সার্ভার কাকে বলে? সার্ভার কীভাবে কাজ করে

বর্তমানে এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমরা অনেকেই সার্ভার কথাটির সাথে পরিচিত। আমরা জেনে বা না জেনে সবাই কোনো কোনো সার্ভার ব্যবহার করে আসছি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সার্ভার কাকে বলে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

সার্ভার কাকে বলে

সার্ভার হলো এমন একটি কম্পিউটার বা সিস্টেম যেটি অন্য কম্পিউটার বা ব্যবহারকারিকে বিভিন্ন সার্ভিস বা সেবা প্রদান করে থাকে। এই ব্যবহারকারিকে ক্লাইন্টও বলা হয়। 

এটি সাধারণত একটি শক্তিশালী কম্পিউটার, যা অন্য কম্পিউটার বা ডিভাইসের কাছ থেকে অনুরোধ গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী ডেটা, ফাইল, ওয়েব পেজ বা অন্যান্য সেবা সরবরাহ করে। 

সার্ভারের কাজ হলো একটি নির্দিষ্ট অনুরোধ অনুযায়ী দ্রুত এবং সঠিক তথ্য প্রদান করা, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করে।এছাড়া, সার্ভার সাধারণত ২৪/৭ কাজ করতে সক্ষম, কারণ এটি ব্যবহারকারীদের সেবা প্রদান করে এবং সর্বদা চালু থাকে। আশা করি সার্ভার কাকে বলে এটি বুঝতে পারছেন এবার চলুন দেখি সার্ভার কিভাবে কাজ করে।

সার্ভার কীভাবে কাজ করে

সার্ভার কাজ করে একটি ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেলের মাধ্যমে। সহজ ভাষায়, সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট দুটি উপাদান থাকে যা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে।

ক্লায়েন্টের অনুরোধ: যখন আপনি আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন দিয়ে কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করেন, তখন আপনি একটি অনুরোধ পাঠান সার্ভারের দিকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি ওয়েব পেজ খোলার চেষ্টা করছেন।

সার্ভারের প্রতিক্রিয়া: সার্ভার সেই অনুরোধ গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বা ফাইল সন্ধান করে। যদি আপনি একটি ওয়েব পেজ খোলার চেষ্টা করেন, তাহলে সার্ভার সেই পেজের HTML ফাইল, ছবি, বা অন্য ফাইল সরবরাহ করে।

তথ্য পাঠানো: সার্ভার সেই তথ্য বা ফাইল আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে পাঠিয়ে দেয়। আপনার ডিভাইস তখন সেই তথ্য বা ফাইল প্রদর্শন করে, যেমন একটি ওয়েব পেজ দেখতে বা কোনো ফাইল ডাউনলোড করতে।

নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ: সার্ভার ও ক্লায়েন্টের মধ্যে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না ক্লায়েন্ট তার প্রয়োজনীয় তথ্য পায়। সার্ভার সাধারণত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে এবং বহু ব্যবহারকারীর অনুরোধ একসাথে পরিচালনা করতে পারে।

সার্ভার কত প্রকার

সার্ভার বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সার্ভার কাকে বলে এই সম্পর্কে জানতে হলে এর প্রকার সম্পর্কেও জানতে হবে।  এখানে কিছু প্রধান সার্ভারের প্রকার উল্লেখ করা হলো:

অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার

অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার হলো এমন একটি সার্ভার যা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং সফটওয়্যার কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারে।

অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার সাধারণত ক্লায়েন্টের অনুরোধ অনুযায়ী ডেটা বা প্রোগ্রাম চালনা করে এবং ব্যবহারকারীকে সেবা প্রদান করে। এই সার্ভারের মূল কাজ হলো, ডেটা বা লজিক্যাল প্রক্রিয়া পরিচালনা করা, যেমন লোড ব্যালান্সিং, ট্রানজ্যাকশন ম্যানেজমেন্ট এবং ডেটাবেজ অপারেশন। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্যান্য সফটওয়্যার সিস্টেমের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

DNS সার্ভার

DNS (Domain Name System) সার্ভার এমন একটি সার্ভার যা ডোমেইন নামের সাথে সংশ্লিষ্ট আইপি (IP) ঠিকানা মেলে দেয়। যখন আপনি কোনো ওয়েবসাইটের নাম যেমন “www.dayshopbd.com” টাইপ করেন, DNS সার্ভার এটি আইপি ঠিকানায় পরিণত করে এবং আপনাকে সঠিক সার্ভারে নিয়ে যায়। 

এটি ইন্টারনেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ ব্যবহারকারীরা সাধারণত আইপি ঠিকানা মনে রাখতে পারেন না, কিন্তু ডোমেইন নাম ব্যবহার করে তারা সহজেই ওয়েবসাইটে পৌঁছাতে পারে। DNS সার্ভারের সাহায্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত এবং সঠিকভাবে প্রেরণ করা হয়।

ফাইল সার্ভার

ফাইল সার্ভার এমন একটি সার্ভার যা বিভিন্ন ফাইল এবং ডেটা সেন্ট্রালাইজড ভাবে সংরক্ষণ করে। এটি ক্লায়েন্টদের ফাইল অ্যাক্সেস এবং শেয়ারিংয়ের সুবিধা প্রদান করে। ফাইল সার্ভার ব্যবহারকারীকে ফাইল আপলোড, ডাউনলোড, হালনাগাদ এবং শেয়ার করার সুযোগ দেয়, এমনকি একাধিক ব্যবহারকারী একই ফাইল একসাথে সম্পাদনও করতে পারে। 

 

এটি সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয় যেখানে একাধিক কর্মীকে একযোগে কাজ করতে হয়। ফাইল সার্ভার ব্যবহারের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ডেটা স্টোরেজের মাধ্যমে ডেটা নিরাপদ রাখা এবং ব্যবস্থাপনা সহজ হয়।

ওয়েব সার্ভার

ওয়েব সার্ভার এমন একটি সার্ভার যা ওয়েব পেজের তথ্য বা ফাইল ব্যবহারকারীদের কাছে পাঠায়। উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনি একটি ওয়েব ব্রাউজারে একটি ওয়েবসাইটের URL টাইপ করেন, ওয়েব সার্ভার ঐ ওয়েবসাইটের HTML, CSS, ইমেজ এবং অন্যান্য ফাইল আপনার ব্রাউজারে পাঠায়। 

 

এটি HTTP (Hypertext Transfer Protocol) ব্যবহার করে তথ্য পাঠায়। ওয়েব সার্ভার সাধারণত সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং অনলাইন সেবার ব্যাকএন্ডে কাজ করে। ওয়েব সার্ভারের কার্যক্রমে ওয়েব পেজের দ্রুত লোডিং, নিরাপত্তা এবং সার্ভারের কার্যক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডেটাবেজ সার্ভার

ডেটাবেজ সার্ভার এমন একটি সার্ভার যা ডেটাবেজ সংরক্ষণ, পরিচালনা এবং ডেটাবেসের মধ্যে তথ্য অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধার করার কাজ করে। এটি বিভিন্ন ধরনের ডেটাবেজ সিস্টেম যেমন MySQL, Oracle, Microsoft SQL Server ইত্যাদি পরিচালনা করে। 

 

ব্যবহারকারীরা ডেটাবেজ সার্ভারে SQL (Structured Query Language) ব্যবহার করে ডেটা অন্বেষণ, সম্পাদনা, সংযোজন বা মুছতে পারে। ডেটাবেজ সার্ভারগুলি সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠানগুলিতে ব্যবহৃত হয় যেখানে প্রচুর ডেটা সংরক্ষণ এবং পরিচালনা করতে হয়। 

 

এটি ব্যবসায়িক সফটওয়্যার, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন এবং বিভিন্ন ডেটাবেস-ভিত্তিক সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মেইল সার্ভার

মেইল সার্ভার হলো এমন একটি সার্ভার যা ইমেইল পাঠানো, গ্রহণ করা, এবং সংরক্ষণ করার কাজ করে। এটি SMTP (Simple Mail Transfer Protocol) ব্যবহার করে ইমেইল পাঠায় এবং POP3 (Post Office Protocol) অথবা IMAP (Internet Message Access Protocol) ব্যবহার করে ইমেইল রিসিভ করে। 

 

মেইল সার্ভারের মাধ্যমে, ব্যবহারকারীরা ইমেইল প্রেরণ এবং গ্রহণ করতে পারেন এবং তারা তাদের মেইলবক্সে জমে থাকা মেসেজগুলো অ্যাক্সেস করতে পারেন। মেইল সার্ভার সাধারণত কোম্পানি, সরকারি অফিস বা স্কুলে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ব্যবহৃত ইমেইল সিস্টেমটি বড় এবং বিভিন্ন ব্যবহারকারীর জন্য নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করে।

প্রক্সি সার্ভার

প্রক্সি সার্ভার হলো একটি ইন্টারমিডিয়েট সার্ভার যা ক্লায়েন্ট এবং মূল সার্ভারের মধ্যে অবস্থান করে। এটি মূলত ব্যবহারকারীর অনুরোধ গ্রহণ করে এবং পরে মূল সার্ভারে পাঠায়, কিংবা সেখান থেকে পাওয়া ডেটা আবার ক্লায়েন্টে পাঠায়। 

 

প্রক্সি সার্ভার নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, এবং কন্টেন্ট ফিল্টারিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন, এটি ব্যবহারকারীর আইপি ঠিকানা লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে, অথবা কিছু ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেস নিষিদ্ধ করতে পারে। এছাড়া এটি ওয়েবসাইটের লোড কমানোর জন্য ক্যাশিং (caching) ব্যবহার করে এবং নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিকের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

সার্ভার হোস্টিং

সার্ভার হোস্টিং হলো এমন একটি সেবা যা আপনার ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনকে ইন্টারনেটে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলার জন্য একটি সার্ভার প্রদান করে। যখন আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন, তখন তার ফাইলগুলি, ডেটা এবং অন্যান্য উপাদান ইন্টারনেটে দর্শকদের কাছে দেখানোর জন্য একটি সার্ভারে হোস্ট করতে হয়। 

সার্ভার হোস্টিং সেবাটি ওয়েবসাইট মালিকদের এই সুবিধা প্রদান করে, যেখানে তারা তাদের ডেটা এবং ফাইল সার্ভারে সংরক্ষণ করতে পারে এবং সেই তথ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছাতে পারে। 

সার্ভার হোস্টিংয়ের মাধ্যমে আপনি একটি নির্দিষ্ট সিস্টেম বা সার্ভারে আপনার ওয়েবসাইটের ফাইল এবং ডেটাবেস সংরক্ষণ করতে পারেন, যা ২৪/৭ ইন্টারনেটে উপলব্ধ থাকে।

সার্ভার হোস্টিং বেশ কয়েকটি ধরনে পাওয়া যায়, যেমন:

শেয়ার্ড হোস্টিং

শেয়ার্ড হোস্টিং হল সবচেয়ে সাধারণ এবং সস্তা সার্ভার হোস্টিং। এই পদ্ধতিতে একাধিক ওয়েবসাইট একটি সার্ভারে হোস্ট করা হয়, যার ফলে প্রতি ব্যবহারকারীকে সীমিত পরিমাণ রিসোর্স (যেমন: CPU, RAM, ডিস্ক স্পেস) প্রদান করা হয়। 

 

শেয়ার্ড হোস্টিং সাধারণত ছোট ব্যবসা, ব্লগ বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত। এটি সস্তা হলেও, উচ্চ ট্রাফিক ওয়েবসাইটের জন্য এটি উপযুক্ত নয়, কারণ সার্ভারের রিসোর্স শেয়ার করার ফলে কিছু সময় স্লো হতে পারে।

ডেডিকেটেড হোস্টিং

ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ে পুরো সার্ভার এককভাবে একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বরাদ্দ থাকে। এর মানে হলো, আপনি সার্ভারের সম্পূর্ণ রিসোর্স ব্যবহার করতে পারবেন, যার ফলে আপনার ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স খুবই ভালো হয়। 

 

এটি বড় এবং জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত, যেখানে প্রচুর ভিজিটর থাকে এবং অধিক রিসোর্সের প্রয়োজন হয়। এই হোস্টিং পদ্ধতিতে সাধারণত নিরাপত্তা, কাস্টমাইজেশন এবং নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকে।

ভিপিএস (VPS) হোস্টিং

VPS (Virtual Private Server) হোস্টিং শেয়ার্ড হোস্টিং এবং ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের মাঝামাঝি একটি অপশন। এই হোস্টিংয়ে এক সার্ভারে একাধিক ভার্চুয়াল সার্ভার তৈরি করা হয়, এবং প্রতিটি ভার্চুয়াল সার্ভারের নিজস্ব রিসোর্স থাকে। 

ফলে, VPS হোস্টিং ব্যবহারকারীরা একটি নির্দিষ্ট অংশে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পান এবং তাদের ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স ডেডিকেটেড সার্ভারের মতো হয়, কিন্তু এটি ডেডিকেটেড সার্ভারের তুলনায় সস্তা হয়। 

এটি মধ্যম আয়ের ব্যবসা বা ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত, যেখানে উচ্চ পারফরম্যান্স এবং কাস্টমাইজেশনের প্রয়োজন হয়।

ক্লাউড হোস্টিং

ক্লাউড হোস্টিং এমন একটি হোস্টিং সেবা, যেখানে একাধিক সার্ভার একসাথে কাজ করে এবং আপনার ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনকে সাপোর্ট করে। এটি আরও স্কেলেবল এবং আরও নির্ভরযোগ্য, কারণ এটি সার্ভারের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও সার্ভার যোগ করতে পারে, যদি প্রয়োজন হয়।

ক্লাউড হোস্টিং ব্যবহারের মাধ্যমে, আপনি যেকোনো সময় আপনার রিসোর্স বাড়াতে বা কমাতে পারেন, যা ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি বা কমার সঙ্গে মানানসই। এটি বড় ব্যবসা, ই-কমার্স ওয়েবসাইট, এবং উচ্চ পারফরম্যান্সের জন্য আদর্শ।

সার্ভার সমস্যা কি

সার্ভার সমস্যা এমন বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত বা সিস্টেম সম্পর্কিত সমস্যা যা সার্ভারের কার্যকারিতা বা সেবাকে ব্যাহত করতে পারে। সার্ভার সমস্যা মূলত সার্ভারের ডাউনটাইম, পারফরম্যান্স ইস্যু, বা সিকিউরিটি সংক্রান্ত হতে পারে, এবং এটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনগুলির সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। সার্ভার কাকে বলে এই আর্টিকেলের এই পর্যায়ে এখন আমরা সার্ভারসৃষ্ট কিছু সমস্যা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

ডাউনটাইম (Downtime)

সার্ভার যদি সঠিকভাবে কাজ না করে বা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটি ডাউনটাইম হিসাবে পরিচিত। এটি সাধারণত সার্ভার মেইনটেন্যান্স, হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার সমস্যা, অথবা নেটওয়ার্ক ইস্যুর কারণে ঘটতে পারে। ডাউনটাইমের ফলে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীদের জন্য এক্সেসযোগ্য থাকে না, যা ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

লোড ব্যালান্সিং সমস্যা

সার্ভারের কাছে অত্যধিক ট্রাফিক বা ব্যবহারকারীর অনুরোধ আসলে, সার্ভার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং এটি স্লো হতে পারে বা ক্র্যাশ করতে পারে। লোড ব্যালান্সিংয়ের মাধ্যমে সার্ভারের উপর চাপ কমানো হয়, কিন্তু যদি লোড ব্যালান্সার ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে সার্ভারের পারফরম্যান্স বিঘ্নিত হতে পারে।

নেটওয়ার্ক ইস্যু

সার্ভারের সাথে ক্লায়েন্টের বা অন্যান্য সার্ভারের নেটওয়ার্কের সংযোগ যদি দুর্বল হয় বা ত্রুটি থাকে, তাহলে সার্ভার সঠিকভাবে ডেটা প্রেরণ করতে পারে না। নেটওয়ার্ক সমস্যার ফলে ওয়েবসাইটের লোড সময় বেড়ে যেতে পারে বা কনেকশন হারিয়ে যেতে পারে।

ডেটাবেজ সমস্যা

সার্ভারে যদি ডেটাবেজ সম্পর্কিত কোনো সমস্যা হয়, যেমন ডেটাবেজের তথ্য হারানো, ডেটাবেজ সার্ভারের ক্র্যাশ, বা কুয়েরি ত্রুটি, তবে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ঠিকভাবে কাজ করবে না। এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা খারাপ করতে পারে এবং ওয়েবসাইটের কার্যকারিতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।

সিকিউরিটি সমস্যা

সার্ভারে যদি সিকিউরিটি ত্রুটি থাকে, যেমন ভলনারেবল সফটওয়্যার বা দুর্বল পাসওয়ার্ড সুরক্ষা, তাহলে হ্যাকাররা সার্ভারে আক্রমণ করতে পারে। এটি ডেটা চুরি, ডিডস (DDoS) আক্রমণ বা ওয়েবসাইটের সিস্টেমের অকার্যকর হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। সিকিউরিটি ঝুঁকি সার্ভারের দুর্বলতা সৃষ্টি করে এবং ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে।

হার্ডওয়্যার সমস্যা

সার্ভারের হার্ডওয়্যার যেমন হার্ড ড্রাইভ, র‌্যাম বা প্রসেসর যদি ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে সার্ভারের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে বা সার্ভার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হার্ডওয়্যার ত্রুটির কারণে সার্ভারের মেমরি বা সঞ্চয়স্থান পূর্ণ হয়ে যেতে পারে, যা ডেটা এক্সেসে সমস্যা সৃষ্টি করে।

সফটওয়্যার বা কনফিগারেশন সমস্যা

সার্ভারের সফটওয়্যার বা কনফিগারেশনে ভুল হলে, সার্ভার অনুরোধ সঠিকভাবে পূর্ণ করতে পারে না। এটি সার্ভারের অপটিমাইজেশন বা সঠিক সেটিংসের অভাবে হতে পারে, যেমন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন সঠিকভাবে কাজ না করা বা অপ্রত্যাশিত Error বা সিস্টেম ক্র্যাশ।

সার্ভার মেইনটেনেন্স কেন গুরুত্বপূর্ণ

সার্ভার মেইনটেন্যান্স নিয়মিতভাবে সার্ভারের পারফরম্যান্স উন্নত রাখতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে সার্ভারের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার আপডেট, সিস্টেম ফাইল অপটিমাইজেশন এবং নিরাপত্তা প্যাচ ইনস্টল করা হয়, যা সার্ভারের কার্যক্ষমতা এবং সুরক্ষা বৃদ্ধি করে। 

নিয়মিত মেইনটেন্যান্স ছাড়াও, সার্ভারের ডাউনটাইম কমে আসে এবং গুরুত্বপূর্ণ ডেটার ব্যাকআপ গ্রহণ করা যায়, যা ভবিষ্যতে ডেটা হারানোর ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখে।

এছাড়া, সার্ভারের হার্ডওয়্যার সমস্যা বা নেটওয়ার্ক ত্রুটি চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা যায়, যা সার্ভারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। নিয়মিত মেইনটেন্যান্সের মাধ্যমে সার্ভারের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো হয় এবং হ্যাকারদের আক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। 

এটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করে।

পরিশেষে

সার্ভার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক ভিত্তিক সেবার মূল কাজ সম্পন্ন করে। এটি ব্যবহারকারীদের তথ্য বা সেবা সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে যোগাযোগ ও কার্যক্রম সহজ করে। সার্ভারের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, এটি আমাদের দৈনন্দিন ডিজিটাল অভিজ্ঞতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি সার্ভার কাকে বলে এই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আরো কিছু জানতে কমেন্ট করতে পারেন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

Leave a Comment