কম্পিউটার এক্সেসরিজ

স্টোরেজ ডিভাইস কি? কত প্রকার

আমরা প্রতিনিয়ত কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে কাজ করার সময় কিছু ডাটা রেখে দেয় ভবিষৎতে ব্যবহারের জন্য। পরবর্তীতে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডাটাগুলি পুনরায় ব্যবহার করি। আর এই ডাটা রাখার কাজগুলিই আমরা করতে পারি স্টোরেজ ডিভাইসের মাধ্যমে। এই আর্টিকেলে আমরা স্টোরেজ ডিভাইস কি এই সম্পর্কে জানার চেষ্টা  করবো।

 

স্টোরেজ ডিভাইস কি

স্টোরেজ ডিভাইস হলো কম্পিউটারের এমন একটি প্রযুক্তি পণ্য যেখানে কম্পিউটারের সমস্ত ডাটা ও ইনফরমেশনগুলি স্বল্প সময় এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। ডিভাইসটিতে সমস্ত ইনফরমেশনগুলি ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকে। এক কথায় বলা যায় কম্পিউটারের সকল ডাটা এবং ইনফরমেশন সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ডিভাইসকেই স্টোরেজ ডিভাইস বলে। 

 

কম্পিউটারের জন্য স্টোরেজ ডিভাইস একটি গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার। এটি বিভিন্ন কম্পিউটারের জন্য বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তথ্যগুলি ‍স্বল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে প্রাইমারি স্টোরেজ ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তথ্য সংরক্ষণ করতে সেকেন্ডারি স্টোরেজ ব্যবহৃত হয়।

 

স্টোরেজ ডিভাইস কত প্রকার

স্টোরেজ ডিভাইস প্রধানত দুই প্রকার এবং সর্বমোট চার প্রকারের হয়ে থাকে। নিচে স্টোরেজ ডিভাইস কি এর প্রকারভেদ দেওয়া হলো:

 

  • প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস

  • সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস

  • টারশিয়ারি স্টোরেজ ডিভাইস

  • অফ-লাইন স্টোরেজ ডিভাইস

 

প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস কি

প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসকে প্রধান স্টোরেজ ডিভাইসও বলা হয়। সাধারণত আকারে ছোট, এটি অস্থায়ীভাবে ডাটা ধরে রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে এবং এটি কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ। এটি ডাটা অ্যাক্সেসের গতিকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। 

 

আপনার কম্পিউটারটি যতক্ষণ অন থাকবে ততক্ষণ প্রাইমারি স্টোরেজ তথ্যগুলি ধরে রাখবে। কম্পিউটার বন্ধ করলে আপনার ডাটাও মুছে যাবে।  প্রাইমারি স্টোরেজের দাম সেকেন্ডারি স্টোরেজের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল।

 

প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের বৈশিষ্ট

প্রাইমারি স্টোরেজের কিছু বৈশিষ্ট নিচে দেওয়া হলো:

 

  • অনেক দ্রুত অ্যাক্সেস করা যায়

  • ডাটা স্থানান্তরের গতি বেশি থাকে

  • বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ডাটাও মুছে যায়

  • এটি সাধারণত সিপিইউ এর সাথে সরাসরি সংযোগ থাকে

  • স্টোরেজের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে

 

প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস উদাহরণ

চলুন আমরা প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস এর কিছু উদাহরণ দেখে নেই।

স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে র‌্যাম

র‌্যামে থাকা যেকোনো ডাটা অন্য যেকোনো ডাটার মতই দ্রুত অ্যাক্সেস করা যায়, তাই একে র‌্যানডম অ্যাক্সেস মেমরি বলা হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ র‌্যাম ডাইনামিক র‌্যাম নাকে পরিচিত। বর্তমানে কম্পিউটারের ক্ষেত্রে DDR SDRAM বেশি ব্যবহৃত হয়। ‍SRAM গুলিও বর্তমানে কম্পিউটারে ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে রম

একটি কম্পিউটার অন হতে যেসব প্রোগামিং প্রয়োজন হয় তার সবগুলিই এই রমে সংরক্ষণ করা হয়। এই মেমরিকে ফার্মওয়্যার হিসেবেও উল্লেখ করা যায়। রম এর পূর্ণরুপ হলো রিড অনলি মেমরি যা সহজে বা দ্রুত ওভাররাইট বা পরিবর্তন করা যায়।

 

স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে ক্যাশ

ক্যাশ মেমরি হলো একটি ছোট আকারের পিসি মেমরি যা কম্পিউটারের গতি এবং পারফরমেন্স বৃদ্ধি করে। ক্যাশ মেমরি প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি মেমরি থেকে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। ক্যাশ মেমরি কম্পিউটার বা মোবাইলে খুব স্বল্প পরিমাণে থাকে যেখানে হার্ডড্রাইভ বা এসএসডি কয়েকশ জিবি পর্যন্ত হতে পারে সেখানে ক্যাশ কয়েক এমবি পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

 

ক্যাশ মেমরি হলো একটি কম্পিউটারের সবচেয়ে দ্রুততম মেমরি। এটি সাধারণত মাদারবোর্ডে সংযুক্ত করা থাকে এবং প্রসেসর বা র‌্যামে ইনস্টল করা থাকে।

 

সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস কি

সেকেন্ডারি স্টোরেজ হলো এমন এক ধরণের স্টোরেজ যার মধ্যে আপনি সব ধরণের তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন। কম্পিউটার যদি অফ ও করা হয় তবুও আপনার ডাটা ঠিক থাকবে। এই ডিভাইসের কাজ হলো মূলত বেশি পরিমাণ ডাটা সংরক্ষণ করে রাখা। চলুন সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইসের কিছু বৈশিষ্ট দেখে নেওয়া যাক তাহলে স্টোরেজ ডিভাইস কি এ সম্পর্কে আরো পরিষ্কার ধারণা হবে।

 

সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস এর বৈশিষ্ট

সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস এর বৈশিষ্ট নিচে উল্লেখ করা হলো: 

 

  • এই স্টোরেজের ধারণক্ষমতা অনেক বেশি থাকে।

  • দাম তুলনামূলকভাবে কম।

  • এটি সিপিইউ এর সাথে সরাসরি বিল্ড করা থাকেনা।

  • এই স্টোরেজ প্রাইমারি স্টোরেজের চেয়ে ধীরগতি সম্পন্ন।

  • বিদ্যুৎ চলে গেলেও এই স্টোরেজে তথ্যের কোনো সমস্যা হয়না।

 

সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস এর উদাহরণ

সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইসের কমন একটি উদাহরণ হলো হার্ডডিস্ক। আপনাদের যাদের কম্পিউটার সম্পর্কে ব্যাসিক জ্ঞান আছে তারা নিশ্চয় হার্ডডিস্ক সম্পর্কে জেনে থাকবেন। এটা বিভিন্ন পরিমাণের হয়ে থাকে, ৫০০জিবি, ১টেরাবাইট বা ২টেরাবাইটের হার্ডডিস্কও অনেকে ব্যবহার করে থাকেন। 

 

একটি একটি নন-ভোলাটাইল স্থায়ী মেমরি। নন-ভোলাটাইল মানে হলো পিসি বন্ধ থাকলেও তথ্য ঠিক থাকবে। 

 

আপনারা অনেকে SSD সম্পর্কেও জেনে থাকবেন। এটির কাজ HDD এর মতই, কিন্তু HDD এর তুলনায় SSD অনেক দ্রুত কাজ করতে পারে। বর্তমানে আধুনিক কম্পিউটারগুলি প্রাথমিক স্টোরেজ হিসেবে SSD ব্যবহার করে থাকে। উইন্ডোজ এর মত সফটওয়্যার যখন আপনি SSD তে রান করবেন তখন আপনার সিস্টেম অনেক দ্রুত কাজ করবে। তবে দামের ক্ষেত্রে SSD তে একটু বেশি পড়ে যাবে। 

 

হার্ডডিস্ক এর আকার সাধারণত সময়ের উপর নির্ভর করে থাকে। যেমন আগে হার্ডডিস্ক ছিলো কয়েকশ এমবি থেকে কয়েক জিবি পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে কয়েকশ জিবি থেকে কয়েক টেরাবাইট পর্যন্ত ব্যবহার হয়ে থাকে। হার্ডডিস্ক এর অ্যাক্সেস এর সময় সাধারণত মিলিসেকেন্ডে পরিমাপ করা হয়। 

 

কম্পিউটারের স্টোরেজ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অনেকে এখন এক্সটার্নাল হার্ডডিস্কও ব্যবহার করে থাকে। তবে এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক ইন্টারনাল হার্ডডিস্ক এর চেয়ে ডাটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে গতি কম হয়ে থাকে।

 

টারশিয়ারি স্টোরেজ ডিভাইস

টারশিয়ারি স্টোরেজটি আপনার কাছে অপরিচিত মনে হতে পারে আসলে টারশিয়ারি মেমরি পারসোনাল কম্পিউটারে খুব কমই ব্যবহৃত হয়। এই কারণে টারশিয়ারি মেমরিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়না। 

 

টারশিয়ারি মেমরি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজে নিজেই কাজ করতে পারে। এটি রোবটিকস ফাংশনের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। যেমন ম্যাগনেটিক টেপ, অপটিক্যাল ডিস্ক।

 

অফ-লাইন স্টোরেজ ডিভাইস

অফ-লাইন স্টোরেজ ডিভাইস এমন এক ধরনের ডিভাইস যেটি আপনি চাইলে যেকোনো সময় কম্পিউটার থেকে আলাদা করতে পারেন। তাই একে Removable Storage ও বলা হয়ে থাকে। এই ডিভাইসটি প্রসেসিং ইউনিট এর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকেনা। 

 

যেকোনো ইউজারে তার প্রয়োজনমত এটি কানেক্ট করতে পারবে, আবার প্রয়োজন শেষ হলে ডিসকানেক্টও করতে পারবে। আমরা সবাই পেনড্রাইভ বা মেমরি কার্ড সম্পর্কে জানি। এটিই অফ-লাইন স্টোরেজ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

 

একটি কম্পিউটারের জন্য স্টোরেজ ডিভাইস কেন প্রয়োজন

একটি কম্পিউটার স্টোরিজ ডিভাইস ছাড়া এটি বোবা টার্মিনালে পরিণত হবে। কোন স্টোরেজ ডিভাইস না থাকলে এটি কোনো ধরনের তথ্য বা সেটিং সংরক্ষণ বা ধরে রাখতে পারবেনা। ইন্টারনেট ব্রাউজ করার মত কাজের জন্য বা এই ধরনের কাজের জন্য অবশ্যই স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন।

 

অনলাইন ক্লাউড স্টোরেজ

ক্লাউড কম্পিউটার সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যে হয়তো জেনে থাকবেন। ক্লাউড স্টোরেজে আমরা আমাদের ডাটাবেজ এবং ফাইলগুলি সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। পরবর্তীতে এই ডাটা আমরা যে কোনো জায়গা এবং যে কোনো সময় অ্যাক্সেস করতে পারি ইন্টারনেটের মাধ্যমে। 

 

বর্তমানে এটি ডাটা সংরক্ষণ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মোবাইলফোনে ওয়ান ড্রাইভ দেখে থাকবেন হয়তো এটিও ক্লাউড স্টোরেজ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। বড় বা ছোট যে কোনো ডাটার জন্যই আমরা ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারি। 

 

বর্তমানে কোন স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহৃত হয়

অনেক ধরনের স্টোরেজ ডিভাইস রয়েছে, কিন্তু সবগুলিই বর্তমানে ব্যবহার করা হয়না। সময়ের পরিবর্তনে, তথ্য প্রযুক্তির উন্নতিতে এবং মানুষের চাহিদার পরিপেক্ষিতে স্টোরেজ ডিভাইসও প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। বর্তমানে সময়ের কম্পিউটারগুলিতে ফ্ল্যাশ ড্রাইভ এবং ক্লাউড স্টোরেজসহ SSD ব্যবহার করা করা হয়ে থাকে। 

 

বেশিরভাগ ডেক্সটপ কম্পিউটারেই একটি ডিস্ক ড্রাইভ বা ডিভিডি রাইটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার  মাধ্যমে সিডি এবং ডিভিডি এর ডাটা আমরা রিড রাইট করতে পারি।

 

স্টোরেজ ডিভাইসের বৈশিষ্টসমূহ

এতক্ষনে নিশ্চয় স্টোরেজ ডিভাইস সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন যার ফলে স্টোরেজ ডিভাইস কি এ সম্পর্কেও ধারণা পেয়েছেন। চলুন আমরা এর কিছু বৈশিষ্ট দেখে আসি। 

 

  • অনেক ধরনের স্টোরেজ ডিভাইস আমরা সহজেই বহন করতে পারি যেমন পেনড্রাইভ। অর্থাৎ স্টোরেজ ডিভাইসের একটি বড় বৈশিষ্ট হলো এটি বহন করা সহজ। 

  •  স্টোরেজ ডিভাইসের ডাটা আমরা সহজেই আমাদের প্রয়োজনমত রিপ্লেস করতে পারি, ডিলিট করতে পারি।

  • স্টোরেজ ডিভাইসগুলি অ্যাক্সেস করা অনেক সহজ হয়ে থাকে। 

  • এসব ডিভাইসের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি আমাদের সিস্টেমের জন্য বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকে। 

  • এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা স্থানান্তর করার জন্য স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহার হয়ে থাকে।

পরিশেষে

আশা করি এই আর্টিকেল থেকে স্টোরেজ ডিভাইস কি এই সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেয়েছেন। কোনো কিছু জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো আপনাকে সহযোগিতা করার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *