কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংতথ্য প্রযুক্তি

ফেসবুক মার্কেটিং কি? ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার

সময়ের সাথে সাথে আমাদের সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তীত হচ্ছে। ঠিক একইভাবে পরিবর্তীত হচ্ছে আমাদের প্রচারণার প্রক্রিয়াও। একসময় যেখানে পোস্টার, লিফলেট, রেডিও এর মাধ্যমে প্রচারণার কাজ করা হতো এখন সেখানে সোস্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে প্রচারণকার প্রধান মাধ্যম। আজ আমরা সেরকমই একটি মাধ্যম ফেসবুক মার্কেটিং কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

 

ফেসবুক মার্কেটিং কি

ফেসবুক মার্কেটিং হলো ফেসবুকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করে কোনো প্রতিষ্ঠানের সেবা ও পণ্য বিশাল সংখক মানুষের কাছে প্রচার করার পক্রিয়া। এটির মাধ্যমে কোনো একটি বিজ্ঞাপন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাথে শেয়ারের মাধ্যমে তাদের এই উক্ত পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানান দেওয়া হয়। গত এক দশকে ফেসবুক সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম থেকে সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেসে পরিণত হয়েছে। 


বাংলাদেশে বর্তমানে ছোট বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানগুলোই ফেসবুক মার্কেটিংয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শুরুর দিকে এটি তেমন জনপ্রিয় না হলেও বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বর্তমান সময়ে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেরেই পেজবুক পেইজ রয়েছে।

মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুক মার্কেটিং কেন এত জনপ্রিয়

বর্তমানে চলমান মার্কেটিংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। আর এই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বেশ কয়েকটি চ্যানেল রয়েছে। যেমন সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, মেসেঞ্জার মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন, এসএমএস এবং ওয়েব পুশ নোটিফিকেশন মার্কেটিং। ডিজিটাল কন্টেন্ট দ্বারা তৈরি এসব মার্কেটিং প্রসেস। 

 

আবার সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মধ্যে একটি হলো ফেসবুক মার্কেটিং। 

এবার চলুন দেখে আসি ফেসবুক মার্কেটিং কেন এত জনপ্রিয়।

 

Globally coverage: Searchlogistics এর একটি তথ্যমতে বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৪. ২৬ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে। যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকরও বেশি। আর ৭ মিলিয়নেরও বেশি কোম্পানি এই ব্যবহার কারিদের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে। 

 

Highly targeted paid ads: আপনি ফেসবুকে কোনো অ্যাড নির্দিষ্ট ব্যাক্তিদের লক্ষ করে দিতে পারবেন। পেইড অ্যাডস সেকশনে আমরা বিষয়টি বিস্তারি জানবো। এখানে এটি শুধু বলে রাখি যে আপনি বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় লিঙ্গ, বয়স, অবস্থান, চাকরি এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে অ্যাড চালাতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যদি চান যে আপনার এই অ্যাড শুধুমাত্র ঢাকার বাসিন্দারাই দেখবে সেটা করতে পারবেন। 

 

Organic reach: আপনি যদি চান যে আপনি কোন টাকা খরচ না করে ফেসবুকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে তবে সেটিও সম্ভব। তবে এটির জন্য হয়তো আপনাকে আরো অনেক বেশি পরিশ্রম করা লাগতে পারে। ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং সেকশনে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

 

ফেসবুক মার্কেটিং এর সুবিধাসমূহ

এতক্ষণে নিশ্চয় ফেসবুক মার্কেটিং কি এবং এর সুবিধাও হয়তো বুঝতে পারছেন। এই সেকশনে আমরা ফেসবুক মার্কেটিং এর সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। এই সেকশনের মাধ্যমে আপনি বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছানোর ফলে আপনি আপনার লক্ষে পৌছাতে পারবেন।

 

সুনির্দিষ্ট লক্ষ

আপনি ইতিমধ্যে হয়তো জানেন যে ফেসুবকে কোন অ্যাড ‍সুনিদির্ষ্ট ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে দেওয়া যায়। আপনি চাইলে অ্যাড দেবার সময় নিদির্ষ্ট এরিয়া, নির্দিষ্ট আয়, শিক্ষার স্তর, জীবনের ঘটনা, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস অনুযায়ী দর্শক নির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র তাদের কাছে আপনার অ্যাড পৌছাতে পারবেন। 

 

অর্থাৎ আপনার প্রতিষ্ঠান যদি এমন হয় যে আপনি নির্দিষ্ট কোন সার্ভিস প্রদান করে থাকেন যেমন ধরি আপনি বাসা শিফটিং এর জন্য গাড়ি ভাড়ার সার্ভিস দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে আপনি শুধুমাত্র ঢাকা লোকেশন এরজন্য অ্যাড দিতে পারেন কেননা ঢাকাতেই বাসা বেশি পরিবর্তন করে মানুষ। 

 

আপনার প্রতিষ্ঠানের যদি টি শার্টের ব্যবসা থাকে তবে শুধুমাত্র ছেলেদের লক্ষ করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। আবার মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মেয়েদের লক্ষ করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। 

 

এছাড়াও আপনি ক্রেতার পণ্য কেনার আচরণ, ডিভাইস ব্যবহারের উপরেও নির্ভর করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।

 

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি করা

ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সরাসরি আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারবেন। এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু, অর্গানিকভাবে আসা লিডের চেয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে আসা লিডগুলো উচ্চমানের হবে কেননা উনারা ইতিমধ্যে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানে। 

 

আর উনাদের মনে আপনার সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতাও বেশি থাকবে। তাই আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানাতে আপনি ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে যেমন আপনার ট্রাফিক বাড়বে তেমনিভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান সঠিক লক্ষেও পৌছাতে পারবে। 

 

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন ফরম্যাট

 

ফেসবুক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ প্রদান করে থাকে। এতে করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের উপর নির্ভর করে তাদের সুবিধা অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এই ফরম্যাটগুলোর মধ্যে টেক্সট এবং দৃশ্যমান উভয় ফরম্যাটই রয়েছে। আপনি ভিডিও, টেক্সট, ইমেজ দিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারবেন। এমনকি একাধিক ইমেজ দিয়েও বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারবেন। 

 

কাস্টমার সাপোর্ট

অনেক ব্যক্তিই আছেন যারা সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে পছন্দ করে। এখন আর কেউ কল করতে চায়না। যেন ফোন কল ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে একটি চ্যাটবট তৈরি করে এবং জনপ্রিয় প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে কিছু উত্তর আগেই লিখে রাখা যায়। এতে করে সে দিনরাত ২৪ঘন্টাই সার্ভিস পেয়ে থাকবে। 

 

প্রোডাক্টের উপর উপর ভিত্তি করে চ্যাটবটের ধরনও পরিবর্তীত হবে তবে প্রাইস, ডেলিভারি, পেমেন্ট ইত্যাদি কি-ওয়ার্ডগুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। 

 

ফেসবুক মার্কেটিংয়ে এসইওতে ইতিবাচক প্রভাব

অনেকের মতে ফেসবুক পোষ্টের বেশি বেশি এনগেজমেন্ট সার্চ র‌্যাংকেও প্রভাবিত করে। অর্থাৎ কোন একটি পোষ্ট যদি বেশি বেশি শেয়ার, লাইক এবং কমেন্ট হয় তাহলে সার্চ র‌্যাঙ্কেও এটি জায়গা করে নেয়।

 

ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার

ফেসবুক মার্কেটিং মূলত ২প্রকার যথা:

 

  1. ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং

  2. পেইড ফেসবুক মার্কেটিং

 

চলুন এগুলোর বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

 

ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং কি

আপনি যখন নিজেই আপনার পণ্যের ফেসবুক মার্কেটিং করবেন এবং কোন টাকা বা ডলার খরচ ছাড়াই সেটিই হলো ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং। ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিংয়ের জন্য দরকার একটি ফেসবুক পেজ অথবা গ্রুপ। আপনাকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পোস্ট করতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানের বা পণ্যের। 

 

ফেসবুকে আসলে কেউ কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে চায়না। তাই আপনার প্রথম টারগেট হওয়া উচিত জনগনের বিশ্বাস অর্জন করা। এজন্য আপনাকে ফেসবুকে সক্রিয় থেকে বিভিন্ন পোস্ট হতে পারে টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিও শেয়ার করতে হবে। 

 

কোন ধরনের টাকা খরচ ছাড়া যে পরিমাণ মানুষ আপনার পোস্ট বা বিজ্ঞাপন দেখে একে বলে অর্গানিক রিচ। এর বড় সুবিধা হলো বিজ্ঞাপনে আপনার কোনো টাকা খরচ হয়না। 

 

তবে এটা ঠিক যে বর্তমানে এত এত পোস্টের ভিড়ে অর্গানিক রিচ পাওয়া আসলেও অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া ফ্রি বিজ্ঞাপন শুধুমাত্র আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট বা আপনাকে যারা লাইক বা ফলোও করছে তাদের কাছেই পৌছাবে। 

 

পেইড ফেসবুক মার্কেটিং কি

অর্থের বিনিময়ে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন ফেসবুকে অ্যাড ক্যাম্পেইন করে নির্দিষ্ট টারগেটেড জনগণের কাছে পৌছানোই হলো পেইড ফেসবুক মার্কেটিং। এটাকে পোস্ট বুস্ট করাও বলা যায়।

 

আমরা অনেক সময় আমাদের ফেসবুক নিউজফিডে অনেক অ্যাড দেখি কিছু অ্যাডে লেখা থাকে sponsored এগুলোই হলো পেইড অ্যাড। পেইড ফেসবুক অ্যাডের মাধ্যমে একেবারে আপনার কাঙ্খিত গ্রাহকের কাছে পৌছানো সম্ভব। 

 

যেমন ধরুন আপনার গুলশান এরিয়াতে একটি শার্টের দোকান আছে। আপনি চাচ্ছেন শুধুমাত্র গুলশানের পুরুষদের কাছে আপনার অ্যাডগুলো পৌঁছাক। সেটাই আপনি করতে পারবেন এই পেইড অ্যাডের মাধ্যমে। আপনি অ্যাড দেবার সময় লোকেশন গুলশান সিলেক্ট করবেন এবং লিঙ্গ পুরুষ সিলেক্ট করবেন। তাতেই হবে। 

 

তবে পেইড অ্যাড দিতে গেলে অবশ্যই আপনার একটি ফেসবুক পেজ থাকতে হবে। কেননা ফেজবুক প্রোফাইল দিয়ে অ্যাড রান করা যায়না। 

 

পেইড ফেসবুক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ফরম্যাটের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যায় এবং বাজেট অনুযায়ীও বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। অনেকে মনে করতে পারে ফেসবুকেরে পেইড অ্যাডে মনে হয় অনেক বেশি খরচ আসলে কিন্ত তা না। বরং টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, পত্রিকা বিজ্ঞাপনের চেয়েও এখানের খরচ অনেক কম হয়।

 

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ফরম্যট

ফেসবুক এখন শুধুমাত্র টপ লেভেলের সোস্যাল মিডিয়াই না এটি দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানিও বটে। পরবর্তীতে এটা বিজ্ঞাপনের জন্যও ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে। চলুন তাহলে ফেসবুক মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ফরম্যাট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক তাহলে ফেসবুক মার্কেটিং কি এ সম্পর্কে আরো ক্লিয়ার ধারণা হবে।

 

ভিডিও অ্যাড ফেসবুক মার্কেটিং

আমরা প্রত্যেকেই ফেসবুকে ভিডিও সম্পর্কে অবগত। আমরা দেখতে পাই যে খুবই স্বল্প সময়ের একটি ভিডিওতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে দুর্দান্তভাবে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। এমনকি পণ্য বা সার্ভিসেরও ডেমোও দেখানো যায়। 

 

ফেসবুক ক্লাইনদের লক্ষ পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বিজ্ঞাপন দিতে অনুমতি দেয়। ভিডিওগুলোর মধ্যে আছে শর্ট ভিডিও, GIFs যার মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষন করা যায়, ইন স্ট্রীম ভিডিও এবং দীর্ঘ ভিডিও।

 

ইমেজ ফেসবুক মার্কেটিং

 

ভিডিও তৈরির জন্য যথেষ্ট বাজেট আপনার কাছে না থাকলে আপনি ইমেজ এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন চালাতে পারেন। ভিডিও অ্যাডের পর এটি একটি ভালো অ্যাডের ধারণা। এই বিজ্ঞাপনটি আপনার ব্র্যান্ডের অ্যাওয়ারনেস বাড়াতে এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। 

 

ক্যারোসেল অ্যাড ফেসবুক মার্কেটিং

 

এই ধরনের অ্যাডে একটি বিজ্ঞাপনের মধ্যে আপনি সর্বোচ্চ ১০টি পর্যন্ত ইমেজ বা ভিডিও সংযুক্ত করতে পারবেন। প্রতিটিটি ইমেজে আলাদা আলাদা পণ্যের বিজ্ঞাপন সেই সাথে নির্দিষ্ট পণ্যের পেইজ লিঙ্কও দিতে পারবেন। 

 

কালেকশন অ্যাড ফেসবুক মার্কেটিং

এখানে ৫টি ভিডিও বা ইমেজ যুক্ত করে অ্যাড তৈরি করা হয় যা দেখতে অনেকটা ক্যাটালগের মত। এই অ্যাডের মাধ্যমে কাস্টামাররা অনেকটা সহজেই আপনার প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন। 

 

সাইডশো অ্যাড ফেসবুক মার্কেটিং

সাইডশো এর মাধ্যমে আপনি ইমেজ, টেক্সট এবং ভিডিও দিয়ে খুব সুন্দরভাবে একটি শর্ট ভিডিও বানাতে পারবেন।এর আরেকটি সুবিধা হলো ইন্টারনেট গতি কম থাকলেও এটি দেখা যায়।  চাইলে এখানে ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডও যুক্ত করা যেতে পারে।

 

লিড জেনারেশন অ্যাড ফেসবুক মার্কেটিং

এই ফরম্যাটটি লিড তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য। এবং এই অ্যাডটি শুধুমাত্র মোবাইল ফোনেই দেখা যায়। যখন একজন ব্যবহারকারী এই ধরনের বিজ্ঞাপনে টাচ করে তখন একটি সাবস্ক্রিপশন ফর্ম সরাসরি ওপেন হবে। এবং এর মাধ্যমে আপনি ইউজারদের কন্টাক্ট ইনফরমেশন পেতে পারেন।

 

কার্যকর ফেসবুক মার্কেটিং করার কৌশলসমূহ

বর্তমানে আমরা আমাদের নিউজ ফিডে ঢুকলেই বিভিন্ন রকম ফেসবুক অ্যাড দেখতে পারি। এদের মধ্যে কেউ সফল, কেউ আধা সফল আবার কেউ স্ট্রাগল করে যাচ্ছে। তাই ফেসবুক মার্কেটিংয়ে সফল হওয়ার জন্য বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। চলুন তাহলে ফেসবুক মার্কেটিং কি এর এই পর্যায়ে আমরা কিছু ফেসবুক মার্কেটিং কৌশল সম্পর্কে জেনে আসি।

 

আপনার লক্ষ নির্ধারণ করুন

যে কোনো কাজের জন্যই আগে দরকার লক্ষ নির্ধারণ করা। ফেসবুকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। আপনার কি ধরনের ব্যবসা এজন্য কিভাবে কি করবেন এজন্য শুরু থেকেই একটা লক্ষ নির্ধারণ করে ফেলা উচিত। 

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতেও লক্ষ নির্ধারণ করতে পারবেন। 

 

  1. লিড জেনারেট করতে পারবেন।

  2. ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বাড়াতে পারবেন

  3. আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য সেলস বাড়াতে পারবেন।

  4. কনভারশন রেট এবং সেলস বাড়াতে পারবেন

  5. কাস্টমার সাপোর্ট বাড়াতে পারবেন

  6. আপনার ব্র্যান্ডের অ্যাওয়ারনেস বাড়াতে পারবেন

  7. কাস্টমারের এনগেজমেন্ট বাড়াতে পারবেন

 

আপনার অডিয়েন্স নির্দিষ্ট করুন

ফেসবুক বিজ্ঞাপনে মানষ যে ভুলটা করে থাকে সেটি হলো কোনো একটি বিজ্ঞাপন ফেসবুকের সবার কাছে প্রচার করে থাকে। এতে করে আমরা অনেক টাকা খরচ করেও কাঙ্খিত ফলাফল পাইনা। তাই বিজ্ঞাপন প্রচার তাদের কাছেই করা উচিত যারা আমার পরবর্তীতে কাস্টমার হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। এজন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় কিছু বিষয় লক্ষ রাখা উচিত। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো:

 

  1. আপনার প্রোডাক্ট পুরুষ মহিলা নাকি উভয়ের জন্য?

  2. কত বছর বয়সী মানুষ আপনার কাস্টমার?

  3. তাদের কমন পেশা বা কাজ কি?

  4. কোন সমস্যাগুলি তাদের মধ্যে মিল আছে?

  5. তারা কেন আপনার প্রোডাক্ট ক্রয় করবে?

  6. তারা এটা ব্যবহার করে কি ফল পেতে পারে?

 

আপনি আপনার অডিয়েন্স এর ব্যাপারে যতটুকু সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করুন। বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় তাদের লোকেশন, ইনকাম, বয়স, জব পজিশন এবং আয়ের লেভেল অনুযায়ী দেওয়া উচিত। 

 

বিজ্ঞাপন ফরম্যাট এবং সিডিয়ল পোস্ট

আপনি যেহেতু এতক্ষণে বুঝতে পারছেন যে আপনার অডিয়েন্স করা এবং তাদের প্রোফাইলও মোটামুটি আপনি ধরে নিতে পারছেন। এখন আপনার কাজ হবে এই সকল বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাদের জন্য একটি পারফেক্ট বিজ্ঞাপন রেডি করা। 

 

মনে রাখবেন আপনি যত ভালো মানের একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে আপনার অডিয়েন্স কে প্রোডাক্টের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝাতে পারবেন তত আপনার অডিয়েন্স কাস্টমারে পরিণত হবে। চেষ্টা করুন বিজ্ঞাপনগুলো যেন শিক্ষামূলক, তথ্যমূলক, বিনোদনমূলক এবং প্রোমোশনালমূলকের মিশ্রণ হয়।  

 

আপনার হয়তো খুব ভালো মানের কনটেন্ট বা এনগেজিং কনটেন্ট এর জন্য একজন কনটেন্ট রাইটারের প্রয়োজন হবে। যে আপনার জন্য নতুন নতুন ক্রিয়েটিভ বিজ্ঞাপন রেডি করে দিবে। যে জানবে আপনার প্রোডাক্টের জন্য কোন ফরম্যাটের কোন বিজ্ঞাপন কৌশল আপনার জন্য সেরা পছন্দ হবে। 

 

আপনার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার পেজে নিয়মিত পোস্ট পাবলিশ করা। আমরা আপনাকে সুপারিশ করবো সপ্তাহে অন্তত ৫টি পোস্ট করার। আপনি এই কাজের জন্য কনটেন্ট ক্যালেন্ডারও প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন।

 

আপনার ফেসবুক বিজ্ঞাপন পোস্ট বুস্ট করুন

বর্তমানে ফেসবুক হলো চমৎমকার একটি বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম। এটি যেকোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে কম খরচে টার্গেটিং অডিয়েন্সের কাছে পৌছে দেয়। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিস্টেমটা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ তাই এটি করতে আপনাকে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হবেনা।

 

আপনার ফেসবুকের টুলসগুলি ব্যবহার করুন

আসলে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আমরা যা প্রত্যাশা করি ফেসবুক আমাদের মাঝে মধ্যে তার পেয়ে বেশি কিছু উপহার দেয়। আপনার বিজ্ঞাপন আরো কার্যকর এবং লাভজনক হবে এমন অনেক দরকারি টুলস রয়েছে ফেসবুকে। নিচে এমন কিছু টুলস এর নাম এবং কাজ উল্লেক করা হলো। চলুন তাহলে ফেসবুক মার্কেটিং কি এর এই পর্যায়ে আমরা ফেসবুকের কিছু টুলস সম্পর্কে জেনে আসি।

 

ফেসবুক মেসেন্জার

বর্তমান প্রজন্মের কাছে অন্তত ফেসবুক মেসেন্জার এর পরিচয় দেওয়া লাগবেনা আশা করি। কেননা বর্তমানে এটি ফেসবুকের খুব জনপ্রিয় একটি টুলস। এর মাধ্যমে আমরা টেক্সট, অডিও, ইমেজ এবং ভিডিও পাঠাতে পারি। এই টুলস এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন সাপোর্ট দিয়ে কাস্টমার বা অডিয়েন্স কে এনগেজ করে রাখতে পারেন।

 

SendPulse চ্যাটবটের মাধ্যমে আপনি একটি চ্যাটবট তৈরি করতে পারবেন। এতে করে আপনি আপনার কাস্টমারকে ২৪ঘন্টা সাপোর্ট দিতে পারবেন। আপনি না থাকলেও আপনার তৈরি করা সিস্টেম অটোমেটিকভাবে কাজ করবে বা অডিয়েন্সের মেসেজের রিপ্লে করবে। 

 

সাধারণত যে প্রশ্নগুলি আপনার অডিয়েন্স বেশি করে সে রকম প্রশ্নগুলি সিলেক্ট করে তার উত্তর আগে থেকেই রেডি করে রাখতে পারেন। এতে করে অডিয়েন্স যখন উক্ত প্রশ্নে টাচ করবে তখন সয়ংক্রিয়ভাবে তার কাছে উত্তর চলে যাবে।

 

ক্লিক-টু-মেসেন্জার অ্যাড

এই ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধুমাত্র CTR এবং কনভার্সন ই বাড়ানো যায়না বরং আপনার ব্র্যান্ডের সাথে কাস্টমারদের সম্পৃক্ততাও বাড়ানো যায়। ক্লিক-টু-মেসেন্জার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অডিয়েন্সদের ল্যান্ডিং পেজের পরিবর্তে মেসেন্জারে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি একটি দূর্দান্ত টুলস যা সহজেই ব্যবহারকারী থেকে লিডে পরিণত করা যায়। 

 

নিয়মিত মনিটরিং

আপনি বিজ্ঞাপনের জন্য যেমনই কৌশল সাজান না কেন, এটি কখনো একা একা কাজ করবেনা। এর কাযৃকারিতা মূলত নির্ভর করে অডিয়েন্সরা আপনার ব্র্যান্ডের সাথে কেমন ইন্টার‌্যাক্ট করছে তার উপর। তাই আপনার উচিত হবে বিজ্ঞাপনগুলি নিয়মিত মনিটরিং করা, কোন বিজ্ঞাপন কেমন কাজ করছে সেটা দেখা। পারফরম্যান্স খারাপ হলে বিজ্ঞাপনের ইমেজ, টেক্সট বা ভিডিও পরিবর্তন ও করা প্রয়োজন। 

 

আপনি ফেসবুকের Insights টুলের মাধ্যমে আপনার অ্যাডের ইফেক্টটিভনেস গুলি মনিটরিং করতে পারবেন। এখান থেকে আপনি এটাও জানতে পারবেন যে আপনার জন্য কোন ফরম্যাটটি ভালো কাজ করছে। এটির মাধ্যমে আপনি পেজ ভিউ, পোস্ট এনগেজমেন্ট, স্টোরি রিচ, অ্যাকশন পেজ, পেইজ ফলোয়ারদের অ্যানালাইজ এছাড়া অনেক মূল্যবান ডাটা দেখতে পারেন।

 

পরিশেষে

আশা এই আর্টিকেল থেকে ফেসবুক মার্কেটিং কি, ফেসবুক মার্কেটিং কেন জনপ্রিয়, ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার, ফ্রি এবং পেইড মার্কেটিং এছাড়াও ফেসবুক মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ফরম্যাট সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন। 


ধন্যবাদ আমার সকল পাঠককে এত সময় নিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। আপনার যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো আপনাকে সহোযোগিতা করার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *