নেটওয়ার্কিংয়ে হাব এবং সুইচ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস, কিন্তু এদের কাজের ধরন ভিন্ন। অনেকেই হাব ও সুইচের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে কনফিউজড থাকেন, কারণ দুটির কাজ প্রায় একই। 

হাব পুরোনো নেটওয়ার্কে ব্যবহার হয়, আর সুইচ দ্রুতগতির আধুনিক নেটওয়ার্কের জন্য ভালো। এই লেখায় আমরা হাব ও সুইচের কাজ, সুবিধা এবং পার্থক্য সহজভাবে বুঝব, যাতে আপনি জানতে পারেন কোনটি আপনার জন্য সঠিক।

হাব একটি নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যা একই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে (LAN) একাধিক ডিভাইস (যেমন: কম্পিউটার, প্রিন্টার) কে কানেক্ট করে। এটি মূলত ডেটা প্যাকেট গ্রহণ করে এবং সেই ডেটা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত সব ডিভাইসে পাঠিয়ে দেয়। 


উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কম্পিউটার থেকে ডেটা হাবে আসে, তাহলে হাব সেটি বাকি সব ডিভাইসে ফরওয়ার্ড করে দেয়—এমনকি যার জন্য ডেটা টি প্রযোজ্য নয়, সেখানেও পাঠিয়ে দেয়। এজন্যই হাবকে ডাম্ব ডিভাইসও বলা হয়, কারণ এটি ডেটা কোথায় পাঠাতে হবে তা বুদ্ধি দিয়ে বেছে নিতে পারে না।

সুইচ কি?

সুইচ হলো নেটওয়ার্কের একটি স্মার্ট ডিভাইস, যা একসাথে অনেক কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা প্রিন্টার কানেক্ট করে এবং ডেটা শুধু যার প্রয়োজন তার কাছেই পাঠায়। 

উদাহরণ দিয়ে বললে, মনে করুন, আপনি নেটওয়ার্কে থাকা আপনার বন্ধুর কম্পিউটারে একটি ফাইল পাঠাবেন হাব ব্যবহার করে। কিন্তু হাব সেটা সবার কাছে পাঠিয়ে দিবে। 

 

কিন্তু সুইচ শুধুমাত্র আপনার বন্ধুর কম্পিউটারেই ফাইলটি পৌঁছে দেবে। এতে নেটওয়ার্কের গতি বাড়ে, ডেটা জ্যাম হয় না, এবং নিরাপত্তাও ভালো থাকে। বড় অফিস, স্কুল বা হোম নেটওয়ার্কে আজকাল সুইচই বেশি ব্যবহার করা হয় কারণ এটি হাবের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ।

হাবের কাজ কী

একটি নেটওয়ার্কে হাব বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারে, হাব ও সুইচের মধ্যে পার্থক্য জানার আগে চলুন দেখে নেই হাবের মূলত কাজ কি। 

 

  • একই নেটওয়ার্কে একাধিক ডিভাইসকে কানেক্ট করতে পারে

  • ডেটা প্যাকেট সব কানেক্টেড ডিভাইসে ব্রডকাস্ট করে।

  • ফিজিক্যাল লেয়ারে ডেটা ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে।

  • নেটওয়ার্কে ট্র্যাফিক বাড়িয়ে দেয় (সব ডিভাইসে ডেটা পাঠানোর কারণে)।

  • ছোট নেটওয়ার্কে সস্তায় ব্যবহার করা যায়।

  • ডেটা কোথায় পাঠাতে হবে তা বাছাই করতে পারে না।

সুইচের কাজ কী

সুইচকে সাধারণত বলা হয় ইনটেলিজেন্ট ডিভাইস তাই এটি কাজও করে থাকে স্মার্টভাবে। এবার আমরা সুইচের কাজ সম্পর্কে জানবো। 

  • একাধিক ডিভাইসকে নেটওয়ার্কে কানেক্ট করা।

  • ডেটা শুধু প্রয়োজনীয় ডিভাইসে পাঠানো (MAC অ্যাড্রেস ব্যবহার করে)।

  • নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক কমিয়ে গতি বাড়ানো।

  • ডেটা কোলিশন (সংঘর্ষ) রোধ করা।

  • নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা বাড়ানো।

  • বড় নেটওয়ার্কে দক্ষভাবে কাজ করা।

হাব ও সুইচের মধ্যে পার্থক্য

নিচে হাব ও সুইচের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো।

হাব সুইচ
সব ডিভাইসে ডেটা পাঠায়
শুধু প্রয়োজনীয় ডিভাইসে ডেটা পাঠা
ডেটাতে জ্যাম বেশি হয়, গতি কম
ডেটা জ্যাম কম, গতি বেশি
সস্তা, ছোট নেটওয়ার্কের জন্য
দামি, বড় নেটওয়ার্কের জন্য
নিরাপত্তা কম
নিরাপত্তা বেশি
MAC অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে না
MAC অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে
আধুনিক নেটওয়ার্কে কম ব্যবহার
আধুনিক নেটওয়ার্কে স্ট্যান্ডার্ড ভাবে ব্যবহার করা হয়

পরিশেষে

হাব এবং সুইচ দুটিই নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, কিন্তু তাদের কাজের পদ্ধতি ও দক্ষতায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। হাব সাধারণত ছোট নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা হয়, যেখানে গতি বা নিরাপত্তার চেয়ে সস্তা সমাধান গুরুত্বপূর্ণ। 

 

অন্যদিকে, সুইচ বড় নেটওয়ার্কের জন্য আদর্শ—এটি ডেটা টার্গেট করে পাঠায়, গতি বাড়ায়, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আধুনিক যুগে সুইচের ব্যবহার বাড়লেও হাব এখনও কিছু সীমিত ক্ষেত্রে কাজে লাগে। 

আপনার নেটওয়ার্কের চাহিদা বুঝে সঠিক ডিভাইস বেছে নিন: সহজ ও সস্তা সমাধান চাইলে হাব, আর দ্রুত ও স্মার্ট সমাধান চাইলে সুইচ।

আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হাব ও সুইচের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আরো কিছু জানার থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করতে পারেন অথবা যোগাযোগ করতে পারেন।

FAQ

হাব ধীর গতির, কারণ এটি সব ডিভাইসে ডেটা পাঠায়। সুইচ দ্রুত গতির, কারণ এটি শুধু প্রয়োজনীয় ডিভাইসে ডেটা পাঠায়।

হাব সস্তা, আর সুইচ তুলনামূলক বেশি দামি।

ছোট নেটওয়ার্ক ও সস্তা সমাধান চাইলে হাব ভালো। বড় নেটওয়ার্ক, দ্রুত গতি ও নিরাপত্তা চাইলে সুইচ ভালো।