বিগত কয়েক বছরে ব্লুটুথ হেডফোন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমান এমন হয়েছে যে কোনো দোকানে গেলে তারযুক্ত হেডফোনের চেয়ে ব্লুটুথ হেডফোনই বেশি দেখা যায়। একটি ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন সবাই ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু আমরা অনেক সময় বুঝতে পারিনা কোনটি ভালো আর কোনটি ভালো নয়। তাই এই আর্টিকেলে আজ আমি কয়েকটি ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন সম্পর্কে বলবো যেগুলো আপনাকে হতাশ করবেনা আশা করি। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

 

এটি এমন একটি হেডফোন যেটি দৈনন্দিন ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। আপনি যদি ভিডিও কল অথবা অনলাইন মিটিংয়ের জন্য একটি ভালো হেডফোন খুঁজে থাকেন তবে JBL Tune 760NC Wireless হতে পারে আপনার জন্য সেরা পছন্দ। এই হেডফোনের ইন্ট্রিগেটেড মাইক্রোফোন আপনার ভয়েসকে সুন্দরভাবে ক্যাপচার করবে এবং অপর প্রান্তের জন্য এটিকে আরো পরিষ্কার এবং ন্যাচারাল করে তুলে। 

 

এটিতে নয়েজ ক্যানসেলিং ফিচার রয়েছে, যে কারণে কথা বলার সময় মাঝারি ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ সয়ংক্রিয়ভাবে রিমোভ করে দিবে। তবে এটি এমন নয় যে, প্রচুর ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজকেও রিমোভ করে দিবে। 

 

এতে শক্তিশালি ব্যাটারি ব্যাকআপ রয়েছে যেটাতে প্রায় ৪০ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়।  এর মাধ্যমে আপনি একবার চার্জ দিয়ে যাতায়াতসহ সারাদিনের কাজ সেরে ফেলতে পারবেন।

 

Sony WH-CH520 Overhead Headphone

আপনি যদি ANC হেডফোন পছন্দ না করে থাকেন তবে Sony WH-CH520 হেডফোনটি হতে পারে আপনার জন্য পারফেক্ট পছন্দ। এটিতে ANC না থাকলেও এটিতে রয়েছে ব্লুটুথ সুবিধা এবং ওজনেও হালকা ধরনের। এর ওজন মাত্র ১৫০গ্রাম। 

 

এতে রয়েছে type c চার্জার ক্যাবল, ভলিউমের ক্ষেত্রে আপ/ডাউন বাটন এবং প্লে/পজ করার জন্য আরেকটি বাটন। 

 

এর সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক ভালো, তবে কানের সাথে যদি সম্পূর্ণ ফিট না হয় বা আংশিক হয় তবে ব্যাপারটা বিরক্তিকর হয়ে উঠবে। কারণ ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ তখন কানে আসবে, বাইরে থাকলে গাড়ির শব্দ, এবং অফিসে থাকলে হয়তো পাশের কলিগদের আড্ডার শব্দও কানে আসবে। 

 

এদের একটি অ্যাপ রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি চাইলে সাউন্ড এর EQ আপনার পছন্দমত পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। 

 

এর ব্যাটারি ব্যাকআপন অনেক ভালো। একবার সম্পূর্ণ চার্জ দিয়ে প্রায় ৫০ঘন্টার মত ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও এর standby mode নামে একটি ফিচার রয়েছে। যার মাধ্যমে হেডফোনটি ব্যবহার না করলে এর ব্যাটারি সংরক্ষিত হয়। 

 

এটির আরেকটি সুবিধা হলো এই হেডফোনে একই সময়ে একাধিক ডিভাইস সংযোগ করা যায়। অর্থাৎ একই সাথে আপনি পিসি এবং মোবাইলে হেডফোন সংযোগ করতে পারবেন।

 

Soundcore Life Q30

এই হেডফোনটির রিভিউ লিখা হচ্ছে Reddit এর বিভিন্ন রিভিউ এর উপর ভিত্তি করে। এই হেডফোনটির উভয় পাশেই বাটন রয়েছে যেমন ANC অন অফ করার বাটন, সাউন্ড কমানো/বাড়ানোর বাটন এবং প্লে/পজ এর বাটন রয়েছে। 


আপনি ডান পাশের বাটন টি টাচ করে ১সেকেন্ডের মধ্যেই transparent mode অন করতে পারবেন। এর ফলে হেডফোনের সাউন্ডের সাথে বাইরের সাউন্ডও আপনি শুনতে পারবেন। ANC কন্ট্রোল করার জন্য এর একটি ভালো মানের অ্যাপসও রয়েছে।

 

Soundcore Life Q30 হেডফোনের ভালো দিক

এই হেডফোনের বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে যার কারণে অনায়েসেই একে ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। চলুন তাহলে এর কিছু ভালো দিক দেখে আসি। 

  • দাম অনুযায়ী এর কোয়ালিটি সত্যিই দারুণ। অনেক সময় এটি বেশি দামের হেডফোনের তুলনাতেও ভালো পারফর্ম করবে, যদি আপনি EQ সঠিকভাবে সেট করতে পারেন। 

  • এর ANC যথেষ্ট কার্যকর। ANC অন করার মাধ্যমে এটি আপনাকে বাইরের কোলাহল থেকে দূরে রাখবে।

  • এটি ব্যবহারেও খুব আরামদায়ক। 

  • এর মাইক্রোফনটিও দূর্দান্ত। কথা বলার সময় আপনার বেশিরভাগ কথাই অপরজন স্পষ্ট শুনতে পারবে। 

  • এর ব্লুটুথ রেন্জও অনেকভালো।

 

Soundcore Life Q30 হেডফোনের মন্দ দিক

এই হেডফোনের বেশকিছু সুবিধার পাশাপাশি এর কিছু দিক আপনার খারাপও লাগতে পারেন। যেমন:

 

  • খুবই সাধারণ কারণে এর transparent mode অন হয়ে যেতে পারে। যেমন কানের সংস্পর্শে, প্রবল বাতাসেও এটি অন হয়ে যেতে পারে। যা আসলেও একটি বিরক্তিকর ব্যাপার। 

  • খুব গরমের মধ্যে এটি পরে থাকা কিছুটা বিরক্তিকর কারণ হতে পারে। কেননা গরমের সময় এটি আপনার কান ঘেমে যাবার কারণ হয়ে উঠতে পারে। 

1MORE SonoFlow

আপনি যখনই ভালো মানের সাউন্ড কোয়ালিটি সম্পন্ন একটি হেডফোন খুজবেন তখনই আপনার সামনে আসবে SonoFlow এর হেডফোন। আপনি আপনার মত করে EQ পরিবর্তন করে গান শুনতে পারবেন। 

 

এই হেডফোনের ডিজাইনটাও অনেক সুন্দর। এটি ওজনে কিছুটা ভারী হলেও কানের সাথে সুন্দরভাবে ফিট করে। ওজনে ভারী হবার কারণে এটি জীমে ব্যবহারের জন্য আদর্শ হেডফোন নয়। 

 

হেডফোনের ডান পাশে একটি পাওয়ার বাটন আছে, যখন পাওয়ার অন করা হয় অথবা অফ করা হয় তখন লাইটগুলিও ফ্ল্যাশ হয়। 

 

এই হেডফোনটি কন্ট্রোল করার জন্য 1MORE MUSIC নামে একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। এই অ্যাপটির মাধ্যমে EQ পরিবর্তন করাসহ অনেক ফাংশন নিজের মত করে কন্ট্রোল করতে পারবেন। 

 

একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে এই হেডফোন থেকে ANC অন থাকা অবস্থাতেও প্রায় ৫৫ঘন্টার বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া গেছে। যদিও এদের বিজ্ঞাপনে বলা ৫০ঘন্টা কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যা মোটেও খারাপ নয়। 

 

নয়েজ ক্যানসেলিংয়ের জন্য 1MORE SonoFlow হেডফোনটি খুব ভালো কাজ করে। বাইরের বাসের শব্দ, মানুষের কথোপকথন এবং অবাঞ্চিত কথা দূর করার জন্য এটি দূর্দান্ত কাজ করে। বাইরের কোলাহল থেকে মুক্ত থাকতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।  


কথা বলার জন্য 1MORE SonoFlow হেডফোনটি খুব ভালো পারফর্ম করে। এর ENC আপনাকে স্মুথ কথা বলার অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

 

ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন Edifier W820NB Plus

এই হেডফোনগুলি ধূসর, হালকা নীল, সাদা এবং কালে রঙের পাওয়া যায় যার ওজন ২৩০গ্রাম। আপনি যখন ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন এর সন্ধান করবেন তখন এটি আপনি বিবেচনায় আনতেই পারেন। কারণ এর বেশ কিছু ফিচারের জন্য আপনি একে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। 

 

উচ্চ ভলিউমেও আপনি এই হেডফোন থেকে প্রায় ৪৯ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। তবে ANC অন থাকলে এটি থেকে ৩৩ঘন্টার মত ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। 

 

এর রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী রিচার্জেবল ব্যাটারি যাকে দ্রুত চার্জ করা যায়। এই ব্যাটারিকে আপনি মাত্র ১০মিনিট চার্জ দিয়ে ৭ঘন্টা পর্যন্ত চালাতে পারবেন। সত্যিই দূর্দান্ত তাইনা। 

 

এই হেডফোনে অবশ্য আপনি একই সাথে দুটি ডিভাইসের সাথে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়না। ব্লুটুথের পাশাপাশি আপনি USB ক্যাবলের মাধ্যমেও সংযোগ দিয়ে এটি ব্যবহার করা যায়। 

 

শান্ত পরিবেশ বা নির্জনে এটার ফোন কল এভারেজ ছিলো। যেখানে বাতাসের শব্দ ছিলো সেখানে এই হেডফোনের DNN টেকনোলোজি দারুণভাবে কার্যকর ছিলো। অর্থাৎ কথা বলার সময় এই পাশে অনেক বাতাসের শব্দ থাকলেও অপরপাশের ব্যক্তি কোন প্রকার শব্দ না শুনে শুধু কথাই শুনতে পেয়েছে। 

 

এর ANC মোড খুভ ভালো পারফর্ম করেছে বিশেষ ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডকে দারুনভাবে রিমোভ করতে পেরেছে। অবশ্য, এটিতে রিংটোন এবং পাখির গানকে রিমোভ করা হয়নি, কিন্তু কম্পিউটারে কাজ করার সময় কম্পিউটার টাইপ এর শব্দকে হ্রাস করা হয়েছে।

 

ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন এর সাউন্ড

হেডফোনটির সাউন্ড সার্বিক দিক দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। এর রয়েছে মডার্ণ মিউজিক স্টাইল এবং পাওয়ারফুল বেজ ফাউন্ডেশন যার মাধ্যমে গান গান শোনার ক্ষেত্রে অনেক ভালো ফিল পাবেন।

 

পরিশেষে

স্মুথভাবে গান শুনতে, জার্নিটাকে আরো মধুর করতে বা কাজে মনোযোগ দিতে একটা ভালো হেডফোন অনেক ভূমিকা পালন করে। নিম্নমানের হেডফোন কিনে বিরক্ত হওয়ার চেয়ে একটু কষ্ট করে ভালো মানের হেডফোন কেনা উচিত। 


এখানে আমি ৫টি ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন নিয়ে আলোচনা করেছি। যার বেশিরভাগই বিভিন্ন সোর্স থেকে সংগ্রহ করা। প্রত্যেকটি হেডফোনের বর্তমান দাম জানতে দাম বাটনে প্রেস করে আপডেট দাম দেখে নিতে পারেন। প্রয়োজনে রকমারি থেকে অর্ডারও করতে পারবেন। ধন্যবাদ সকল পাঠকদের, যে কোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।