করা বা আমাদের অন্যান্য কার্যকলাপকে ব্যাহত করা।

র‌্যানসমওয়্যার

 

এটি এমন একটি সফ্টওয়্যার যা একটি ডিভাইসে প্রবেশ করে ব্যাবহারকারীর ফাইল এবং ডাটা এনক্রিপ্ট করে সেগুলি অব্যাবহারযোগ্য বা মুছে দেয়। এরপর নষ্ট করা ফাইলগুলি ফেরত দেবার শর্ত হিসেবে আর্থিক মুক্তিপণ দাবি করে।

 

ওর্মস (Worms)

 

এটি এমন একটি সফ্টওয়্যার যা মানুষের কোন প্রকার ইন্টারেকশন ছাড়াই নিজে নিজেই ডিভাইস থেকে ডিভাইসে ছড়িয়ে পরে। ডাটা চুরি বা ক্ষতি করার জন্য তাদের কোন প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত হবার প্রয়োজন পড়েনা।

 

অ্যাডওয়্যার

 

 এটি একটি বিজ্ঞাপনের সফ্টওয়্যার যা ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দিতে এবং ডিভাইসে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। এটি অনাকাঙ্খিত প্রোগ্রাম যেটা ব্যাবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ইনস্টল হয়ে যায়।

 

বটনেট

এটি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ম্যালওয়্যারসংক্রমিত ডিভাইসগুলির একটি সংগ্রহ যা সাইবার অপরাধীদের তাদের কন্ট্রোল দিয়ে দেয়। 

এতে করে সাইবার অপরাধীরা ব্যাবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ডিভাইস থেকে ক্রেডেনশিয়াল লিক, অননুমোদিত অ্যাক্সেস এবং ডাটা চুরি করতে সক্ষম।

 

ফিসিং

ফিসিং হলো এক ধরনর সাইবার ক্রাইম যেখানে প্রেরককে Paypal, bKash,Nagad বা ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোন বন্ধু এবং কোন সহকর্মীর কাছ থেকে এসেছে বলে মনে হয়। 

তারা ইমেইল, ফোন অথবা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে একটি লিঙ্ক পাঠায় এবং সেই লিঙ্কে ক্লিক করতে রাজি করায়। 

এই লিঙ্কগুলি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং এবং ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, সামাজিক নিরাপত্তা নাম্বার, ব্যাবহারকারীর নাম, পাসওয়ার্ডের মতো সংবেদনশীল ডাটাগুলি হ্যাক করে নিতে পারে। 

লিঙ্কে ক্লিক করার সাথে সাথে একটি ম্যালওয়্যার সফ্টওয়্যার ব্যাবহারকারীর ডিভাইসে ইনস্টল হয়ে যায় এবং হ্যাকার গোপনে ব্যাবহারকারীর ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

ম্যান-ইন-দ্যা-মিডেল অ্যাটাক

সাইবার সিকিউরিটির এর ম্যান ইন দ্যা মিডেল অ্যাটাক হলো এমন এক ধরনের অ্যাটাক যেখানে একজন সাইবার অপরাধী দুটি ডিভাইসের মধ্যবর্তীতে অবস্থান করে দুই ডিভাইসের স্বাভাবিক কমিউনিকেশনে বাধা দেয়। 

এটি দুটি ডিভাইসের মাঝে নিজেদের সেট করে। ফলে তাদের প্রকৃত ডিভাইস বলেই মনে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোন ডিভাইস থেকে তথ্য আসলে সে মাঝখানে থেকে সেটি রিসিভি করতে পারে এবং পরবর্তীতে রেসপন্স দিতে পারে। 

এটির ফলে তথ্য প্রেরণকারী বুঝতে পারেনা যে তথ্যটি সঠিক ব্যক্তির নিকট পৌছেছে কিনা। 

এই ধরনের আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের ব্যাবসা বা ব্যাবহারকারীর ডাটা অ্যাক্সেস করা। এটি মারাত্মকধরণের অ্যাটাক। তাই সাইবার সিকিউরিটি কি এটি বোঝার জন্য যেমন এটি গুরুত্বপূর্ণ আবার এগুলি থেকে নিজের সুরক্ষার জন্য জানাও প্রয়োজন।

ডিস্ট্রিবিউটেড ডেনিয়াল অফ সার্ভিস (DDoS)

এটি এমন একটি সিস্টেম যেখানে অনেকগুলি ডিভাইস ব্যাবহার করে একটিমাত্র ডিভাইসকে টার্গেট করা হয়। অনেকগুলি ডিভাইস থেকে রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে সিস্টেমকে অকেজো করে দেওয়া হয়। 

 

আর এর ফলে সার্ভার থেকে আপনার ওয়েবসাইটটিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় ফলে কেউ আর সাইটটি ভিজিট করতে পারেনা।

 

 

ব্রুটফোর্স

ব্রুটফোর্স আক্রমণ হলো এমন একটি সিস্টেম যেখানে আক্রমণকারি সঠিক পাসওয়ার্ড বের না হওয়া পর্যন্তু ক্রিপ্টোগ্রাফিক ভাবে চেষ্টা চালাতে থাকে। অর্থাৎ একটির পর একটি সম্ভাব্য সমস্ত পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা চালাতে থাকে। 

 

সাইবার অপরাধীরা সাধারণত ব্যাক্তিগত তথ্য যেমন এনক্রিপশন কি, ব্যাক্তিগত আইডেনটিফিকেশন নাম্বার, সোস্যাল মিডিয়ার কার্যকলাপ ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই আক্রমণটি ব্যাবহার করা হয়।

 

SQL ইনজেকশন

SQL ইনজেকশন হলো একটি কমন অ্যাটাক যা সাইবার আক্রমণকারীরা সেনসিটিভ ডাটা অ্যাক্সেস করার জন্য ব্যাবহার করে থাকে। এখানে অপরাধীরা ওয়েব ফর্ম এর ব্যাকএন্ডে নিজেদের কোড যুক্ত করে দেয়। 

 

এতে করে করে আক্রমণকারীর কোডটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় আক্রমণকারী ডাটাবেজ থেকে তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই।

 

ডোমেইন নেম সিস্টেম অ্যাটাক

ডোমেইন নেম সিস্টেম অ্যাটাক হলো এমন একটি আক্রমণ যেখানে আক্রমণকারী ডোমেইন নেম সিস্টেমের ক্রুটির সুযোগ নেয়।

এরা এই ক্রুটিটিকে কাজে লাগিয়ে ওয়েবসাইট এর অ্যাক্সেস নিয়ে নেয় পরবর্তীতে সেখান থেকে ডাটা চুরি করে। সাইবার সিকিউরিটি এর জন্য এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

 

 

সাইবার সিকিউরিটি এর সুবিধা

এতক্ষণ আমরা সাইবার সিকিউরিটি কি এর বিভিন্ন বিষয় জানার চেষ্টা করলাম। এবার চলুন আমরা সাইবার সিকিউরিটি এর কিছু সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা যাক:

·        ডাটা এবং নেটওয়ার্ক উভয়ই সুরক্ষিত থাকে

·        অননুমোদিত ব্যাক্তি থেকে ডাটার অ্যাক্সেস এড়ানো হয়

·        ডাটার কোন ব্যাত্যয় ঘটলেও দ্রুত এটি পুনরুদ্ধার করা হয়

·        এন্ড ইউজার এবং এন্ডপয়েন্ট ডিভাইসের সুরক্ষা প্রদান

·        অপারেশনের ধারাবাহিকতা

·        ব্যাবসার জন্য সাইবার আক্রমণ এবং ডাটা ব্যাত্যয় এর সুরক্ষা

 

 

সাইবার সিকিউরিটি এর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন

কোন লিঙ্কে ক্লিকের পূর্বে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা

 

·        পাসওয়ার্ড নিয়ে কখনো অবহেলা করবেন না

·        সেনসিটিভ ডাটাগুলি কোন নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ করা

·        টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সিস্টেম চালু করা

·         ওয়েবসাইটটি HTTPS কিনা তা ভালোভাবে চেক করুন

·        কম্পিউটার থেকে অ্যাডওয়্যার সরিয়ে ফেলুন

·        ব্যাবহার না করলে ব্লুটুথ কানেকশন বন্ধ করে রাখুন

·        যতটা সম্ভব পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন

·        প্রয়োজনে সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ করুন

·        সম্ভব হলে কোম্পানিতে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার নিয়গ করুন।

সাইবার সিকিউরিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

 

  • সফ্টওয়্যার সবসময় আপডেট রাখুন 

  • কোন ইমেইল সন্দেহজনক মনে হলে সেটি এড়িয়ে চলুন

  • ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিতে অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফ্টওয়্যার ব্যাবহার করুন

  • কোন গোপনীয় ফাইল শেয়ার করার সময় এনক্রিপ্ট করে শেয়ার করুন

  • সবসময় ‍স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করুন

  • নির্দিষ্ট সময় পর পর ডাটা ব্যাকাপ রাখুন

  • ফিশিং স্ক্যাম থেকে সতর্ক থাকুন

  • প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যাবহার করুন

  • একই পাসওয়ার্ড বার বার ব্যাবহার করবেন না

এই ছিলো সাইবার সিকিউরিটি কি এই সম্পর্কে কিছু কথা আশা করি উপরের এই আর্টিকেল থেকে সাইবার সিকিউরিটি কি এই সম্পর্কে মোটামুটি ভালো একটি একটা ধারণা পেয়েছেন। 

 

এরপরও যদি কোন কিছু জানার থাকে তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করবো আপনাকে সাহায্য করার।

1 thought on “সাইবার সিকিউরিটি কি”

Leave a Comment